ভোর সাড়ে ৫টার দিকে সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্ত থেকে সাহেদকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আনায় তাকে।
বিকালে উত্তরায় র্যাব সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে আলোচিত এই আসামিকে গ্রেপ্তার নিয়ে কথা বলেন র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।
আত্মগোপনের দিনগুলোতে সাহেদ কোথায় কীভাবে ছিলেন সে বিষয়ে র্যাবপ্রধান বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদে সে বলেছে, ঢাকাসহ কক্সবাজার, কুমিল্লা, সাতক্ষীরার বিভিন্ন অঞ্চলে আত্মগোপন করেছিল। বিভিন্নভাবে যানবাহন ব্যবহার করেছেন। কখনও হেঁটে, কখনও ট্রাকে, কখনওবা ব্যক্তিগত গাড়িতে করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গেছেন।”
এরপর সাহেদ লাপাত্তা হয়ে যান। আর র্যাবের ওই অভিযানের পর তার নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির খবরও সংবাদ মাধ্যমে আসতে শুরু করে। কিন্তু তার হদিস মিলছিল না।
সাহেদকে গ্রেপ্তার অভিযানে অংশ নেওয়া র্যাবের শীর্ষ পর্যায়ের ওই কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গ্রেপ্তার হতে পারেন এমন আঁচ পেয়ে ৭ জুলাই রাতেই সাহেদ ঢাকা ছাড়েন। নরসিংদীর মাধবদীতে তার এক কর্মচারীর বাড়িতে আশ্রয় নেন তিনি।
“পরদিন নরসিংদী শহরে দিনভর ঘোরে সাহেদ। এরপর পুনরায় ঢাকায় ফিরে আসে। রাতেই আবার চলে যায় কক্সবাজারের মহেশখালী।”
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, রিজেন্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ পারভেজের এক ভায়রার ভাই গিয়াসের গাড়িতে করে প্রথম দিন ঢাকা থেকে গেলেও পরে সাহেদ বিভিন্ন যানবাহন ব্যবহার করেন।
“মহেশখালী থেকে কুমিল্লায় ভাড়া গাড়িতে আসে। পরে সেখান থেকে একটি বড় কোম্পানির ট্রাকে করে ঢাকায় ঢুকে মানিকগঞ্জ চলে যায়।সেখান থেকে ১১ জুলাই ভাড়া করা গাড়িতে করে সাতক্ষীরা চলে যায়।
“সাতক্ষীরায় বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের বাসায় রাতের বেলা কাটিয়ে দিনের বেলা নানাভাবে ঘোরাঘুরি করে বাচ্চু মাঝির মাধ্যমে সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করছিল। তবে সীমান্ত পার করতে বাচ্চু মাঝির সাথে কত টাকার চুক্তি হয়েছিল, তা জানা যায়নি।”
এই সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়েই তিনি এর আগে একবার অবৈধভাবে ভারতে গিয়েছিলেন বলে জানান র্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান সারওয়ার বিন কাশেম।
“সে কারণে এলাকাটি তার বেশ পরিচিত।”
তিনি বলেন, আত্মগোপনে থাকার সময় সাহেদ ‘খুব দ্রুত স্থান পরিবর্তন করায়’ তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না।
গ্রেপ্তারের পর সাহেদ তাকে সংবাদমাধ্যমের সামনে না নিতে র্যাবকে অনুরোধ করেছিলেন বলে জানান একজন র্যাব কর্মকর্তা।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঢাকায় আনার পর তেজগাঁও বিমানবন্দরে তার পরিচিত এক সংবাদিককে ফটো তুলতে দেখে সাহেদ বেশ বিরক্ত হয়ে বলেছিল, সেও আমার এই অবস্থার ছবি তুলল!”
গ্রেপ্তার অভিযানে অংশ নেওয়া র্যাব কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, সাহেদ সাতক্ষীরায় মাহবুব ওরফে ইমন ওরফে পটল নামে একজনের সহায়তা নিয়ে অবস্থান করছিলেন এবং তিনিই তাকে ভারতে যেতে সহযোগিতা করছিলেন।
সাহেদসহ রিজেন্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় করা মামলায় আসামিদের মধ্যে মাহবুব নামে একজন রয়েছেন।
এই মাহবুবই কি মাহবুব ওরফে ইমন ওরফে পটল সে প্রশ্নের জবাবে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মহাপরিচালক বলেন, “আমরা মামলা করার সময় প্রাথমিকভাবে যে নাম পেয়েছি সেগুলো দেওয়া হয়েছে। তদন্ত করে বলা যাবে এজাহারভুক্ত মাহবুবই সেই মাহবুব ওরফে ইমন ওরফে পটল কি না।”
সাহেদকে ঢাকায় আনার পর সকালে উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের ২০ নম্বর সড়কের ৬২ নম্বর বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় র্যাব। সেটি সাহেদেরই আরেকটি অফিস বলে জানানো হয়েছে।
ওই অফিসের বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক আশিক বিল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা তার গোপন অফিস ছিল। সুনির্দিষ্ট কোনো অফিস ছিল এমন কিছু বলা যাবে না।”
বিকালে সাহেদকে মামলার তদন্তকারী সংস্থা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে র্যাব। এরপর সরাসরি তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে বলে গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম জানিয়েছেন।
সাহেদের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ রিজেন্ট হাসপাতালকেন্দ্রিক।
এছাড়াও সাহেদের বিরুদ্ধে আরও প্রতারণার খোঁজ বেরিয়ে আসছে এখন।
র্যাব মহাপরিচালক বলেন, রিকশাচালক, বালু ব্যবসয়ীদের সঙ্গে ব্যবসার নামে প্রতারণা ছাড়াও এমএলএম ব্যবসার নামে কোটি কোটি হাতিয়ে নেওয়ার খবরও মিলেছে।
তার বিরুদ্ধে কয়টি মামলা আছে, তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি আল মামুন।
তবে তিনি বলেন, “পঞ্চাশটির অধিক মামলা আছে, এ রকম শোনা গেছে। আমরা যাচাই করে দেখছি।”
এদিকে সাহেদ গ্রেপ্তার হওয়ার খবরে অনেকেই র্যাব কার্যালয়ে এসে অভিযোগ করেন।