ঢাকা দক্ষিণ সিটির বাজেট ৬১১৯ কোটি টাকার

উন্নয়নের ‘মহা পরিকল্পনা’ ঘোষণা করে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৬ হাজার ১১৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকার বাজেট দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 July 2020, 11:57 AM
Updated : 30 July 2020, 11:57 AM

সরকারি ও বৈদেশিক সহায়তামূলক প্রকল্পনির্ভর এই বাজেটের অংক গত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১৩৬ শতাংশ বেশি।

গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে দক্ষিণ সিটির জন্য ৩ হাজার ৬৩১ কোটি ৪০ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা হলেও সংশোধনে তা ২ হাজার ৫৮৫ কোটি ৩১ লাখ টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

রোববার নগর ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন অর্থবছরের এই বাজেট ঘোষণা করেন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

বাজেটের এই ৬ হাজার ৬১৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকার মধ্যে ডিএসসিসির নিজস্ব উৎস থেকে যোগান দেওয়া হবে ৭৩৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা। আর সরকারি ও বৈদেশিক সহায়তামূলক প্রকল্প থেকে ৪ হাজার ৭৬৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা আসবে বলে ধরা হয়েছে। বাজেটে সমাপনী স্থিতি ধরা হয়েছে ১৫৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে মশক নিধনে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হলেও মশক নিধন, ওষুধ ও যন্ত্রপাতি কেনার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৫ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় অকে কম।

গত অর্থবছরের বাজেটে মশক নিধন খাতে বরাদ্দ ছিল ৪৩ কোটি টাকা। অবশ্য ‘সমন্বিত মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে’ ৩০০ কোটি ব্যয় করা হবে বলে এবারের বাজেটে বলা হয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির বাজেটে এবার নতুন ১৯টি খাত যুক্ত হয়েছে। জলাবদ্ধতা দূরীকরণ এবং শিশু পার্ক রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন নামে গত বছরের বাজেটে আলাদা কোনো খাত ছিল না। এবার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ৩০০ কোটি টাকা এবং শিশু পার্ক রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

নতুন ১৮টি ওয়ার্ড ডিএসসিসির সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে এবার। নাগরিকদের জন্য বিনোদনমূলক সুবিধা উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দ গত অর্থবছরের ২৭০ কোটি ৩০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৪৭ কোটি টাকা করা হয়েছে।

সড়ক ও ট্রাফিক অবকাঠামো উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে গত বছর বরাদ্দ ছিল ৮৯৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এবারের বাজেটে তা বাড়িয়ে ১ হাজার ৭৪১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা করা হয়েছে।

বাজেট বক্তৃতায় মেয়র জানান, এবারের বাজেটে ডিএসসিসির ৭৫টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের উন্নয়ন ব্যয় ১ কোটি টাকা করা হয়েছে। ডিএসসিসির অধিভুক্ত এলাকায় আটটি সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্যদের জন্য উন্নয়ন ব্যয় ২ কোটি টাকা করা হয়েছে।

২০২০-২১ অর্থবছরে নিজস্ব উৎস থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০৯ কোটি ২ লাখ টাকা। এর মধ্যে হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ ৩৫০ কোটি টাকা, বাজার সালামী বাবদ ১৬৫ কোটি টাকা, বাজার ভাড়া বাবদ ৫০ কোটি টাকা, ট্রেড লাইসেন্স ফি বাবদ ১০০ কোটি টাকা, বিজ্ঞাপন কর বাবদ ৫০ কোটি টাকা, বাস-ট্রাক টার্মিনাল থেকে ১০ কোটি টাকা, অস্থায়ী পশুর হাট ইজারা বাবদ ১২ কোটি টাকা, ইজারা (টয়লেট, পার্কিং, কাঁচাবাজার ইত্যাদি) বাবদ ৪৫ কোটি টাকা, রাস্তা খনন ফি বাবদ ৪০ কোটি টাকা, রিকশার লাইসেন্স ফি বাবদ ২৪ কোটি টাকা, ইউটিলিটি সার্ভিসের জন্য রাস্তা ব্যবহারের ফি বাবদ ১২ কোটি টাকা, টোল জাতীয় কর বাবদ ১২ কোটি টাকা, যন্ত্রপাতি ভাড়া বাবদ ১০ কোটি টাকা, প্রাইভেট হাসপাতাল, প্যারামেডিক্যাল ইনস্টিটিটউট, ক্লিনিক, ডায়াগনোস্টিক সেন্টার ইত্যাদির নিবন্ধন ফি বাবদ ১০ কোটি টাকা, প্রাথমিক বর্জ্য সেবা সংগ্রহকারী নিবন্ধন ও বাৎসরিক ফি বাবদ ৯ কোটি টাকা আসবে বলে ধরা হয়েছে।

