গরু চোরাচালান: বিএসএফের ভূমিকা নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন বিজিবির

সীমান্তে গরু পাচারে বাংলাদেশি সীমান্তরক্ষীদের সমর্থন দেওয়ার যে খবর ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে এসেছে, তার প্রতিবাদ জানিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ‘নীরবতা’ নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুলেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 July 2020, 01:14 PM
Updated : 19 July 2020, 01:41 PM

রোববার বিজিবির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “প্রকৃতপক্ষে ভারতীয় চোরাকারবারীদের মাধ্যমে সীমান্ত এলাকায় ভারতের মাটিতে গরু সমাগম ও নদীপথে গরু পাচারে বিএসএফ এর নিষ্ক্রিয়তা/তৎপরতার অভাব নিঃসন্দেহে বিভিন্ন প্রশ্নের অবতারণা করে।”

বিএসএফ সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি এস এস গুলেরিয়া স্বাক্ষরিত হিন্দি ভাষার এক বিবৃতির বরাত দিয়ে গত ১৩ জুলাই একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ভারতের ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

‘বিএসএফ: বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ সাপোর্টস ক্যাটল স্মাগলিং’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বিএসএফের বিবৃতি থেকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ভারত থেকে গরু পাচারে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ‘সম্পূর্ণভাবে সমর্থন’ দিয়ে যাচ্ছে।

ওই অভিযোগ ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’ দাবি করে বিজিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “ভারতীয় গরু পাচারকারীরা অধিক মুনাফা লাভের আশায় বাংলাদেশে এভাবে গরু পাচার করার কাজে অতি উৎসাহী হয়। এতে করে দেশীয় খামারিগুলো প্রায়শঃ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”

গরু চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি অত্যন্ত কঠোর অবস্থান নিয়েছে এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, পুলিশ, সমাজের গণ্যমাণ্য ব্যক্তি এবং সর্বস্তরের জনগণকে নিয়ে সীমান্ত এলাকায় জনসচেতনতামূলক সভা আয়োজন, রাত্রিকালীন পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে বলে জানানো হয় বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিবৃতিকতে।

বিএসএফ কর্তকর্তা এস এস গুলেরিয়াকে উদ্ধৃত করে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়, গরুগুলোর চোখ বেঁধে কলাগাছের সঙ্গে বেঁধে গঙ্গায় ছেড়ে দেওয়া হয়, যাতে সেগুলো ভেসে ভেসে বাংলাদেশ সীমান্তে পৌঁছাতে পারে।

“যখন সেগুলো নদীর বাংলাদেশ অংশে পৌঁছায়, শত শত বাংলাদেশি পাচারকারী গরুগুলোকে ধরে স্পিডবোটে তোলে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সদস্যদের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে তারা কখনও কখনও এ কাজটি করে।”  

তবে গরু পাচারে সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করে বিজিবি বলেছে, “মূলত গরু চোরাচালান প্রতিরোধে বিএসএফ এর ব্যর্থতাকে ঢাকার জন্যই ভারতীয় গণমাধ্যমে সংবাদটি প্রকাশ হতে পারে বলে অনুমেয়।”

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের উত্তর অংশ থেকে ট্রাক ভর্তি করে পাচারের জন্য গরু নিয়ে আসা হয় সীমান্তে। বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি আনার পর পাচারকারীরা সেগুলোকে জোরে দৌড়াতে বাধ্য করে যাতে সেগুলো ধরা না যায়। সেগুলো যাতে জোরে দৌড়ায় সেজন্য কখনও কখনও গরুগুলোকে ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক দেওয়া হয়। কখনও কখনও সেগুলোর লেজ কেটে ক্ষত তৈরি করা হয়।  

বিএসএফের বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতে যে মহিষের দাম ৫০ হাজার রুপি, বাংলাদেশে পাচারের পর কোরবানির মৌসুমে তা বিক্রি করা হয় প্রায় দেড় লাখ রুপির সমতুল্য দামে। প্রতিটি মহিষে পাচারকারীর লাভ থাকে দশ হাজার রুপি। 

বিজিবির প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, চলতি জুলাই মাসের শেষে কোরবানির ঈদ উপলক্ষে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গরু চোরাচালান বেড়েছে বলে দাবি করা হয়েছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে। অর্থাৎ গরু পাচারের পেছনে ‘ধর্মীয় কারণের উপস্থিতির দিকে ইঙ্গিত’ করা হয়েছে।

“মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে জানা গেছে, বিগত বছরে ১ কোটির সামান্য কিছু বেশি পশু কোরবানির জন্য সারাদেশে ব্যবহৃত হয়েছে। এ বছর বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে ধারণা করা হচ্ছে এ সংখ্যা ১ কোটির কিছু কম হবে। আসন্ন কোরবানির ঈদের জন্য আমাদের দেশে ১ কোটি ১৮ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০টি পশু মজুদ রয়েছে যা প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত।

পাচারের কারণে দেশীয় খামারীরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য দেশের সীমান্তে গবাদী পশু চোরাচালান রোধে বিজিবির নজরদারি বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে প্রতিবাদলিপিতে।