বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ফের প্লাবিত নিম্নাঞ্চল

ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করায় দেশের বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 July 2020, 08:17 AM
Updated : 12 July 2020, 09:35 AM

বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, নাটোর, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলার বন্যা পস্থিতির অবনতির শঙ্কা রয়েছে।

এসব এলাকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিনিধিরা জানান, গেল সপ্তাহে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির মধ্যে দুর্গতদের অনেকে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়িঘরে ফিরেছিল।

হঠাৎ দুদিনের ঢলে ফের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করায় ফের দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। পানিবন্দী এসব মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে প্রস্তুতি অব্যাহত রেখেছে স্থানীয় প্রশাসন।

বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্র বলছে, নদ-নদীর ১০১টি পর্যবেক্ষণ পয়েন্টের মধ্যে ৭৬টি পয়েন্টেই পানি বেড়েছে। এর মধ্যে বিপদসীমার উপরে বয়ে যাচ্ছে ১৬টি পয়েছে। ২৩ স্টেশনে পানি কমেছে; ২টি পয়েন্টে অপরিবর্তিত রয়েছে।

কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিককার নদ-নদীর পানি বাড়ছে। আগামী ৭২ ঘণ্টা তা অব্যাহত থাকবে।

উজানের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে নীলফামারীতে তিস্তার পানি শনিবার বিপদসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ডিমলা উপজেলার পূর্ব খড়িবাড়ি গ্রামে কোমড় সমান পানি।

“তিস্তা, যমুনা, সুরমা, সারিগোয়াইন, যদুকাটা ও গুড় নদীর সাতটি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় বিরাজমান বন্যা পস্থিতির অবনতির শঙ্কা রয়েছে।”

গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সিকিম, আসাম, মেঘলায় ও ত্রিপুরা অঞ্চলে কোথাও কোথাও ভারি বর্ষণ হয়েছে।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আহসান হাবিব নীলু জানান, কুড়িগ্রামের নয় উপজেলার ৫৫ ইউনিয়নের ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দী রয়েছে। এক সপ্তাহ যেতে না যেতে না যেতেই ফের বন্যার মুখোমুখি হয়েছে এ অঞ্চল। রোববার থেকে নিম্নাঞ্চলও প্লাবিত হতে শুরু করে। এতে দুর্ভোগও বাড়তে শুরু করেছে মানুষের।

জামালপুর প্রতিনিধি লুৎফুর রহমান জানান, এক দফা বন্যার ক্ষত না শুকাতেই আরেকটি বন্যার দুর্ভোগ শুরু হয়েছে। নিম্নাঞ্চলে দুর্গতদের আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ঘরে ফিরেছিল অনেকে। এখন নতুন করে বন্যার বিস্তার ঘটছে। এতে গত দুয়েকদিনের মধ্যে যারা ঘরে ফিরছিলেন, তারা ফের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এ জেলার সাতটি উপজেলার ৪৯টি ইউপির প্রায় ৯০ হাজারেরও বেশি পরিবার দুর্ভোগে বন্যায়।

উজানের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে নীলফামারীতে তিস্তার পানি শনিবার বিপদসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ডিমলা উপজেলার পূর্ব খড়িবাড়িতে নৌকা নিয়ে চলাচল করছেন গ্রামবাসীরা।

নীলফামারী প্রতিনিধি বিজয়
চক্রবর্তী
কাজল জানান, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছিল, এখনও তা অব্যাহত আছে। স্থানীয় প্রশাসন বন্যার দুর্ভোগ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছে।

সিলেট প্রতিনিধি মনজুর আহমেদ জানান, আকস্মিক বন্যায় এক দফা নিম্নাঞ্চলে ক্ষতি হয়েছে। উজানের পানির ঢল বাড়লে পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কা করা হচ্ছে। পাঁচটি উপজেলার ২৭টি ইউপির নিম্নাঞ্চল উপদ্রুত ছিল। প্রশাসন বন্যার্তদের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ ও ত্রাণ সরবরাহ করতে।

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি মাহমুদুর রমহান তারেক জানান, উজানের ঢল আর টানা বর্ষণে দুই সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বার সুনামগঞ্জ শহর সুরমার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। 

শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সুরমা নদীর পা‌নি উঠে শহরের উত্তর আর‌পিননগর, তেঘ‌রিয়া, উ‌কিলপাড়া, কা‌জিরপয়েন্ট,‌ষোলঘর, ধোপাখা‌লি, নবীনগর, মধ্যবাজার, জেল রোড ও লঞ্চঘাট এলাকা প্লাবিত হয়েছে। 

এসব এলাকায় সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। বহু ঘরবা‌ড়িতে পা‌নি উটেছে। বহু মানুষ পা‌নিবন্দি হয়েছে।

এর আগে গত ২৭ জুন সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে শহরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছিল।

দুর্যোগ ব্যবস্থা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ন্যাশাল ডিজাস্টার রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন সেন্টার-এনডিআরসিসি জানায়, রোববার পর্যন্ত এবারের বন্যায় ১৫ জেলার ৭২টি উপজেলার ৩৯৩টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল উপদ্রুত হয়েছে।

এসব এলাকায় ২ লাখ ৭৩ হাজার লোক পানিবন্দি  এবং ১৩ লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ-সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে এবং মজুদও আছে।

৭৩৮টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ৮ হাজার নারী পুরুষ এবং আড়াই হাজার শিশু আশ্যয কেন্দ্রে রয়েছেন।

বন্যা কবলিত এলাকায় ৩৮৮টি মেডিক্যাল টিম গঠন এবং ১৭৩টি মেডিক্যাল টিম চালু রয়েছে।

সমুদ্রবন্দরে সতর্কতা ভারি বর্ষণের আভাস

আষাঢ়ের শেষ সময়ে এসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারি বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে।

আবহাওয়াবিদ আফতাব উদ্দিন জানান, মৌসুমী বায়ু সক্রিয় রয়েছে। এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্রবন্দরের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়ার শঙ্কার রয়েছে। এ জন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া মডেলের তথ্য তুলে ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ ও আশপাশের প্রদেশে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জুলাইয়ের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাস প্রতিবেদনে ইতোমধ্যে জানায়, ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ১২ জুলাই (সোমবার)  কিছু কিছু স্থানে পানি বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হতে পারে।

দ্বিতীয় দফার বন্যায় কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত। যাত্রাপুরের গারুহারা থেকে শনিবার তোলা ছবি।

এ সময় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, পাবনা, নওগাঁ ও নাটোর জেলার নিম্নাঞ্চললে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

পানি তিন-চার দিন বাড়তে থাকলে লালমনিরহাট, নীলফামারী ও রংপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে স্বল্প মেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পাহাড়ি ঢলে মেঘনা অববাহিকায় চার-পাঁচদিন নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকলে সুনামগঞ্জ, সিলেট ও নেত্রকোণার নিম্নাঞ্চলে স্বল্প মেয়াদী বন্যা সৃষ্টি হতে পারে।

কোথাও কোথাও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। উজানের ভারি বর্ষণের উপর নির্ভর করে বন্যা পরিস্থিতি কোথাও কোথাও জুলাইয়ের চতুর্থ সপ্তাহ পযন্ত দীর্ঘায়িত হতে পারে।

জুনের চতুর্থ সপ্তাহে মৌসুমী বায়ু বেশ সক্রিয় থাকায় ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে স্বল্পমেয়াদী এক দফা বন্যার সৃষ্টি হয়।