ইচ্ছা করলেই তরঙ্গমূল্য কমানো সম্ভব নয়: বিটিআরসি

নিয়ন্ত্রক সংস্থা চাইলেই মোবাইল ফোন অপারেটরদের জন্য তরঙ্গ মূল্য কমাতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়াম্যান জহুরুল হক।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 July 2020, 11:45 AM
Updated : 25 July 2020, 12:24 PM

তবে অপারেটররা একসঙ্গে বেশি পরিমাণ তরঙ্গ কিনলে দাম কমানোর বিষয়টি বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। 

শনিবার বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের উদ্যোগে ‘গ্রাহক স্বার্থরক্ষায় মানসম্মত টেলিকম সেবার জন্য পর্যাপ্ত তরঙ্গ বরাদ্দে প্রতিবন্ধকতা নিরসনে করণীয়’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বিটিআরসি প্রধান এ কথা বলেন।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান বলেন,“রেগুলেটর রেগুলেট না করলে ১৬ কোটির বেশি মোবাইল সংযোগ ও ১০ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হত না। ভাল রেগুলেশনের জন্য সরকার ভাল রাজস্ব পাচ্ছে। বিটিআরসি অপারেটরদের স্বার্থ দেখে এবং সুবিধা দেখতে চায়।

“ইচ্ছে করলে তরঙ্গ দাম কমানো যায় না বাড়নো যায়। অনুমতি লাগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের, এমনকি কখনো কখনো প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন লাগে। দাম কমাতে হলে অপারেটরদেরকে সরকারের সাথে কথা বলতে পারে।”

একসাথে বেশি তরঙ্গ ক্রয়ে দাম কমানো সম্ভব জানিয়ে বিটিআরসি প্রধান বলেন,“সম্পূর্ণ তরঙ্গ কিনলে দাম কমানো সম্ভব, পার্টলি নিলে সম্ভব হবে না দাম কমাতে।”

তিনি বলেন, ২০১৮ সালে যে নিলাম হয়েছে সে দাম থেকে কম হলে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। তবে আলোচনা করে সমাধানে আসা যাবে।

“বিটিআরসি সব সময় পজিটিভ। তরঙ্গ অব্যবহৃত হয়ে আছে এটা খারাপ দিক, একটি পলিসি থাকা উচিত যেন তরঙ্গ অব্যবহৃত না থাকে।”

টেলকম সেবায় ভোগান্তির কথা উল্লেখ করে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন,“মন্ত্রীর সাথের কথা বলার সময় কলড্রপ হচ্ছে এখানে প্রযুক্তি কোন ব্যক্তি চেনে না। তরঙ্গের দাম কমানো বাস্তবে অসম্ভব। নিলামে ১৫ বছরের জন্য তরঙ্গ দেওয় হয়, ১৫ বছরের জন্য যা দেওয়া হয়েছে দাম কমালে সেই মূল্য বা টাকা ফেরত কি তারা চাইবে না। অপারেটররা যৌক্তিক প্রস্তাব দিলে মানা হবে।”

২০১৮ সালের তরঙ্গ নিলামের কথা উল্লেখ করে বিটিআরসি প্রধান বলেন,“অকশনে দাম বেশি হলে আপনারা কেন নিলামে আসেন।”

২০১৮ সালে দেশে ফোর-জি চালু করার জন্য তরঙ্গ নিলাম করে বিটিআরসি। নিলামে মোট ১১টি ব্লকে ৪৬ দশমিক ৪ মেগাহার্টজ তরঙ্গ নিলামের জন্য ছিল। এর মধ্যে তিনটি ব্লকে ১৫ দশমিক ৬ মেগাহার্টজ বিক্রি হয়। ৬৭ শতাংশ তরঙ্গ অবিক্রিত হওয়ার মূল কারণ উচ্চমূল্য বলে দাবি করে আসছে অপারেটররা।

বিটিআরসির হিসেবে, টু জির ৯০০ মেগা হার্টজ ব্যান্ডে ৮ দশমিক ৪ মেগা হার্টজ ও ১৮০০ মেগা হার্টজ ব্যান্ড ১২ দশমিক ৪ মেগা হার্টজ এবং থ্রি জির ২১০০ মেগা হার্টজ ব্যান্ডে ২০ মেগা হার্টজ ব্যবহারযোগ্য রয়েছে। এ তিন ব্যান্ডে মোট ৪০ দশমিক ৮ মেগা হার্টজ তরঙ্গ রয়েছে যেখান থেকে অপারেটররা কিনতে পারেন।

বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন,“ইচ্ছা করলেই তরঙ্গের দাম কমানো সম্ভব নয়। ১৫ বছরের জন্য তরঙ্গ নিলামে দেওয়া হয়েছে এ সময় পার হলে বিবেচনা করা যেতে পারে।

“পরবর্তী নিলামের আগে দাম কমানো সম্ভব নয়। তবে তরঙ্গের দাম কমানো হলে সেবার মান বাড়বে নিশ্চয়তা দিয়ে অপারেটররা সরকারকে জানালে আমরা উদ্যেগ নেব।”  

রবির ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন,“ বর্তমান রেগুলেটরি খুবই আন্তরিক তবে তাদেরও লিমিটেশন আছে তারা চাইলেও অনেক কিছু করতে পারেন না। বিটিআরসি তরঙ্গ দাম কমানোতে পজিটিভ তবে তাদের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগে।

“পলিসি মেকারদের আগে থেকে ইনভল্ব করতে হবে, বিটিআরসি যা বুঝে হয়ত অর্থমন্ত্রণালয় তা বুঝছে না। সব শেষে আমরা চাই গ্রাহকরা ভাল সেবা পাক, মিশনের সাথে পলিসির একযোগে কাজ করতে হবে।”

বাংলালিংকের চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স কর্মকর্তা তৈমুর রহমান বলেন,“টিকে থাকার জন্যই ২০১৮ সালে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি তরঙ্গ কেনা হয়েছিল। বিটিআরসি সরকারকে বুঝাতে পারে যত তরঙ্গ দেবে তত রাজস্ব বাড়বে।”

বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিটিআরসি কমিশনার (এসএম) মোঃ আমিনুল হাসান, অ্যামটব সাবেক মহাসচিব নুরুল কবির, এরিকসনের কান্ট্রি ম্যানেজার আব্দুস সালামসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন।