ঈদে করোনাভাইরাসকে গুরুত্ব দিয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতি

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এবারের কোরবানির ঈদে পশু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি নগরবাসীর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপরও গুরুত্ব দিচ্ছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 July 2020, 04:05 AM
Updated : 31 July 2020, 07:30 AM

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) জানিয়েছে, আগামী শনিবার ঈদের দিন কোরবানির বর্জ্য অপসারণে তাদের ১৮ হাজার কর্মী মাঠে থাকবেন।

সাতশর বেশি যানবাহন ব্যবহার করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বর্জ্য সরিয়ে ঢাকাকে সাফ করার পরিকল্পনা নিয়েছে নগর কর্তৃপক্ষ।

এবার বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ‘সর্বোচ্চ গুরুত্ব’ দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,  “কোভিড-১৯ মহামারীর সময় কোরবানি হচ্ছে; এ কারণে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কিছুটা চ্যালেঞ্জিং। 

“আমরা সতর্ক, নিবেদিত। কিন্তু পাশাপাশি আমাদের অনুরোধ নাগরিকরাও যেন সচেতন হন। বর্জ্যটা যেন সঠিক জায়গায়, সঠিকভাবে ফেলেন।”

হালাল উপায়ে পশু কোরবানির জন্য ২৫০ জন ইমাম ও ২৫০ জন মাংস প্রস্তুতকারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথাও জানিয়েছে ডিএনসিসি। এ সিটিতে কোরবানির ঈদের দিন প্রায় ১০ হাজার টন বর্জ্য তৈরি হতে পারে বলে কর্মকর্তাদের ধারণা।  

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে উত্তরে ১১ হাজার ৫০৮ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী ছাড়াও করপোরেশনের কর্মকর্তারা মাঠে থাকবেন। ২৪ ঘণ্টায় কোরবানির পশুর বর্জ্য সংগ্রহের জন্য প্রায় ৬ লাখ বিশেষ ধরনের ব্যাগ বিতরণ করা হবে।

বর্জ্য অপসারণে ভারী ও হালকা মিলিয়ে ৪৩০টি যানবাহন প্রস্তুত রেখেছে উত্তর সিটি কর্তৃপক্ষ। ১১টি পানির গাড়ির মাধ্যমে স্যাভলন ও ব্লিচিং মিশ্রিত পানি ছিটিয়ে কোরবানির স্থান দূষণমুক্ত করা হবে।

ইতোমধ্যে ৫১ টন ব্লিচিং পাউডার ও ৫ লিটার ধারণক্ষমতার ৯৬০ ক্যান তরল জীবাণুনাশক ছিটানোর ব্যবস্থা করা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিএনসিসি।

ঈদের দিন দুপুর থেকে শুরু করে ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা দক্ষিণের সব বর্জ্য অপসারণ শেষ করার লক্ষ্যের কথা জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. বদরুল আমিন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমরা সকাল থেকেই কাজ শুরু করব। প্রতিদিনের বর্জ্য প্রতিদিনই সরিয়ে নেওয়ার লক্ষ্য নিয়েছি। এজন্য আমরা যন্ত্রপাতি ও কর্মীদের প্রস্তুত রেখেছি।”

কোরবানির সময় কোভিড-১৯ বিস্তার মোকাবিলায় সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলেও জানান ডিএসসিসির এই কর্মকর্তা। 

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫ হাজার নিয়মিত কর্মীর সঙ্গে আরও দেড় হাজার পরিচ্ছন্নকর্মী যোগ দেবেন কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে । তিনশ ভারী ট্রাক ও যন্ত্রপাতি, ১ লাখ ব্যাগ, এক লাখ প্রচারপত্র বিলি করা হবে।

বদরুল আমিন বলেন,  “কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য আমরা কিছু ব্যবস্থা নিয়েছি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মীদের আমরা বুট, গ্লাভস, মাস্ক, রেইনকোট সরবরাহ করেছি। স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করে কাজ করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা যাবে।”

কোরবানির পশু থেকে বর্জ্য থেকে কোভিড-১৯ ছড়ানোর ‘সম্ভাবনা নেই’ বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. বে-নজীর আহমেদ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন,  “এবার কোরবানির সংখ্যা কিছুটা কম বলে মনে হচ্ছে। এ কারণে বর্জ্য কোনো সমস্যা হবে বলে মনে হয় না। আর এই বর্জ্যের সঙ্গে করোনাভাইরাস ছড়ানোর কোনো সম্পর্ক নেই। “

তবে কোরবানির পশুর জবাই ও মাংস কাটার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর জোর দিচ্ছেন এই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।

তিনি বলেন, “করোনাভাইরাস থাকে মানুষের শ্বাসনালীতে। মাংস কাটাকুটি করতে সে যদি আক্রান্ত হয়, আর সে যদি হাঁচি-কাশি দেয় তাহলে ওই মাংসে কিছুটা লাগতে পারে। কিন্তু আমরা তো মাংস সিদ্ধ করে খাই।”