যে চুক্তির ভিত্তিতে রিজেন্ট হাসপাতাল করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ ও চিকিৎসার অনুমতি পেয়েছিল, তার নথিপত্রের খোঁজে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঘুরে এসেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি দল।
Published : 19 Jul 2020, 07:29 PM
রিজেন্ট হাসাপাতলের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমের বিরুদ্ধে অনিয়মের বিভিন্ন অভিযোগের অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে রোববার দুপুরে অনুসন্ধান কর্মকর্তা মো. আবু বকর সিদ্দিকের নেতৃত্বে একটি দল রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যায়।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে প্রায় আধা ঘণ্টা কথা বলে বেরিয়ে আসে দুদকের অনুসন্ধান দল।
পরে আবু বকর সিদ্দিক সাংবাদিকদের বলেন, “রিজেন্ট হাসপাতালের সাথে যে চুক্তি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সে চুক্তি সংক্রান্ত নথিপত্রের প্রয়োজনে আমরা এসেছিলাম। স্বাস্থ্যের ডিজি আমাদেরকে আশ্বাস দিয়েছেন আগামীকাল এসব নথি আমাদের কাছে হস্তান্তর করবেন।”
তবে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
করোনাভাইরাসের পরীক্ষা না করে ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া, সরকারের কাছে বিল দেওয়ার পর আবার রোগীর কাছ থেকেও অর্থ নেওয়াসহ নানা অনিয়মের খবর পেয়ে র্যাব গত ৭ ও ৮ জুলাই অভিযান চালিয়ে রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর ও উত্তরা শাখা বন্ধ করে দেয়। হাসপাতালটির লাইসেন্সের মেয়াদও ছিল না।
পরে ওই হাসপাতালের অনুমোদন বাতিল করে স্বাস্থ্য বিভাগ।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় গত ২১ মার্চ রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চুক্তি হয়। ওই অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ কয়েকজন সচিব উপস্থিত ছিলেন।
বিতর্কিত রিজেন্টের সঙ্গে চুক্তি করা নিয়ে সমালোচনার মুখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত ১১ জুলাই দাবি করে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের’ নির্দেশে ওই চুক্তি করা হয়েছিল। পরে অধিদপ্তরের ওই বক্তব্যের ব্যাখ্যা চায় মন্ত্রণালয়।
রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযানের পর ৭ জুলাই উত্তরা পশ্চিম থানায় প্রতারণার অভিযোগে সাহেদকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে র্যাব। সাহেদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তার ব্যাংক হিসাবও জব্দ করা হয়।
এরপর গত ১৫ জুলাই ভোরে সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্ত থেকে সাহেদকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
এর আগে ১৩ জুলাই মোহাম্মদ সাহেদের অনিয়মের অনুসন্ধানে উপ-পরিচালক মো. আবু বকর সিদ্দিকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল গঠন করে দুদক। দলের অন্য দুই সদস্য হলেন- সহকারী পরিচালক মো. নেয়ামুল হাসান গাজী ও শেখ মো. গোলাম মাওলা।
এরপর সাহেদের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি সংক্রান্ত নথিপত্র চেয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়েছে অনুসন্ধান টিম।
ইতোমধ্যে দুদকের অনুসন্ধানে সাহেদের মালিকানাধীন রিজেন্ট গ্রুপের আটটি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পাওয়া গেছে। এগুলো হলো- রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেড, রিজেন্ট কেসিএস লিমিটেড, মুনলাইট রিসোর্ট, ফোর স্টার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, মুনলাইট বিল্ডার্স, রিজেন্ট ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনলজি, ঢাকা সেন্ট্রাল কলেজ, দি ডেইলি অন্য দিগন্ত ও কর্মমুখি কর্মসংস্থান সোসাইটি।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পাঠানো চিঠিতে সাহেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে বলা হয়, মাইক্রোক্রেডিট ও এমএলএম ব্যবসার নামে জনসাধারণের সঙ্গে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা সংগ্রহ, বহুমাত্রিক জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে পরস্পর যোগসাজশে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, আয়কর ফাঁকি, ভুয়া নাম ও পরিচয়ে ব্যাংক ঋণ গ্রহণ করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এছাড়া কয়েকটি ব্যাংকে সাহেদের হিসাবের তথ্যও চেয়েছে দুদক।