সাবেক নৌমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খানের মেয়ে ঐশী খান রোববার লন্ডন যেতে চেয়েছিলেন।
হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক ঊর্ধতন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিমানের দুপুরের ফ্লাইটে লন্ডন যেতে ঐশী খান ইমিগ্রেশনে করোনাভাইরাস ‘নেগেটিভ’ সনদ দিয়েছিলেন, কিন্তু ইমিগ্রেশন পুলিশ খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হয় যে তিনি করোনাভাইরাস ‘পজিটিভ’। এরপর তাকে আর লন্ডন যেতে দেওয়া হয়নি।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ শাখার উপ মহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে জিজ্ঞাসায় বলেন, লন্ডনগামী বিজি ০০১ ফ্লাইটের একজন যাত্রীকে ইমিগ্রেশন থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
শাহজালাল বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকালে ইমিগ্রেশন বিভাগ থেকে একজন যাত্রীর পাসপোর্ট নম্বর ও মোবাইল নম্বর দিয়ে আমাদের সার্ভারে দেখতে বলা হল, তার করোনাভাইরাস পজেটিভ কিনা। আমরা সার্ভারে দেখি তার করোনা ভাইরাস পজিটিভ। এরপর তাকে আর দেশের বাইরে যেতে দেওয়া হয়নি।”
এই মহামারীকালে বাংলাদেশ থেকে আকাশপথে বিদেশযাত্রায় কোভিড-১৯ পরীক্ষার ‘নেগেটিভ’ সনদ বাধ্যতামূলক করেছে সরকার।
তবে ভুয়া ‘করোনাভাইরাসমুক্ত’ সনদ নিয়ে অনেকে দেশ ছাড়ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই ধরনের সনদ দেখিয়ে দেশের বিমানবন্দর পার হলেও বিদেশে গিয়ে এইসব যাত্রী ধরাও পড়ছেন।
এরপর বিমানবন্দরে যাচাই প্রক্রিয়া আরও কঠোর করা হয়েছে। এখন কোভিড-১৯ পরীক্ষার সনদ দেওয়া হলে সরকার স্বীকৃত যে প্রতিষ্ঠান তা দিয়েছে, তাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে তা যাচাই করে দেখা হয় বিমানবন্দরে।
ফেরত পাঠানো যাত্রী শাজাহান খানের মেয়ে ঐশী খান কি না- প্রশ্ন করা হলে বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জহিরুল বলেন, “আপনারা যা জেনেছেন, সেটা সঠিক। তিনি ভিআইপি এলাকাতে অবস্থান করছিলেন।”
শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিচালক এএইচএম তৌহিদ উল আহসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই বিষয়টা বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা দেখেছেন। তারা কী করেছেন বা পুরো ঘটনাটা কী, সেটা আমাদের অফিসিয়লি জানাননি।”
পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান অতিরিক্ত আইজি মীর শহীদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঐশী খান কোভিড-১৯ প্রতিবেদনের হার্ড কপি নিয়ে এসেছিলেন, যেখানে নেগেটিভ লেখা ছিল। পরে বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডেস্ক এবং ইমিগ্রেশন ওয়েবসাইটে পজিটিভ দেখতে পায়। তার সাথে আনা কপির সাথে ওটার মিল হচ্ছিল না। পরে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।”
মীর শহীদুল জানান, ঢাকার তিনটিসহ মোট ১৬টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পাওয়া প্রতিবেদন তারা ওই প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে গিয়ে পুনরায় যাচাই করে দেখেন।
ঐশী খানের প্রতিবেদন যাচাই করতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি ২৪ তারিখে নমুনা দিয়েছেন এবং পরদিন আরটি-পিসিআর টেস্টের ফল ‘পজিটিভ’ লিখে প্রতিবেদন দিয়েছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারাল সেন্টার।
বিষয়টি নিয়ে জানতে রোববার রাতে ফোন করা হলে ঐশী খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে প্রথমেই বলেন, “আপনারা এইসব নিউজ কোত্থেকে পেয়েছেন?”
এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “আমাকে যেই সার্টিফিকেট প্রোভাইড করা হয়েছিল ডিএনসিসি থেকে আপনারা তাদের সঙ্গে কথা বলে দেখেন। যেটা অথরাইজড বাংলাদেশ বিমানের বা এয়ারপোর্টের..আমি জানি না।
“সেখানে আমি গিয়ে ৩ ঘণ্টা বসে থেকে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করিয়েছিলাম ২৪ জুলাই। আপনারা তাদের সাথে কথা বলেন। আমাকে এখন ডিস্টার্ব করবেন না।”
ইমিগ্রেশন বিভাগ আপনার প্রতিবেদনের সত্যতা পায়নি- বলতেই ঐশী রাগত স্বরে বলেন, “আপনারা কী দেখেছেন, কী করছেন, এগুলো নিয়ে এখন আমি কথা বলতে চাচ্ছি না। বাট আপনারা তাদের সঙ্গে কথা বলে দেখেন।”
বিদেশগামীদের পরীক্ষার জন্য ঢাকায় নমুনা সংগ্রহে মহাখালীর ডিএনসিসি মার্কেটের স্থাপিত অস্থায়ী কোভিড-১৯ আইসোলেশন সেন্টারে বুথ বসানো হয়েছে। সেখানে ঢাকা জেলার সিভিল সার্জনের তত্ত্বাবধানে নমুনা সংগ্রহের কাজ চলছে। ডিএনসিসি কোনো নমুনা পরীক্ষা করে না।
কিন্তু ঐশী বারবার ‘ডিএনসিসি’র নাম উল্লেখ করে বলেন, “আমি আশা করব, আপনারা সাংবাদিকরা আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে একটা প্রতিবেদন লিখবেন। কারণ আপনারা ভুল রিপোর্ট লিখছেন।”