দুবাইয়ে নারী পাচার: চক্রের ‘হোতা’সহ গ্রেপ্তার ৩

চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে দুবাইয়ে পাচার করে ‘যৌনকর্মে বাধ্য করার’ অভিযোগে দেশে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের একজন সেখানে চারটি হোটেলের মালিকানায় রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 July 2020, 07:44 AM
Updated : 12 July 2020, 08:57 AM

তদন্তকারীরা বলছেন, মানব পাচারকারী এই চক্রটি গত আট বছরে সহস্রাধিক তরুণীকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাচার করেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছেন তারা।

রোববার সিআইডির এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্রেপ্তার তিনজনের মধ্যে ৪৫ বছর বয়সী মো. আজম খান এই চক্রের ‘হোতা’। ৪৫ বছর বয়সী আলামিন হোসেন ডায়মন্ড এবং ৩৫ বছর বয়সী আনোয়ার হোসেন ময়না তার সহযোগী।

সিআইডির ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, দুবাইয়ের ফরচুন পারল হোটেল অ্যাণ্ড ড্যান্স ক্লাব, হোটেল রয়্যাল ফরচুন, হোটেল ফরচুন গ্র্যান্ড এবং হোটেল সিটি টাওয়ারের অন্যতম মালিক আজম।

“বিভিন্ন ক্লাব ও হোটেলে কাজ দেওয়ার নামে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অল্পবয়সী সুন্দরী তরুণীদের পাচার করে দুবাইয়ে নিত সে। তারপর সেখানে তাদের যৌনকর্মে বাধ্য করা হত।”

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আজমের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে, সেখানে তিনি একসময় জামায়াতের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে ১৫টি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে ছয়টি হত্যা মামলা।

সিআইডির সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আলামিন ও এই চক্রের অন্যরা নাচের প্রশিক্ষণ দিয়ে তরুণীদের বিদেশে মোটা অঙ্কের বেতনে কাজ পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখাতেন। পরে আজমের মাধ্যমে তাদের দুবাইয়ে পাঠানো হত।

“সেখানে পৌঁছানোর পর আজমের মালিকানাধীন হোটেলগুলোতে আটকে রেখে তাদের ওপর যৌন নিপীড়ন ও নির্যাতন চালানো হত। মাসে ৫০ হাজার টাকা বেতনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়ে গেলেও এ চক্রটি ভিকটিমদের কোনো টাকা দেয়নি।”

এসব ঘটনার বেশ কিছু অডিও ক্লিপ সিআইডির হাতে এসেছে জানিয়ে ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, “এসব অপকর্মের কারণে আমিরাত সরকার আজমকে দূতাবাসের মাধ্যমে দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। দেশে এসে সে আত্মগোপনে চলে যায়, পরে নতুন করে পাসপোর্ট করে পাশের দেশ হয়ে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল।”

দূতাবাসের মাধ্যমে দেশে পাঠানোর পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন তাকে গ্রেপ্তার করেনি জানতে চাইলে ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, “আমাদের ইনফরমেশন পেতে দেরি হয়েছে। এর মধ্যেই সে দেশে এসে আত্মগোপনে চলে যায়। তবে পরে দূতাবাস আমাদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছে।”

গত ২ জুলাই লালবাগ থানায় সিআইড বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানে আজমকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। ঢাকার পাশের এক জেলা থেকে তাদের তিনজনকে সম্প্রতি গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এই চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তার করার জন্য এর বেশি তথ্য দিতে আপাতত রাজি নন সিআইডি কর্মকর্তারা।