সাহেদের চুক্তির নথি দুদকে দিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ ও চিকিৎসার বিষয়ে মোহাম্মদ সাহেদের রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হওয়া চুক্তি সংক্রান্ত নথিপত্র পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 July 2020, 01:57 PM
Updated : 20 July 2020, 01:58 PM

সোমবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে অনুসন্ধান দলের প্রধান কমিশনের উপ-পরিচালক মো. আবু বকর সিদ্দিকের কাছে নথিপত্র হস্তান্তর করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ডা. দিদারুল ইসলাম।

রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমের নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগের ‘অনুসন্ধানের স্বার্থে’ এসব নথিপত্র চেয়েছিল দুদক।

নথিপত্র জমা দিয়ে দিদারুল সাংবাদিকদের বলেন, “স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে দুদক যেসব কাগজপত্র চেয়েছিল তা আমরা দিয়েছি। এই অনুসন্ধানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।”

দুদকের পরিচালক (জনসংযোগ) প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, “স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি প্রতিনিধি দল কিছু রেকর্ডপত্র জমা দিয়ে গেছে। এখন অনুসন্ধান টিম সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিশ্লেষণ করে দেখবেন।”

এর আগে রোববার নথিপত্র পেতে দুদকের অনুসন্ধান টিম রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে গেলে একদিন পর তা দেওয়া হবে বলে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে ফিরে যান তারা।

গত ১৪ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে দুদকের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখার নিবন্ধন ইস্যূ ও নবায়নের সত্যায়িত কপি, কোভিড-১৯ পরীক্ষা নিয়ে হাসপাতাল দুটির সাথে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চুক্তি সংক্রান্ত নথিপত্রসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য নথিপত্রের সত্যায়িত কপি পাঠানোর জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

করোনাভাইরাসের পরীক্ষা না করে ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া, সরকারের কাছে বিল দেওয়ার পর আবার রোগীর কাছ থেকেও অর্থ নেওয়াসহ নানা অনিয়মের খবর পেয়ে র‌্যাব গত ৭ ও ৮ জুলাই অভিযান চালিয়ে রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর ও উত্তরা শাখা বন্ধ করে দেয়। হাসপাতালটির লাইসেন্সের মেয়াদও ছিল না।

পরে ওই হাসপাতালের অনুমোদন বাতিল করে স্বাস্থ্য বিভাগ।

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় গত ২১ মার্চ রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চুক্তি হয়। ওই অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ কয়েকজন সচিব উপস্থিত ছিলেন।

বিতর্কিত রিজেন্টের সঙ্গে চুক্তি করা নিয়ে সমালোচনার মুখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত ১১ জুলাই দাবি করে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের’ নির্দেশে ওই চুক্তি করা হয়েছিল। পরে অধিদপ্তরের ওই বক্তব্যের ব্যাখ্যা চায় মন্ত্রণালয়।

রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযানের পর ৭ জুলাই উত্তরা পশ্চিম থানায় প্রতারণার অভিযোগে সাহেদকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে র‌্যাব। সাহেদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তার ব্যাংক হিসাবও জব্দ করা হয়।

এরপর গত ১৫ জুলাই ভোরে সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্ত থেকে সাহেদকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

সাহেদ পলাতক থাকার সময়ই গত ১৩ জুলাই তার অনিয়মের অনুসন্ধানে উপ-পরিচালক মো. আবু বকর সিদ্দিকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল গঠন করে দুদক। দলের অন্য দুই সদস্য হলেন- সহকারী পরিচালক মো. নেয়ামুল হাসান গাজী ও শেখ মো. গোলাম মাওলা।

এরপর সাহেদের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি সংক্রান্ত নথিপত্র চেয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়েছে অনুসন্ধান টিম।