‘দামে না মেলায়’ হাটে গরু বিক্রি কম

তিন ধরনের ৬০টি গরু নিয়ে পোস্তগলা শ্মশান ঘাটের কোরবানির পশুর হাটে এসেছেন কুষ্টিয়ার বেপারি মাসুদ রানা। বহু ক্রেতা এসে দাম জিজ্ঞাসা করে চলে গেছেন। কিন্তু কেউ কিনতে আগ্রহ দেখাননি।

জয়ন্ত সাহা নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 July 2020, 05:44 AM
Updated : 27 July 2020, 10:57 AM

এই হাটে আসা আল আমিন, মোহাম্মদ মহসিন, রিয়াজ উদ্দিনসহ অন্য বেপারিরাও একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন। অনেক ক্রেতা আবার যে দাম বলছেন, তাতে প্রায় কোনো লাভ থাকে না বলে তাদের ভাষ্য।

বেপারিরা জানান, ৫ থেকে ৮ মণ ওজনের দেশি গরুর দাম তারা দেড় থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকার মধ্যে ধরছেন। ৭ থেকে ৮ মণের দেশি শাহীওয়াল ক্রস গরুর দাম পড়ছে ৮০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত।

১০ থেকে ১৬ মণ এঁড়ে গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে ১ লাখ টাকা থেকে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত। আর ১৫ থেকে ১৬ মণের দেশি বলদের দাম পড়বে আড়াই লাখ টাকা থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত।

কুষ্টিয়া সদরের বেপারি মোহাম্মদ মহসিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হাটে গরুর কোনো কমতি নাই। কিন্তু যারা কিনবে, তাদের কোনো আগ্রহ নাই। খালি দাম জিজ্ঞাসা করে চলে যায়। এভাবে চলতে থাকলে এবার তো মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়তে হবে।”

কুষ্টিয়ার আরেক বেপারি আল আমিন আটটি গরু নিয়ে এসেছেন, কিন্তু একটা গরুও বিক্রি হইল না।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “অবস্থা যা দেখছি, তাতে লাভের আশা করছি না এবার। আজকে দুই একজন দাম বলছে।

“আমরা যে দাম বলছি, ক্রেতারা তার চেয়ে ৬০-৭০ হাজার টাকা কমিয়ে বলছেন। এত লসে তো গরু বেচা যায় না।”

রাজধানীর কমলাপুর স্টেডিয়ামের পাশে কোরবানির হাটের চিত্রও একই রকম। ক্রেতার আশায় অপেক্ষা করছেন বিক্রেতারা। বৃহস্পতিবার থেকে হাটে গরু আসা শুরু হয়েছে।

কমলাপুরের হাটে মেহেরপুরের গাংনী থেকে আসা বেপারি চান মিয়া জানান, ৬ থেকে সাড়ে ৭ মণ ষাড়ের দাম পড়বে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। এরে গরুর দাম পড়বে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

ঝিনাইদহ থেকে আসা বেপারি শাহিন আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বৃহস্পতিবার হাটে আসছি। একটা গরুও বিক্রি হয়নি।”

ক্রেতারা যে দাম বলছেন তাতে প্রায় কোনো লাভ থাকে না বলে হাটে গরু বিক্রি না হওয়ার কারণ হিসেবে তুলে ধরেন কুষ্টিয়া থেকে আসা বেপারি শফি আলম।

তিনি বলেন, “ক্রেতাদের সঙ্গে আমাদের দামে বনছে না। আমরা যদি বলি, ১ লাখ ৫০ হাজার তারা বলছে ৮০ হাজার টাকা থেকে ৯০ হাজার টাকা দেবে। এত কমে দিলে তো আমাদের লাভ কিছুই থাকছে না।” 

আরেক বেপারি ইউসুফ আলী বলেন, “করোনাভাইরাসের কারণে এবার হাটের বিক্রি কেমন হবে, তা আন্দাজ করা মুশকিল। যতটা আশা নিয়ে আসছিলাস, দেখছি সে আশাটাও করা যাবে না। এখন ঈদের ২ দিন আগে দেখি কী হয়। তখন হয়ত কিছু ক্রেতা বাড়বে।”

