চলে গেলেন ভাষাসংগ্রামী ডা. সাঈদ হায়দার

ভাষা সংগ্রামী ও প্রথম শহীদ মিনারের অন্যতম উদ্যোক্তা ডা. সাঈদ হায়দার মারা গেছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 July 2020, 02:57 PM
Updated : 15 July 2020, 09:48 PM

রাজধানীর উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার বিকালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বলে হাসপাতালটির ব্যবস্থাপক তোফাজ্জল হোসেন জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ডা. সাঈদ হায়দার গত জুন মাসে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তারপর করোনাভাইরাস থেকে সেরে ওঠার পর তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন।

“এরপর তাকে ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আজকে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তিনি মারা গেছেন।”

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় সাঈদ হায়দার ঢাকা মেডিকেল কলেজের এমবিবিএসের শিক্ষার্থী ছিলেন। ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে রাজপথে রক্ত ঝরার দুই দিন পর ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা প্রথম শহীদ মিনার গড়ে তুলেছিলেন। ওই শহীদ মিনারের মূল নকশাকার ছিলেন বদরুল আলম। তাকে সহযোগিতা করেছিলেন সাঈদ হায়দার। পরে সেই শহীদ মিনার পাকিস্তান সেনাবাহিনী ধ্বংস করে দেয়।

সাঈদ হায়দার ১৯২৫ সালে পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস এবং ১৯৫৮ সালে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাবলিক হেলথে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা নেন। তিনি ইপিআইডিসির চিফ মেডিকেল অফিসার ছিলেন। চাকরির ধারাবাহিকতায় বিটিএমসি থেকে ১৯৮৩ সালে অবসর গ্রহণ করেন।

পেশাগত কাজের অবসরে বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখি করতেন সাঈদ হায়দার। তার প্রথম বই ‘রোগ নিরাময় সুস্থ জীবন’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে। বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যের পটভূমিতে তার লেখা ‘লোকসমাজ চিকিৎসাবিজ্ঞান’ নামের বৃহদাকারের বইটি বাংলা একাডেমি তিনটি খণ্ডে প্রকাশ করে। তার আত্মজৈবনিক গ্রন্থ ‘পিছু ফিরে দেখা’।

ভাষা সংগ্রামে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ সরকার সাঈদ হায়দারকে ২০১৬ সালে একুশে পদকে ভূষিত করে। তিনি ছিলেন একুশের চেতনা পরিষদের সহ-সভাপতি।

সাঈদ হায়দারের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেছেন, “ডা. সাঈদ হায়দারের মৃত্যুতে দেশ একজন প্রকৃত নিবেদিতপ্রাণ ভাষা সংগ্রামীকে হারাল, যা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। ভাষা আন্দোলন এবং মাতৃভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠায় তার অবদান জাতি আজীবন কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করবে।”