দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বলছে, করোনাভাইরাস সঙ্কটকালে বিতরণের পরও সরকারের হাতে যথেষ্ট ত্রাণ সামগ্রী মজুদ রয়েছে। চাহিদা পাওয়ার আগেই বন্যাক্রান্ত জেলাগুলোতে ত্রাণ পাঠানো হয়েছে। কোনো জেলা থেকে বাড়তি চাহিদা পেলে সঙ্গে সঙ্গে তা পাঠানো হবে।
মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করছেন তারা। বন্যাক্রান্ত বেশিরভাগ জেলাতেই চাল, শুকনা খাবার, নগদ টাকাসহ অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রী উদ্বৃত্ত আছে।
গত ৪ জুলাই থেকে কয়েক ধাপে বন্যা, নদীভাঙন, পাহাড়ি ঢল, অতিবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, অগ্নিকাণ্ডসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের মানবিক সহায়তা হিসেবে দিতে সারা দেশে ১৫ হাজার ২০০ মেট্রিকটন চাল, তিন কোটি ৩৯ লাখ নগদ টাকা এবং ৬২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।
এছাড়া শিশু খাদ্য কিনতে ৫০ লাখ টাকা, গো-খাদ্য কিনতে ৫০ লাখ টাকা, ১০০ বান্ডিল ঢেউটিন এবং ঘর মেরাতমতের জন্য আরও তিন লাখ টাকা রবাদ্দ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
মাঠ প্রশাসন থেকে পাওয়া তথ্য সমন্বয় করে রোববার জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান সমন্বয় কেন্দ্র (এনডিআরসিসি) বলছে, এখন পর্যন্ত চার হাজার ৯৬৫ মেট্রিকটন চাল, দুই কোটি নয় লাখ ৯২ হাজার ২০০ টাকা, ৪৩ হাজার ৭৭২ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
এছাড়া শিশু খাদ্য কিনতে সাড়ে ২২ লাখ টাকা, গো-খাদ্য কেনার জন্য সাড়ে ২২ লাখ টাকা একং ৮০ বান্ডিল ঢেউটিন বিতরণ করা হয়েছে। বন্যা কবলিত জেলায় ৫৯৩টি মেডিকেল টিম গঠন করে ২০৪টি চালু করা হয়েছে।
এনডিআরসিসি বলছে, বন্যা উপদ্রুত লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী, রংপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, জামালপুর, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, ফরিদপুর, নেত্রকোণা, ফেনী ও নওগাঁ জেলার ৯০টি উপজেলার ৫২৩টি ইউনিয়নে পাঁচ লাখ ৫১ হাজার ৮৪টি পরিবারের ২৩ লাখ ৬০ হাজার ৪৫৮ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. মোহসীন রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ত্রাণের কোনো অভাব নেই। দুর্গম জায়গায় যাতে বেশি করে ত্রাণ পৌঁছায় মাঠ প্রশাসনকে আমরা সেই তাগিদ দিচ্ছি। জেলা প্রশাসন কাজ করছে।
“আমরা ওয়েল প্রিপায়ার্ড, কারো খাদ্যের জন্য যেন কোনো কষ্ট নয় সেজন্য উদারহস্তে আমরা খাবার বরাদ্দ দিচ্ছি। ত্রাণ সামগ্রী পরিবহণের জন্যও খরচ দেওয়া হচ্ছে। শিশু ও গো-খাদ্য কিনতে টাকা দিচ্ছি। ত্রাণ নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।”
কোনো অঞ্চলে ত্রাণ প্রয়োজন থাকলে সেই খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে ত্রাণ সচিব বলেন, “একটি জেলাও নেই যে রিকুইজশন দিয়ে বসে আছে। আমরাই বরং কোনো কোনো জেলায় আগাম দিয়েছি।”
শুকনা খাবারের একেকটি প্যাকেটে যে পরিমাণ চাল, ডাল, লবণসহ অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে তাতে একটি পরিবারের ৫-৭ দিন চলবে বলে জানান মোহসীন।
ত্রাণ সামগ্রী বরাদ্দ দিয়ে সেসব কীভাবে বিতরণ করা হচ্ছে তা মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তর থেকে নিয়মিত খোঁজ রাখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
বিতরণের পরেও বন্যাকবলিত ১৮টি জেলায় বর্তমানে চাল, নগদ টাকা এবং শুকনা খাবার মজুদ রয়েছে জানিয়ে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে তথ্য পাঠিয়েছেন ওইসব জেলার ডিসিরা। সবগুলো জেলায়ই এসব ত্রাণ সামগ্রী মজুদ রয়েছে এনডিআরসিসির তালিকায় বলা হয়েছে।
টাঙ্গাইলের ডিসি মো. আতাউল গনি বলছেন, বন্যার্তদের মধ্যে বিতরণের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ বরাদ্দ পেয়েছেন তিনি।
রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “চাওয়া মাত্র ত্রাণ পাঠানো হবে বলে ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে। তবে আমাদের হাতে এখনও পর্যাপ্ত শুকনা খাবারসহ অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রী মজুদ আছে।”
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উজজেলার চরে বসবাসকারীদের বেশিরভাগই আগে থেকে খাবার মজুদ করে রেখেছেন জানিয়ে ডিসি বলেন, “বন্যা তাদের কাছে স্বাভাবিক বিষয়। এরপরেও কারো ত্রাণ লাগলে আমরা তা দেব। এদের চিকিৎসা এবং সুপেয় পানির বিষয়টি আমরা দেখছি।
“আমি নিজে চরে গিয়েছিলাম। তারা হতাশ ও ভীত নন। ত্রাণ নিয়ে কারও কোনো অভিযোগ নেই।”
কুড়িগ্রামের ডিসি মোহাম্মদ রেজাউল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পানিবন্দি হওয়ার আগে সবাই খাবার মজুদ করেছেন। যারা একেরাবেই দুর্গত তাদের চাল এবং নগদ টাকা দেওয়া হচ্ছে।
“অনেক সময় চাল দিলেও তা কাজে আসে না, কারণ চুলা জ্বালানোর মতো পরিস্থিতি থাকে না। সেক্ষেত্রে আমরা তাদের শুকনা খাবার দিচ্ছি।”
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে জানিয়ে রেজাউল বলেন, “ত্রাণ পাচ্ছি না, এমন অভিযোগ আমরা পাইনি।”
কুড়িগ্রামে রোববার সকাল থেকে বৃষ্টি হওয়ায় পানি বাড়ছে জানিয়ে ডিসি বলেন, স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করছেন। সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলো পানি বিশুদ্ধ করে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, “আরও যত বড় দুর্যোগ আসুক না কেন, দুর্যোগ যত দীর্ঘস্থায়ী হোক না কেন, দুর্গত মানুষের ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার মতো সক্ষমতা আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা সরকারের আছে।”
মাঠ প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, দলীয় নেতা-কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে ত্রাণ বিতরণ করে অতীতের মতো এবারের বন্যাও মোকাবেলা করে মানুষের দুঃখকষ্ট লাঘব করা হবে বলে জানান তিনি।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাস কেন্দ্র বলছে, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদ-নদীর পানি কমছে। গঙ্গা ও পদ্মার পানি স্থিতিশীল আছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি কমছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় সিলেট, সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালাপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও মানিকগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
এছাড়া নাটোর, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, শরিয়তপুর ও ঢাকা জেলার নিন্মাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে বা সামান্য উন্নতি হতে পারে বলেও আভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।