গরু কাটতে গিয়ে হাত-পা কেটে হাসপাতালে ভিড়

একটার পর একটা রোগী আসছে- কারও হাতে কোপ লেগে রক্ত ঝরছে, কারও পা কেটে গেছে ছোরা ছিটকে পড়ে। কোরবানির ঈদের দিনে এ ধরনের রোগীদের সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক উরহালা মারমাকে।

লিটন হায়দারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 August 2020, 08:20 PM
Updated : 1 August 2020, 08:20 PM

শনিবার দুপুরে এই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে অনেক রোগী দেখা যায়, যাদের প্রায় সবাই কোরবানির মাংস কাটতে গিয়ে হাত-পা কেটেছেন।

জরুরি বিভাগের সব কয়টি বিছানাই পূর্ণ হওয়ায় অনেককে দাঁড়িয়ে থাকতে বা আরেকজনের বিছানার একপাশে বসে থাকতে দেখা যায়। তাদের সবার শরীর থেকেই রক্ত ঝরছিল।

একের পর এক রোগী একাই সামাল দিতে হওয়ায় প্রচণ্ড ব্যস্ততার মধ্যে থাকা চিকিৎসক উরহালা মারমার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়নি। নিজের নামটা শুধু এক টুকরো কাগজে লিখে দিয়ে বলেন, “বুঝতেই পারছেন।”

এই হাসপাতালের চিকিৎসা নিতে আসা মিরপুর-১১ নম্বরের মোস্তফা কোরবানির মাংস কাটতে গিয়ে বাঁ পায়ের নিচের অংশে জখম হয়েছেন। সেখান থেকে রক্ত ঝরার দৃশ্য দেখে চিকিৎসক মারমা ছুটে এসে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে দিতে শ্যমলী থেকে আসা এক তরুণেরও একই অবস্থা দেখে তাকে রক্ত বন্ধের জন্য নিজেকে ক্ষতস্থান চেপে ধরে রাখতে বলেন। এরপর ছুটে যান তার চেয়ে গুরুতর রোগীর দিকে।

হাসপাতালের এক কর্মচারী জানান, সকাল ১০টার পর থেকে কোরবানির মাংস কাটতে গিয়ে আহত হয়ে অর্ধ শতাধিক রোগী এখানে এসেছেন।

কোরবানির ঈদের দিনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিত্রও প্রায় একই রকম ছিল বলে জানিয়েছেন সেখানকার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এএসআই আব্দুল খান।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শুধু একের পর এক হাত-পা কাটা রোগী এসেছে এই হাসপাতালে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৮০ জন এ ধরনের রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের সবাই কোরবানির মাংস কাটতে গিয়ে আহত হয়েছেন।”

পঙ্গু ও ঢাকা মেডিকেলের মতো দৃশ্য সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে দেখা না গেলেও আধা ঘণ্টা অবস্থানকালে সেখানেও প্রায় একই ধরনের সাত-আটজন রোগী আসতে দেখা গেছে। এরা সবাইও কোরবানির মাংস কাটতে গিয়ে আহত হয়েছেন।

কোরবানির ঈদের কারণে এই ধরনের রোগী বেশি আসছে বলে জানান জরুরি বিভাগের চিকিৎসক প্রবাহ বিশ্বাস।

এই চিকিৎসক শুক্রবার রাত ৮টায় দায়িত্ব পালন শুরু করে শনিবার সারা দিন সামলেছেন। টানা রোববার সকাল পর্যন্ত চলবে তাকে দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে বলে জানান তিনি।

কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতাল হওয়ায় চিকিৎসকদের দায়িত্ব পালনের ‘রোস্টারে’ এই পরিবর্তন জানিয়ে প্রবাহ বিশ্বাস বলেন, “করোনাভাইরাস রোগীদের চিকিৎসা সেবায় থাকার পর একটি নির্দিষ্ট সময় চিকিৎসকদের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হচ্ছে। তাই চিকিৎসকের কিছুটা সংকট থাকছে। অনেককে বাড়তি সময় দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।”

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঈদের দিন মাংস কাটতে গিয়ে আহত হওয়া রোগীই শনিবার বেশি পাচ্ছেন। সড়ক দুর্ঘটনায় আহতরাও আসছেন।

মোবাইল ব্যবসয়ী সাইফুল ইসলাম অভি রাজধানীর বিজয় সরণি মোড়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন।

ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি মোটরসাইকেলে ছিলাম, কোত্থেকে একটি মাইক্রোবাস এসে ধাক্কা দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।”

এই হাসপাতালে ঈদের দিন সকাল থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ৯৩ জন রোগী এসেছেন। তাদের মধ্যে ৩১ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। হাত-পা কাটাছেঁড়া ছাড়াও পেট ব্যথার রোগী রয়েছে বলে জানান জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত কর্মচারী উজ্জল দেব।

কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হলেও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে শুক্রবার নমুনা নেওয়া হয় না জানিয়ে উজ্জল বলেন, ঈদের দিনও তারা কোভিড-১৯ নমুনা সংগ্রহ বন্ধ রেখেছেন। তবে বেলা ৩টা পর্যন্ত করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে আসা দুইজনকে ভর্তি করা হয়েছে।

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার সময় গেটে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের একটি অ্যাম্বুলেন্স দেখা যায়। ভেতরে এক রোগী দেখে কী হয়েছে জানতে চাইলে চালক বলেন, মাংস কাটতে গিয়ে তাদের এক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

তবে হাসপাতাল এলাকা হিসেবে পরিচিত শেরেবাংলা নগরের শিশু হাসপাতালে কিছুটা ভিন্ন চিত্র দেখা যায় এদিন।

রোগীর চাপ তেমন ছিল না। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক পার্থ কুমার পাল সকালে দায়িত্ব নিয়েছেন। ২৪ ঘণ্টার ডিউটি শেষ হবে রোববার সকালে।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই হাসপাতালে ঈদের কোনো প্রভাব নেই। অভিভাবকরা যে সব রোগী নিয়ে আসছেন তার অধিকাংশই দুই-তিন দিন বয়সের।”

সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া এসব শিশুদের নিয়ে আসা হচ্ছে নানা সমস্যার কারণে। ঈদের দিন হওয়ায় রোগীর চাপও তুলনামূলক কম।

দুপুরের পর পর্যন্ত ২৫টির রোগী এসেছে এই হাসপাতালে। তাদের মধ্যে ১০ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। নতুন রোগীর এই সংখ্যা অন্য দিনের তুলনায় অর্ধেকের মতো বলে জানান চিকিৎসক পার্থ কুমার পাল।