ফের রিমান্ডে সাবরিনা

করোনাভাইরাস পরীক্ষা নিয়ে জেকেজি হেলথ কেয়ারের জালিয়াতির মামলায় জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের চিকিৎসক ডা. সাবরিনা শারমিন হুসাইনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আরও দুই দিনের রিমান্ডে পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 July 2020, 09:28 AM
Updated : 20 July 2020, 10:50 AM

পুলিশের পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি করে ঢাকার মহানগর হাকিম মাসুদ উর রহমান শুক্রবার দুই দিনের হেফাজত মঞ্জুর করেন।

জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান সাবরিনাকে এর আগে তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। সেই রিমান্ড শেষে শুক্রবার দুপুরে তাকে আদালতে হাজির করে আরও ৫দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন গোয়েন্দা পুলিশের পরিদশর্ক লিয়াকত আলী।

সেই আবেদনে বলা হয়, এ মামলার এক আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন, সেখানে ডা. সাবরিনার নাম আসে।

রিমান্ড আবেদনের বিরোধিতা করে সাবরিনার পক্ষে জামিনের আবেদন করেন আইনজীবী ওবায়দুল হক বাচ্চুসহ কয়েকজন।

শুনানিতে বাচ্চু বলেন, “পুলিশ রিমান্ড আবেদনে সাবরিনাকে জেকেজির চেয়ারম্যান বলেছে, যা ঠিক না। একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হতে গেলে কোম্পানির মেমোরেন্ডাম অব আটিকেলসে তার উল্লেখ থাকতে হবে, কিন্তু তা নেই। তাছাড়া মামলার এজাহারেও তার নাম নেই। নিজেরা বাঁচার জন্য গ্রেপ্তার অন্যরা জবানবন্দিতে তাকে জড়িয়েছে।”

অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান হীরন বলেন, “সাবরিনা চিকিৎসক হিসেবে সরকারি চাকরি করেও অন্যায়ভাবে একটি এনজিও মেডিকেল চালাতেন। তিনি করেনা পরীক্ষা না করে ভুয়া সার্ফিকেট ইস্যু করতেন। তার জালিয়াতির আরো তথ্য উদঘাটনের জন্য ফের তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।”

শুনানি শেষে বিচারক জামিন আবেদন নাকচ করে সাবরিনাকে আরও দুই দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন বলে আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কমকর্তা এস আই ফরিদ মিয়া জানান।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হীরন জানান, শুনানির সময় কাঠগড়ায় সাবরিনা অনেকটাই নির্বিকার দেখা যায়। বিচারকের সঙ্গে কোনো কথা তিনি বলেননি, কোনো রকম প্রতিক্রিয়াও দেখাননি।”

সাবরিনার স্বামী জেকেজি হেলথ কেয়ারের সিইও আরিফুল হক চৌধুরী বর্তমানে দ্বিতীয় দফা রিমান্ডে গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজেতে রয়েছেন। বুধবার রাতে ডিবি কার্যালয়ে তাদের মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

সাবরিনা অস্বীকার করলেও জেকেজির চেয়ারম্যান হিসেবে তার বেতন নেওয়ার তিনটি স্লিপ পুলিশের হাতে এসেছে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

সরকারি চাকরিতে থাকা অবস্থায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হয়ে সরকারি কর্মচারী বিধিমালা ভঙ্গ করায় ইতোমধ্যে সাবরিনাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আবেদন করে পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহের দায়িত্ব নিয়েছিল ওভাল গ্রুপের প্রতিষ্ঠান জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ার- সংক্ষেপে জেকেজি।

কিন্তু জুনের শেষ দিকে অভিযোগ আসে, সরকারের কাছ থেকে বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহের অনুমতি নিয়ে বুকিং বিডি ও হেলথকেয়ার নামে দুটি সাইটের মাধ্যমে টাকা নিচ্ছিল জেকেজি। নমুনা পরীক্ষা না করে রোগীদের ভুয়া সনদও তারা দিচ্ছিল।

এ বিষয়ে রাজধানীর কল্যাণপুরের একটি বাড়ির কেয়ারটেকারের অভিযোগের সত্যতা পেয়ে গত ২২ জুন জেকেজি হেলথ কেয়ারের সাবেক গ্রাফিক ডিজাইনার হুমায়ুন কবীর হিরু ও তার স্ত্রী তানজীন পাটোয়ারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে প্রতিষ্ঠানটির সিইও আরিফুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ১২ জুলাই সাবরিনাকে গ্রেপ্তার করে তিন দিনের রিমান্ডে নেয় গোয়েন্দা পুলিশ। এবার তাকে দ্বিতীয় দফা রিমান্ডে নেওয়া হল।

আরও পড়ুন