ঢাকার মধ্য দিয়েও নৌ চলাচল সম্ভব: প্রতিমন্ত্রী

নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, সরকারের নেওয়া মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে ঢাকার চারপাশের নদী ও খালগুলোর গভীরতা ফিরিয়ে এনে ভবিষ্যতে রাজধানীর ভেতর দিয়েও নৌ চলাচল সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 July 2020, 02:21 PM
Updated : 13 July 2020, 02:22 PM

সোমবার বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদের তীররক্ষা প্রকল্প পরিদর্শন এবং বিরুলিয়ায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

সরকারের এই ‘ড্রেজিং মাস্টার প্ল্যান’ এর আওতায় দেশের ১৭৮টি নদী খনন করে প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ চলাচলের উপযোগী করা হবে।

নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ওই মহা পরিকল্পনায় প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে ‘চূড়ান্ত অনুমোদন’ দিয়েছেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে, সিটি করপোরেশন, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এ মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে কাজ করব।

“ঢাকার চারপাশে চারটি নদীকে ঘিরে যে খালগুলো আছে, যেগুলো বিভিন্ন দিকে বেরিয়ে গেছে বা নদীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, সেগুলো উদ্ধার করে নব্য ফিরিয়ে আনার এ মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন হলে শুধু ঢাকার চারপাশে নৌ চলাচল নয়; ঢাকার মধ্য দিয়েও নৌ চলাচল সম্ভব বলে আমি মনে করি।”

২০১৯ সালের এপ্রিলে এ সংক্রান্ত কমিটির সভায় দশ বছর মেয়াদী এ মহাপরিকল্পনার খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। এরপর চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও সংসদে ওই পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন।

সোমবার বিরুলিয়ায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, "নদীকে ঘিরে এ ব-দ্বীপ। নদীমাতৃক বাংলাদেশকে আমরা পৃথিবীর বুকে একটি মর্যাদার জায়গায় নিয়ে যেতে চাই। সে জায়গা থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শত বছরের ডেল্টা প্ল্যান দিয়েছেন। একটি কাঠামোও তৈরি করেছেন।”

প্রতিমন্ত্রী সকালে সদরঘাট থেকে নদীপথে ভ্রমণ করে নদীতীর পরিদর্শন করেন এবং বিরুলিয়া ব্রিজের পাশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।

তিনি বলেন, নদীগুলোকে ঘিরে যেন মানুষের জীবন জীবিকার ব্যবস্থা হয় সেজন্য সরকার বিভিন্ন প্রকল্প নিয়েছে। সেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে প্রথমে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে হয়েছে। আর সে কাজে অনেক চ্যালেঞ্জেরও মুখোমুখি হতে হয়েছে।

"নদীর দুই ধারে সীমানা পিলার ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে গেছে। কি ওয়াল ও ওয়াক ওয়ে তৈরির কাজ চলছে। প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করে একটি প্রকল্প জমা দিয়েছি। এর অনুমোদন হলে আমরা এ কাজটি আরো গতিশীল করতে পারব। ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে এ কাজটি সমাপ্ত করতে পারব।"

ঢাকার চারপাশ ঘিরে থাকা চার নদীসহ দেশের সকল নদ-নদী ও জলাশয় রক্ষায় বিভিন্ন সময়ে আদালতের রায় এলেও দখল ও দূষণ বন্ধ করা যাচ্ছিল না। 

এই প্রেক্ষাপটে গতবছর মার্চে এক রিট মামলার রায়ে ঢাকার তুরাগ নদকে ‘জীবন্ত সত্তা’ ঘোষণা করে দেশের সকল নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয়কে রক্ষার জন্য জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে ‘আইনগত অভিভাবক’ ঘোষণা করে হাইকোর্ট

বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘মাইলফলক’ ওই রায়ে নদী দখলকারীদের নির্বাচন করার ও ঋণ পাওয়ার অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। নদী রক্ষা কমিশন যাতে নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয় রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে, সেজন্য আইন সংশোধন করে ‘কঠিন শাস্তির’ ব্যবস্থা করতে বলা হয় সরকারকে।

পাশাপাশি জলাশয় দখলকারী ও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীদের তালিকা প্রকাশ, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেশের সব নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয়ের ডিজিটাল ডেটাবেইজ তৈরি এবং সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানায় নিয়মিত সচেতনতামূলক কর্মসূচি নিতে বলা হয় হাই কোর্টের রায়ে।

রাজধানীর চারপাশে নদীর ‘৯০ শতাংশ জায়গা’ ইতোমধ্যে অবৈধ দখলমুক্ত হয়েছে জানিয়ে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, "নদী দখলের সঙ্গে অনেক ধরনের ক্ষমতাবান লোকজন জড়িত ছিল। আমরা সেগুলোকে কখনোই আমলে নিইনি। দখলদারকে আমরা দখলদার হিসেবেই দেখেছি।

“আমরা বলেছিলাম, উদ্ধার করা জায়গায় বৃক্ষরোপণ করব। একটা সবুজ বেষ্টনী করার পরিকল্পনা নেব। আজকে আমরা এটি করতে পেরেছি। সবুজ বেষ্টনী দিয়ে সুন্দর পরিবেশ তৈরি করতে চাই। সীমানা পিলারসহ অন্যান্য কর্মসূচিও চলমান থাকবে।”

নদীর পানি দূষণমুক্ত করতে আদালতের রায়ের বিষয়ে একজন সাংবাদিক দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, "উচ্চ আদালতের অনেক রায় এখনো পেন্ডিং আছে। বাস্তবায়ন হয় নাই। নদীর পানি দূষণমুক্ত করার বিষয়টি সরকার অনুভব করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এটা অনুভব করেন।”

এ বিষয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে জানিয়ে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “কীভাবে নদীর পানি দূষণমুক্ত করা যায়, তার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। রাতারাতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব না। দীর্ঘদিনের একটা অন্ধকার… আছে। অন্ধকার থেকে আমরা আলোর পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।"

নদীর জায়গায় ঢাকার এক এমপির বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে এক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে একটি অভিযান চালানো হয়েছে।

“যাদেরকে পাওয়ার প্ল্যান্ট দেওয়া হয়েছিল, তাদেরকে কিন্তু নদীর জায়গা দখল করার জন্য পাওয়ার প্ল্যান্ট দেওয়া হয়নি। নদী দখল করে পাওয়ার প্ল্যান্ট করবে এমন চুক্তিও কারো সঙ্গে করা হয়নি। কাজেই যে যেই কাজ করবে, তাকে সেই ফল ভোগ করতে হবে।”

নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অনল চন্দ্র দাস, বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম মোহাম্মদ সাদেক এবং প্রকল্প পরিচালক নুরুল হক উপস্থিত ছিলেন।