নদী ভাঙনের বিরূপ অভিজ্ঞতা নিয়ে বেড়ে ওঠা পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেছেন, দেশের ২২টি জেলায় ভাঙনের ঝুঁকিপূর্ণ ৫৪টি এলাকা চিহ্নিত করে কাজ শুরু করেছেন তিনি, যার সুফল কয়েক বছরের মধ্যে মিলবে।
Published : 31 Jul 2020, 04:42 PM
দেশে এক মাসের বেশি সময় ধরে চলছে বন্যা, তার সঙ্গে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। পানি নেমে গেলে ভাঙন আরও তীব্র হওয়ার আভাস রয়েছে, যা করোনাভাইরাস মহামারীকালে লাখ লাখ মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়ি তোলার আশঙ্কা তৈরি করেছে।
আশঙ্কার এই পরিস্থিতিতে মূল দায়িত্ব পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের, যার দায়িত্বে রয়েছেন পদ্মা পাড়ের শামীম। জাকসুর ভিপি থেকে ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালনের পর এবারই প্রথম মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন তিনি।
নদী ভাঙনে বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি-ঘর-স্কুল-বাজার বিলীন হয়ে যাওয়ার মধ্যে বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভাঙন রোধে সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরেন শামীম।
শরীয়তপুরের সংসদ সদস্য শামীম শুরুতেই বলেন নদীর ভাঙন তার পৈত্রিক ঠিকানা বদলে যাওয়ার কথা।
ভাঙনকবলিত জেলাগুলোর নাম বলতে বলতে তিনি বলে ওঠেন, “আমি নিজেও নদী ভাঙা জেলার মানুষ, শরীয়তপুরে আমার বাড়ি, নদী ভাঙার কারণে আমার ঠিকানাই পরিবর্তন হয়ে যায়। নড়িয়া উপজেলায় আমার জন্ম, নদী ভাঙার কারণে বাবা বাড়ি করে অন্যখানে।”
তবে কোভিড-১৯ মহামারীকালে এবার বন্যার দুর্ভোগ যে বেশি, তা স্বীকার করে নিয়ে উপমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে তীব্র নদী ভাঙন কবলিত ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে স্থায়ী সমাধানের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেই নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের ২২টি জেলায় ৫৪টি ভাঙন প্রবণ এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে জানিয়ে শামীম বলেন, “এসব এলাকায় যেহেতু স্থায়ী প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের মানুষ অনেকাংশে জলাবদ্ধতার হাত থেকে, নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে।”
তিনি জানান, ইতোমধ্যে ২২ জেলার ৫৪টি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করেছেন তিনি, এর মধ্যে টাঙ্গাইলে গিয়েছিন তিনবার।
নদী ভাঙন ঠেকাতে বাঁধ নির্মাণ হলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রতিবছরই বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায় অনেক এলাকা। বাঁধে মেরামতে দুর্নীতির খবরও আছে।
শামীম বলেন, “রক্ষণাবেক্ষণ সত্যি কথা যেভাবে হওয়া দরকার সেভাবে হয়নি।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুর্নীতি যাতে না হয় এবং কাজের ক্ষেত্রে যাতে গুণগত মান বজায় থাকে, সেজন্য শক্তিশালী টাস্কফোর্স রয়েছে।
“এই বাঁধগুলো ৩০ থেকে ৪০ বছর আগে তৈরি করা, প্রশস্তের দিক থেকেও কম, উচ্চতাও কম। অনেকগুলো জরুরি সংস্কার করাও প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।”
তিনি বলেন, ১৩৯টি ফোল্ডারে বিশেষ করে উপকূল অঞ্চলে প্রতিটি বাঁধ প্রশস্ত ও উঁচু করা হচ্ছে এবং যেসব স্থায়ী প্রকল্প নিচ্ছেন, তাতে নদী খনন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জনবলও বাড়ানো হয়েছে।
স্থায়ী প্রকল্পগুলোর সুফল তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, নড়িয়ায় ২০১৮ সালে সাড়ে ৫ হাজার বাড়ি ভেঙেছিল, প্রধানমন্ত্রী সেখানে একটি স্থায়ী প্রকল্প করে দেন। একারণে গতবছর মাত্র আট থেকে ১০টি বাড়ি ভেঙেছে। এবছর মূল ভূখণ্ড এখনও অক্ষত আছে।
তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে এভাবে পর্যায়ক্রমে স্থায়ী প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এর ফলে ঝুঁকি কম থাকবে এবং ভাঙন-জলাবদ্ধতার স্থায়ী একটি সমাধান হবে।
মন্ত্রণালয়ের কাজে সক্ষমতা বাড়ার কারণে গত বছর সাত হাজার কোটি টাকা বাজেট থেকে এবার বাজেট ১ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে বলে দাবি করেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী।
এবারের বন্যা আরও স্থায়ী হলে পরিকল্পনা কী- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা মানুষের পাশে আছি, কোভিড-১৯ এর মধ্যে সকল ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় এপ্রিল মাসে ১৯ তারিখ থেকে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় কাজ করছে এবং সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।”
বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র এখনও পাননি জানিয়ে উপমন্ত্রী বলেন, “জেলাভিত্তিক তথ্য আসছে এবং আমরা কাজ করছি। রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। যত মজবুত রাস্তাই হোক না কেন, এক মাস যদি পানির নিচে থাকে, তাহলে একটু দুর্বল তো হবেই।”
ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ১৪টি পয়েন্টে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানে সেনাবাহিনী কাজ করছে।
উপমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে মন্ত্রণালয়ের কাজে গতিশীলতা আনতে নিজের চেষ্টার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যেত, দুই থেকে তিন বছর সময় লেগে যেত। কিন্তু এখন এক বছরের মধ্যে প্রকল্প প্রণয়ন করে আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে হয়ে একনেকে পাস পাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয় এবং কাজ শুরু করে দেওয়া হয়।”
“আশা করি, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যেহেতু স্থায়ী প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের মানুষ অনেকাংশে পানিবন্দিত্বের হাত থেকে, নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে,” বলেন শামীম।
আরও পড়ুন