এছাড়া টিউটোরিয়াল স্কুল, কোচিং সেন্টার নিবন্ধন ফি বাবদ ৫ কোটি টাকা, কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া বাবদ ৩ কোটি টাকা, সম্পত্তি হস্তান্তর কর খাতে ৬০ কোটি টাকা, ক্ষতিপূরণ বাবদ ৬ কোটি টাকা, ইমারত নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণের জন্য আবেদনের ওপর কর বাবদ ৫ কোটি টাকা, পেট্রোল পাম্প থেকে ২.৮৯ কোটি টাকা এবং অন্যান্য ভাড়া (ভূমি, নাট্যমঞ্চ, ছিন্নমূল ও নগর ভবন ইত্যাদি) থেকে ২ কোটি টাকা আয় হবে বলে বাজেটে আশা করা হয়েছে।

সরকারি মঞ্জুরি (থোক) থেকে ৫০ কোটি ও সরকারি বিশেষ মঞ্জুরি বাবদ ১০০ কোটি, সরকারি ও বৈদেশিক সহায়তামূলক প্রকল্প খাতে ৪ হাজার ৭৬৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা পাওয়ার প্রত্যাশার কথা বলা হয়েছে দক্ষিণ সিটির বাজেটে।

মেয়র জানান, সিটি করপোরেশনের বেতন ভাতা বাবদ ২৬৪ কোটি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পানি ও গ্যাস খরচ বাবদ ৫০ কোটি, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বাবদ ২৪ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

এছাড়া মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে (মনিটরিং ও সার্ভাইলেন্সসহ) ৩৫ কোটি টাকা, মালামাল সরবরাহ খরচ বাবদ ২১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, ভাড়া, রেটস ও কর খাতে ৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা, কল্যাণমূলক ব্যয় বাবদ ২০ কোটি ৫ লাখ টাকা, বিজ্ঞাপন ও প্রচারে ৩ কোটি ৫০ কোটি লাখ, বিভিন্ন ফি বাবদ ২৪ কোটি টাকা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিশেষ উদ্যোগে ৮ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।

উন্নয়ন ব্যয়ের উল্লেখযোগ্য খাতগুলো তুলে ধরে মেয়র বলেন, সড়ক ও ট্রাফিক অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নে ১ হাজার ৭৪১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, নাগরিকদের বিনোদন সুবিধরর উন্নয়নে ৮৪৭ কোটি টাকা, ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ, উন্নয়ন/রক্ষণাবেক্ষণে ৯১৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে এবার।

এছাড়া সমন্বিত মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে ৩০০ কোটি টাকা, জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ৩০০ কোটি টাকা, বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল সংস্কারে ১৫০ কোটি টাকা, বুড়িগঙ্গার জমি অবমুক্তি, রাস্তা ও পার্ক নির্মাণে ২৫০ কোটি টাকা, শিশুপার্ক রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নে ৩০০ কোটি টাকা, খেলার মাঠ উন্নয়নে ২৮১ কোটি টাকা, আঞ্চলিক অফিস স্থাপন ও অন্যান্য স্থাপনার উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনে ২০২ কোটি টাকা, কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণে ২৬০ কোটি ৭ লাখ টাকা, নতুন বাজার প্রতিষ্ঠায় ৩০০ কোটি টাকা, হাসপাতাল নির্মাণে ৪০ কোটি ৫০ লাখ টাকা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের জন্য ওয়ার্ড অফিস নির্মাণে ৫১ কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখার কথা জানান মেয়র।

তিনি বলেন, “একটি উন্নত ঢাকা গড়ার যে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি, সেই বাস্তবতার নিরিখেই আমাদের উন্নয়ন ব্যয় সাজিয়েছি। আমরা আশা করছি, সরকার সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করবে। আর আমরা সে অর্থের যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করে উন্নত ঢাকা গড়তে চাই।”