সাহাবউদ্দিন মেডিকেল ছাড়ছেন রোগীরা

র‌্যাবের অভিযানের পর গুলশানের সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছেড়ে যাচ্ছেন রোগীরা। নতুন রোগী ভর্তিও বন্ধ রাখা হয়েছে। রোগী শূন্য হলে হাসপাতালটি সিলগালা করা হবে বলে র‌্যাবের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন।

লিটন হায়দার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 July 2020, 11:50 AM
Updated : 20 July 2020, 04:25 PM

করোনাভাইরাস পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ পেয়ে রোববার বিকালে গুলশানের এই বেসরকারি হাসপাতালটিতে অভিযান চালায় র‌্যাব। অনিয়মের অভিযোগে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক চিকিৎসক আবুল হাসনাত ও স্টোর কিপার শাহরিজ কবিরকে আটক করা হয়।

তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক এএসপি সুজয় সরকার জানিয়েছেন।

অভিযানে এই হাসপাতালে ‘নয় ধরনের অনিয়ম পাওয়ার’ কথা জানিয়েছেন র‌্যাব কর্মকর্তারা।

তাদের ভাষ্য মতে, বেসরকারি এই হাসপাতালে বাংলাদেশে অনুমোদনহীন করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি র‌্যাপিড টেস্ট করা হয়েছে, পরীক্ষা ছাড়াই ভুয়া প্রতিবেদন দিয়েছে তারা, করোনাভাইরাস নেগেটিভ রোগীকে পজিটিভ দেখিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রেখেছে, ভিন্ন ল্যাব থেকে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করিয়ে নিজেদের প্যাডে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।

অনুমোদন না নিয়ে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার অভিযোগ পেয়ে রোববার ঢাকার গুলশানের সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে সহকারী পরিচালক আবুল হাসনাতকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

এছাড়া হাসপাতাল পরিচালনার লাইসেন্সের মেয়াদ ‘এক বছর আগে শেষ হয়েছে’ বলেও জানিয়েছে র‌্যাব।

গত মার্চে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর আতঙ্কের মধ্যে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা সেবা সীমিত হয়ে পড়ে। অপরদিকে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় এপ্রিলে এই সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সঙ্গে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ইস্কাটনের হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারণ করে দেয় সরকার।

এগুলোর মধ্যে তিনটি হাসপাতাল সে সময় করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসা শুরু করলেও পিছু হটে সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

পরে সব হাসপাতালেই অন্যান্য রোগীদের পাশাপাশি করোনাভাইরাস আক্রান্তদেরও চিকিৎসা দিতে নির্দেশ দেয় সরকার। সে সময় অপরাপর বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সঙ্গে সাহাবুদ্দিন মেডিকেলেও কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়।

সোমবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে অত্যন্ত নিরিবিলি দেখা যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যকে সেখানে দেখা যায়নি।

বিকাল ৩টার কিছুক্ষণ আগে এক রোগীকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাচ্ছিলেন স্বজনরা।

কী হয়েছে জানতে চাইলে পলাশ নামে তার এক স্বজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,  কোভিড-১৯ এর উপসর্গ নিয়ে চার দিন আগে এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ায় তারা চলে যাচ্ছেন। তবে কোভিড-১৯ পরীক্ষার প্রতিবেদন এখনও পাওয়া যায়নি।

“হাসপাতাল থেকে বলেছে, বিকালে দেবে,” বলেন তিনি।

হাসপাতালের তথ্য কেন্দ্র থেকে জানানো হয়, কোনো রোগী তারা ভর্তি নিচ্ছেন না। সকাল থেকে দুইজন এসেছিলেন তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর যারা ভর্তি ছিলেন তাদের মধ্যে পাঁচজন র‌্যাবের অভিযান পর থেকে বিকালের মধ্যে হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন।

ব্কিাল ৩টার সময় হাসপাতালের কোভিড-১৯ ইউনিটে ১৪ জন এবং অন্য একজন সাধারণ রোগী ভর্তি ছিলেন।

অনুমোদন না নিয়ে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার অভিযোগে রোববার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমের নেতৃত্বে গুলশানের সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অভিযান চালায় র‌্যাব।

কোভিড-১৯ আক্রান্তদের তিনজন আইসিইউতে ভর্তি জানিয়ে হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহাবউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই ১৪ জনের মধ্যে আটজন বিদেশি, তারা রাশিয়ান।

তিনি বলেন, “নতুন রোগী ভর্তি বন্ধ রাখা হয়েছে। কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিলে আমার কোনো অপত্তি নেই। তবে আমরা সব সময় সতর্ক থাকি বলেই হাসপাতালের কেউ কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়নি।”

সাহাবউদ্দিন বলেন, তার ছেলে ফয়সল আল ইসলাম ‘করোনাভাইরাসে আক্রান্ত’। তাকে একটি হোটেলে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।

“সেখানেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে নজরদারির মধ্যে রেখেছে।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাব কর্মকর্তা সুজয় সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সাহাবউদ্দিনের ছেলের বিষয়ে তার ‘কিছু জানা নেই’।

তিনি বলেন, সাহাবুদ্দিন মেডিকেলের ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। রোগীরা সবাই চলে যাওয়ার পর হাসপাতালটি সিলগালা করা হবে। এক্ষেত্রে খানিকটা সময় লাগতে পারে।

আটক দুজনের বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে সুজয় সরকার বলেন, নিয়ম অনুযায়ী মামলা দায়েরের পর  তাদের থানায় হস্তান্তর করা হবে।