বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্ধকোটি মানুষ

এক মাসের বেশি সময় ধরে চলা তিন দফা বন্যায় দেশের ৩১ শতাংশের বেশি নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের অর্ধকোটি সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 July 2020, 02:16 PM
Updated : 29 July 2020, 02:27 PM

বুধবার বিকালে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান সমন্বয় কেন্দ্রের (এনডিআরসিসি) বিশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

মৌসুমি বৃষ্টি ও ঢলের কারণে গত ২৬ জুন চলতি মৌসুমে প্রথম দফা বন্যা শুরু হয়। তখন অন্তত ১০টি জেলায় বন্যার বিস্তার ঘটে। দ্বিতীয় ধাপে আরও আটটি জেলা প্লাবিত হয়।

জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহে শুরু হয় তৃতীয় ধাপের বন্যা। ২৯ জুলাই পর্যন্ত সব মিলিয়ে দেশের ৩১ জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

বুধবার কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নাটোর, টাঙ্গাইল, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নওগাঁ, রাজবাড়ী, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর জেলার ২৭টি পয়েন্টে নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের ৭৭ নম্বর কাঁঠালবাড়ি সরকারি বিদ্যালয় ও সাইক্লোন সেন্টার ভবনটির বড় অংশ মঙ্গলবার বিকালে পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে যায়।

এনডিআরসিসির তথ্য অনুযায়ী, ৩১ জেলার ১৫০ উপজেলার ৯৩৬টি ইউনিয়নের ১০ লাখ ৪০ হাজার ২৬৬টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

এনডিআরসিসির উপসচিব কাজী তাসমীন আরা আজমিরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন পর্যন্ত বন্যায় ৫০ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৩ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।”

তবে অনেক এলাকায় বন্যার প্রকোপ কমে আসায় ক্ষতিগ্রস্তদের সবাই এখন পানিবন্দি হয়ে নেই বলে জানান তিনি।

বন্যাকবলিত জেলা

ঢাকা, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, মুন্সিগঞ্জ, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, জামালপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ।

বন্যা দুর্গতের জন্য শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১৩ হাজার ১০ মেট্রিক টন চাল, তিন কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার নগদ টাকা এবং এক লাখ ৪০ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।

এছাড়া শিশু খাদ্য কিনতে ৮৪ লাখ টাকা, গো-খাদ্য কিনতে দুই কোটি ১৮ লাখ টাকা, ঘর নির্মাণের জন্য নয় লাখ টাকা এবং ৩০০ বান্ডেল ঢেউটিনও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

সারিয়াকান্দির আন্তারপাড়ার এ পরিবারটি এখনও বাড়ি ছেড়ে যায়নি, নৌকাই এখন তাদের আশ্রয়। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

বরাদ্দ ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে সাত হাজার ৯১৪ মেট্রিক টন চাল, দুই কোটি আট হাজার ৭০০ টাকা, এক লাখ দুই হাজার ২১২ প্যাকেট শুকনো খাবার, শিশু খাদ্য কিনতে ৪৫ লাখ চার হাজার টাকা, গো-খাদ্য কিনতে ৯০ লাখ ৯৪ হাজার টাকা, ঘর নির্মাণে তিন লাখ টাকা এবং ১০০ বান্ডেল ঢেউটিন বিতরণ করা হয়েছে।

বন্যাকবলিত ৩১ জেলায় এক হাজার ৫৪৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ৭৩ হাজার ১৭৩ জন আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া ৭৭ হাজার ৩০১টি গবাদিপশুকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে।

বন্যা উপদ্রুত এলাকায় চিকিৎসার জন্য ৮৯৩টি মেডিকেল টিম গঠন করা হলেও এর মধ্যে চালু রয়েছে ৩৭২টি।

বুধবার পর্যন্ত বন্যায় জামালপুরে ১৫ জন, কুড়িগ্রামে ৯ জন, টাঙ্গাইলে চারজন, ‍সুনামগঞ্জে তিনজন; মানিকগঞ্জ নওগাঁ ও ‍সিরাজগঞ্জে দুইজন করে এবং লালমনিরহাট, সিলেট, মুন্সিগঞ্জ ও গাইবান্ধায় একজন করে মোট ৪১ জন মারা গেছেন বলে এনডিআরসিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।