এই দুই প্রতিষ্ঠানের অভিযুক্তদের আটক যথেষ্ট ভেবে নিয়ে ‘আত্মতুষ্টিতে’ ভুগলে মূল সমস্যার সমাধান হবে না বলেও মন্তব্য করেছে জার্মানিভিত্তিক দুর্নীতি বিরোধী বেসরকারি সংস্থাটি।
করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া, সরকারের কাছে বিল দেওয়ার পর রোগীর কাছ থেকেও অর্থ নেওয়াসহ নানা অনিয়মের খবর প্রকাশ্যে আসার পর রিজেন্ট হাসপাতালে দু’টি শাখা বন্ধ করে দিয়েছে র্যাব।
এ ঘটনায় করা মামলায় হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম ও নয়জন কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অন্যদিকে সরকারের কাছ থেকে বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহের অনুমতি নিয়ে বুকিং বিডি ও হেলথকেয়ার নামে দুটি সাইটের মাধ্যমে টাকা নেয়া এবং নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই ভুয়া সনদ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে জেকেজির বিরুদ্ধে। গ্রেপ্তার হয়েছেন প্রতিষ্ঠানের সিইও আরিফুল চৌধুরী ও তার স্ত্রী ডা. সাবরিনা আরিফ।
টিআইবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যেসব প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবানদের যোগসাজশে মানুষের জীবন মৃত্যু নিয়ে এমন ভয়াবহ দুর্নীতি হয়েছে, তদন্তের মাধ্যমে তাদেরকে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক সাজা নিশ্চিত করতে হবে।
রিজেন্ট হাসপাতাল ও জেকেজি হেলথ কেয়ারের মূল হোতাদের আটকের ঘটনাকে এই খাতে দুর্নীতির তদন্তের প্রথম পদক্ষেপ আখ্যায়িত করেছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।
তিনি বলেন, “দেশে কোভিড-১৯ মহামারী ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে একের পর এক দুর্নীতি, জালিয়াতি, প্রতারণা ও সাগরচুরির অভিযোগ উঠেছে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে। তার মধ্যে মাত্র দু’টি ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পেলাম যে, প্রত্যক্ষ কর্ণধারদের আটক করা হয়েছে এবং তাকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিরাট অর্জন হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে।”
এই দুই প্রতিষ্ঠানের জালিয়াতির সাথে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে ক্ষমতাবানদের একাংশের যোগসাজশ রয়েছে ইঙ্গিত করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “অভিযুক্তদের শুধু ‘প্রতারক’ হিসেবে প্রচার করে পেছনে থাকা প্রভাবশালী, যারা তাদের এই সুযোগ করে দিয়েছে, তাদের আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে কিনা সে প্রশ্ন একেবারে অবান্তর বলা যাচ্ছে না।”
দুই প্রতিষ্ঠানের করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার অনুমোদন নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করা নিয়েও সমালোচনা করেছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।
“স্বাস্থ্য খাতের যথেচ্ছ দুর্নীতির দায়দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে এবং টিআইবি মনে করে এখানে কাউকে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।”
রিজেন্ট ও জেকেজির কেলেঙ্কারি দিয়ে দুর্নীতির অন্য সব অভিযোগ থেকে জনগণের মনোযোগ সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে কিনা- এমন শঙ্কার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে এমন একটি সংস্কৃতি দাঁড়িয়ে গেছে যে, দুর্নীতির অভিযোগে হাতেগোনা দুই একজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং তদন্তকারী সংস্থাগুলো তৎপর হয়।
“অথচ দুর্নীতির মহাসমুদ্রে এইসব চুনোপুটিরা ডুবে থাকা হিমশৈলের চূড়ামাত্র, দৃশ্যপট থেকে যাদের সরিয়ে দেওয়ায় দুর্নীতির পিছনের মূল সংঘবদ্ধ চক্রটির কোনো ক্ষতি হয়না, বরং তাদের হাতেই দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়। চুনোপুঁটি নিয়ে টানাটানির সুযোগে বড় বড় রুই কাতলারা আড়ালেই থেকে যায়, আর দুর্নীতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা হয়।”
এজন্য দুই-তিনজন অভিযুক্তকে আটকের ঘটনার মধ্যে দিয়ে সমাপ্তি না টেনে তাদের ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠার পেছনের প্রভাবশালী কুশীলব, সুরক্ষাদাতা, সমর্থনদাতা এবং সুবিধাভোগীদেরও অবিলম্বে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন ইখতেখারুজ্জামান।