আদালতে সাহেদ কাঁদলেন, বললেন বাবার মৃত্যুর কথা

মহামারীর মধ্যে চিকিৎসার নামে প্রতারণা আর জালিয়াতির মামলায় গ্রেপ্তার বিতর্কিত ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সাহেদ রিমান্ড শুনানিতে আদালতের কাছে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেছেন, পুলিশ ও র‌্যাব তার সঙ্গে ‘অন্যায়’ করেছে।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 July 2020, 08:05 AM
Updated : 16 July 2020, 10:41 AM

আদালতে উপস্থিত রাষ্ট্রপক্ষের একজন আইনজীবী জানিয়েছেন, রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে শুনানির এক পর্যায়ে কেঁদেও ফেলেন, করোনাভাইরাসে তার বাবার মৃত্যুর কথা আদালতকে বলেন।

বুধবার সকালে ‘সীমান্ত পেরিয়ে পালানোর সময়’ সাতক্ষীরা থেকে গ্রেপ্তার সাহেদকে বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত হাজির করা হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার হাসপাতালের এমডি মাসুদ পারভেজকেও একইসঙ্গে আদালতে তোলে গোয়েন্দা পুলিশ।

তাদের দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দশ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করা হয় গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে। শুনানি শেষে মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসীম দশ দিনের রিমান্ডই মঞ্জুর করেন।

তাদের আদালতে হাজির করার সময় নিরাপত্তার কড়াকড়ি বাড়ানো হয়। সাংবাদিকদের এ সময় ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে শুনানিতে উপস্থিত আইনজীবীদের কাছ থেকে দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক আর সাহেদের বক্তব্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানতে পেরেছে। 

ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আসামি সাহেদ একসময় কাঁদতে থাকেন। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, করোনায় আমার বাবা মারা গেছে। আমরা তাকে বলি, শান্ত হোন, আগেই এটা বোঝা উচিৎ ছিল আপনার।”

গত ৬ থেকে ৮ জুলাই উত্তরা ও মিরপুরের রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে করোনাভাইরাস পরীক্ষার রিপোর্ট জালিয়তির প্রমাণ পাওয়ার পর হাসপাতাল দুটো বন্ধ করে দেয় র‌্যাব। তখন থেকেই পলাতক ছিলেন সাহেদ।

ঢাকার মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯ জুলাই রাতে মারা যান সাহেদের বাবা সিরাজুল করিম, যিনি নিজেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন। 

কোভিড-১৯ চিকিৎসার নামে প্রতারণা আর জালিয়াতিতে দেশজুড়ে আলোচিত রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদকে বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়।

আবদুল্লাহ আবু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শুনানির এক পর্যায়ে সাহেদ পানি খেতে চাইলে বিচারক পানি অন্য একজনকে আগে পান করে পরীক্ষার পর সাহেদের হাতে বোতল দিতে বলেন। আদালতের একজন কর্মচারী তখন নিজে পরীক্ষা করে বোতল সাহেদের হাতে দেন।

তার আগে রিমান্ড শুনানির সময় সাহেদ বিচারককে বলেন, তার রিজেন্ট হাসপাতালই প্রথম সরকারের আহ্বানে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় এগিয়ে এসেছিল, যখন অন্য কোনো হাসপাতাল সাড়া দিচ্ছিল না।

“হাসপাতাল থেকে করোনা আমাকে ও আমার পরিবারকে সংক্রমিত করে। আমরা সেরে উঠি। হাসপাতালের নিবন্ধনের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য সোনালী ব্যাংকে আমরা টাকাও জমা দিয়েছে। আমি কোনো অপরাধ করিনি। অন্যায়ভাবে র‌্যাব ও পুলিশ আমার হাসপালের বিভিন্ন শাখা সিলগালা করে দিয়েছে।”

সাহেদের আইনজীবী মনিরুজ্জামান রিমান্ডের বিরোধিতা করে বলেন, “কোনো কথিত ভুক্তভোগী এ মামলা করেনি, করেছে পুলিশ। অথচ তার কাছ থেকে (সাহেদ) ব্যাপকভাবে সাধারণ জনগণ উপকৃত হয়েছে। তার অনেক শুভানুধ্যায়ী রয়েছেন, যারা তার কাছে থেকে কোনো বিনিময় ছাড়া উপকৃত হয়েছেন।”

অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবদুল্লাহ আবু রিমান্ড আবেদেনের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, “এই সাহেদ বিদেশে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে। তার কারণে ইতালি থেকে বাংলাদেশি শ্রমিক, প্রবাসী কর্মীদের ফেরত আসতে হয়েছে। তিনি পরীক্ষা না করেই ভুয়া করোনা সার্টিফিকেট  দিয়েছেন। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার।

“তারা একটা চক্র। এ চক্রের আরো লোকজনের নাম ঠিকানা জানার জন্য আরো তথ্য উদ্ধারের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করতে ১০ দিনের রিমান্ডে দেওয়া হোক।”

রাষ্ট্রপক্ষের এই পিপির কথায় সমর্থন দিয়ে অতিরিক্ত পিপি কে এম সাজ্জাদুল হক শিহাব বলেন, “৬ হাজারে বেশি ভুয়া করোনা পরীক্ষার সাটিফিকেট আসামিরা দিয়েছিল। প্রত্যেক সাটিফিকেটের জন্য ৪/৫ হাজার টাকা আদায় করত তারা। তারা বড় রকমের ধড়িবাজ, প্রতারক।”

সাজ্জাদুল হক শিহাব পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এ মামলায় গ্রেপ্তার রিজেন্ট হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম শিবলীকে পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে ফের ১০ দিনের রিমান্ডে চেয়েছিল গোয়েন্দা পুলিশ।

বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসীম তাকে সাত দিনের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।

আরও খবর