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১১টি হাটের মধ্যে এবার জমে উঠেছে উত্তর শাহজাহানপুর কোরবানির হাট।

রোববার বিকালে এই হাটে গিয়ে দেখা গেল, ক্রেতা-বিক্রেতাদের দর হাঁকাহাকিতে পরিবেশ সরগরম হয়ে উঠেছে।

ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলা থেকে আসা বেপারি পিজির মণ্ডল বলেন, “ক্রেতারা আসছেন, আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তাদের সঙ্গে দাম দস্তুর মিললে দু একজনকে গরুও কিনতে দেখেছি।”

তবে ক্রেতারা যে দাম হাঁকছেন, তাতে অসন্তুষ্ট বেপারিরা।

নাটোর থেকে আসা বেপারি মো. মুরাদ আলী বলেন, “দাম বলবে ভালো কথা। দামে না পোষালে নিবে না। কিন্তু এত কম দাম বলে! এত কম দামে গরু দেওয়া যায়?”

ক্রেতা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “গতবারও গরু কিনেছি। এবারও সেই একই গরুর দাম চাচ্ছে, ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা বেশি। অবশ্য করোনাভাইরাস, বন্যা সব মিলিয়ে এবারের গরুর দাম একটু বেশি হবে, এটা মেনেই এসেছি। অনলাইন থেকে গরু কেনার কোনো ভরসা পেলাম না।”

হাটে ভারতীয় গরু

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে হাটে এবার ভারতীয় গরু আনা নিষিদ্ধ থাকলে পোস্তগলা শ্মশানঘাট আর শাহজাহানপুরের হাটে ভারতীয় আবাল গরু আসতে দেখা গেছে।

পোস্তগোলা শ্মশান ঘাটের বেপারিরা দাবি করছেন, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে এসব গরু অনেক আগেই এনেছিলেন। 

বেপারি মাসুদ রানা বলেন, “হাটে ভারতীয় গরুর চাহিদা আছে।  নিষিদ্ধ হয়েছে কি না তা তো আমাদের হাটের ইজারাদার বা কেউ বলেনি। আমরা শুনিনি কোথাও, ভারতের গরু বিক্রি করা যাবে না।”

এ বিষয়ে জানতে হাটের ইজারাদারদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তাদের হাসিল ঘরে কাউকে পাওয়া যায়নি।

উত্তর শাহজাহানপুরে এ নিয়ে বেপারি শাহীন আলম বলেন, “নিষিদ্ধ করলেই হবে না কি! বাজার না বুঝে নিষেধ করলেই হবে?”

স্বাস্থ্যবিধি নেই কোনো হাটেই

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এবার কোরবানির হাটে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।

পোস্তগোলা শ্মশানঘাটে যাত্রাবাড়ির মিরহাজারীবাগ এলাকার সুমন মিয়া বলেন, “মাস্ক ভুলে বাসায় রেখে আসছি। মাস্ক পরে আসা দরকার ছিল।”

বেপারিদের মধ্যে সাবান, হ্যান্ড সেনিটাইজার, মাস্ক বিতরণের কোনো কর্মসূচি চোখে পড়েনি এ তিন হাটের একটিতেও।

পোস্তগোলা শ্মশানঘাটের মাসুদ রানা বলেন, “আমাদের কেউ এসব নিয়ে কড়াকড়ির কথা বলেনি। মাস্ক তো থাকেই। কিন্তু সবসময় পরে থাকতে পারি না। তাছাড়া যেমন পরিবেশে আমাদের থাকতে হয়, তাতে করোনা যেকোনো সময় ধরতে পারে। মাস্ক পরে থাকলেই বা কি আর না থাকলেই বা কী!”

শাহজাহানপুরে হাটে আসা ক্রেতা সাদ্দাম হোসেনকে এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করতে বলেন, “আমার ইচ্ছা হয়নি মাস্ক পরিনি। আপনি বলার কে?”