প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৩৫, খাসি ১৩ টাকা নির্ধারণ

ঈদ সামনে রেখে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের জন্য দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার; পশু ও আকারভেদে এবার চামড়ার দাম গতবারের চেয়ে কম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 July 2020, 07:13 AM
Updated : 26 July 2020, 07:45 AM

ট্যানারি ব্যবসায়ীরা এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া কিনবেন ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়; ঢাকার বাইরে এর দাম হবে ২৮ থেকে ৩২ টাকা।

এছাড়া সারা দেশে খাসির চামড়া ১৩ থেকে ১৫ টাকা এবং বকরির চামড়া ১০ থেকে ১২ টাকায় সংগ্রহ করবেন ব্যবসায়ীরা।

বোরবার কোরবানির পশুর কাচা চামড়ার মূল্য নির্ধারণ বিষয়ে এক ভার্চুয়াল সভায় এ সিদ্ধান্ত জানান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

বাংলাদেশে সারা বছর যে সংখ্যক পশু জবাই হয়, তার অর্ধেক হয় এই কোরবানির মৌসুমে। কোরবানি যারা দেন, তাদের কাছ থেকে কাঁচা চামড়া কিনে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বিক্রি করেন পাইকারদের কাছে। পাইকাররা সেই চামড়ায় লবণ দিয়ে সংরক্ষণের প্রাথমিক কাজটি সেরে বিক্রি করেন ট্যানারিতে।

ট্যানারি কেমন দামে চামড়া কিনবে, তা প্রতিবছর নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত বছর ট্যানারিগুলোর কেনার জন্য ঢাকায় গরুর কাঁচা চামড়া প্রতি বর্গফুট ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

আর খাসির কাঁচা চামড়া সারাদেশে ১৮-২০ এবং বকরির চামড়া ১৩-১৫ টাকা দর ঠিক করে দিয়েছিল সরকার।

কিন্তু গত ঈদে আড়তদারদের কাছে ‘ন্যায্য মূল্য’ না পেয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় ও আবর্জনার ভাগাড়ে চামড়া ফেলে গিয়েছিলেন ফড়িয়ারা। ততে তৈরি হয় নজিরবিহীন সঙ্কট।

অড়তদারদের অভিযোগ ছিল, ট্যানারি মালিকরা তাদের দীর্ঘদিনের বকেয়া টাকা পরিশোধ করছেন না। ফলে তারা নতুন করে চামড়া কেনার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন।

অন্যদিকে ট্যানারি মালিকদের অভিযোগ ছিল, ‘সিন্ডিকেট’ করে আড়তদাররা মাঠ পর্যায়ে চামড়ার দাম কমিয়ে দিলেও ট্যানারিগুলোর কাছে তারা সরককার নির্ধারিত দামেই চামড়া বিক্রি করছেন।

ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বছরে বাংলাদেশ থেকে মোটামুটি ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া, ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাগলের, ২ দশমিক ২৫ শতাংশ মহিষের এবং ১ দশমিক ২ শতাংশ ভেড়ার চামড়া।

এবার করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যে কোরবানির ঈদ আসায় চামড়ার দাম যে গত বছরের চেয়েও কমে যাবে, সে আভাস আগেই ব্যবসায়ীদের কথায় পাওয়া গিয়েছিল। সরকারের তরফ থেকে চামড়া ব্যবসায়ীদের সুযোগ-সুবিধা দেখার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।

রোববার চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পর বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচা চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যর চাহিদা এবং কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে চাহিদা কেমন হতে পারে, তার সঙ্গে বর্তমান মজুদ বিবেচনা করে এবারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

“যারা বিক্রি করবেন বা ক্রয় করবেন, সব কুল রক্ষা করে এ দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। সাপ্লাই চেইনে যেন মূল্য পায়, সেজন্য এ দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।”

চামড়ার দাম ক্রমান্বয়ে কমছে কেন জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “গতবছর রপ্তানি কমে গেছে, কোভিড-১৯ সারা দেশে স্থবির করে দিয়েছে। সব বিষয় বিবেচনা করে এ দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।”

প্রয়োজনে এবার কাঁচা চামড়া রপ্তানির সুযোগ রাখা হচ্ছে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “সেজন্য কমিটি করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথেও আলোচনা হয়েছে।”

তিনি জানান, কোরবানির চামড়া সংরক্ষণের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় পর্যাপ্ত লবণ সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে। লবণ না লাগিয়ে চামড়া যেন ঢাকায় পাঠানো না হয়, সে ব্যাপারে প্রচার চালানো হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বাণিজ্য সচিব মো. জাফর উদ্দীন জানান, পশুর কাঁচা চামড়া নির্ধারিত মূল্যে ক্রয়-বিক্রয়, সংগ্রহ, সংরক্ষণ, মজুদ এবং চামড়ায় প্রয়োজনীয় লবণ লাগানো তদারকিতে একটি ‘কমপ্রিহেনসিভ মনিটরিং প্ল্যান’ গ্রহণ করা হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় যৌথ সমন্বয় কমিটি, বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর/সংস্থার সমন্বয়ে মনিটরিং টিম এবং সব জেলা পর্যায়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে এ টিম কাজ করবে।

তথ্য সচিব কামরুন নাহারসহ চামড়া শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা সভায় বক্তব্য দেন।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ১ কোটির কিছু বেশি পশু কোরবানির জন্য সারাদেশে ব্যবহৃত হয়। এবার কোরবানির ঈদের জন্য সারা দেশে ১ কোটি ১৮ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০টি পশু মজুদ রয়েছে। তবে এ বছর মহামারীর কারণে পশু জবাই গতবারের তুলনায় কম হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।