দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে এটা ব্যবহারের মাধ্যমে কোভিড-১৯ চিকিৎসা ব্যবস্থা আরও সহজ হবে এবং চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার ‘হারও কমে আসবে’ বলে দাবি করেছেন তারা।
গবেষক দলের তত্ত্বাবধায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল ফিজিক্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক খোন্দকার সিদ্দিকী-ই-রব্বানী শনিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিশেষ এই যন্ত্র তৈরির ঘোষণা দেন।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান ও বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়াসহ সংশ্লিষ্ট গবেষকরা।
এছাড়া করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীকে আনা-নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সেও এটি স্থাপন করা যাবে বলে জানান গবেষকরা।
এরইমধ্যে বিএসএমএমইউতে এটি প্রদর্শিত হয়েছে এবং সেখানকার ইনটেনসিভ কেয়ার বিভাগে এটি ব্যবহার ও গবেষণার জন্য ইনস্টিটিউশনাল রিভিউ বোর্ড অনুমোদন করেছে বলে জানান গবেষকরা।
“সেখানকার চিকিৎসকরা এটিকে খুবই সময়োপযোগী ও প্রয়োজনীয় বলে মন্তব্য করেছেন,” বলেন একজন গবেষক।
গবেষকদের দাবি, স্বল্প খরচে ও দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা এই ক্যানোপি বিশ্বের অন্যান্য ক্যানোপি থেকে ব্যতিক্রম ও ‘উন্নত’।
তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, বিদেশের যন্ত্রে ক্যানোপির ভেতরের বাতাসের জীবাণু ও ভাইরাসকে বিশেষ ধরনের হেপাফিল্টার দিয়ে যতটা সম্ভব আটকে রেখে পরিশোধিত বাতাস আবার হাসপাতালের কক্ষে ছেড়ে দেওয়া হয়। আর এইটায় হেপাফিল্টারের সাথে বাড়তি আছে আলট্রাভায়োলেট আলোর প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে প্রথমেই সব জীবাণু ও ভাইরাস ধ্বংস করে ফেলা হয়।
“তাই এর গুণগত মান একই উদ্দেশ্যে তৈরি পৃথিবীর অন্যান্য যে কোনো যন্ত্র থেকে উন্নত। এর দামও হবে বিদেশের একই ধরনের যন্ত্রের থেকে অনেক কম। তাছাড়া দেশে তৈরি বিধায় সহজে মেরামতের গ্যারান্টিও থাকবে,” বলেন অধ্যাপক খোন্দকার সিদ্দিকী-ই-রব্বানী।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর গত এপ্রিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল ফিজিক্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের ল্যাবে এটা নিয়ে আমরা কাজ শুরু করি।এ কাজে আমাদের পরামর্শ ও উৎসাহ দিয়েছিলেন প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। তিনি মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আমাদের এ কাজের খোঁজ-খবর নিয়েছিলেন। অবশেষে আমরা এটি উদ্ভাবনে সফল হয়েছি।”
প্রতিটি ‘নেগেটিভ প্রেসার আইসোলেশন ক্যানোপি’ তৈরিতে প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার টাকা খরচ হবে বলে জানান তিনি।
এই কাজে সম্পৃক্ত বিএসএমএমইউর অ্যানেসথেসিয়া, অ্যানালজেসিয়া এবং ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম আখতারুজ্জামান বলেন, “যে কোনো দেশ যখন বেসিক সায়েন্সকে গবেষণার মাধ্যমে ক্লিনিকে নিয়ে যায় তখন দেশ অনেক এগিয়ে যায়। এক্ষেত্রে এ উদ্ভাবন দেশের এই ক্রান্তিকালে আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফসল।”
সংবাদ সম্মেলনে সশরীরে উপস্থিত হয়ে বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, “আপনারা জানেন, এই কোভিডে আমরা প্রায় ৬৫ জন চিকিৎসককে হারিয়েছি। এক হাজারেরও বেশি স্বাস্থ্যসেবী আক্রান্ত হয়েছেন। কোভিড-১৯ মারামারিতে এই উদ্ভাবন দেশের হাসপাতালগুলোতে ব্যবহৃত হলে অনেক মানুষের জীবন রক্ষা এবং সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে দায়িত্বরত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তায় অনেক ভূমিকা রাখবে।”
“আমরা এই কোভিড-১৯ মহামারী পরিস্থিতিতে জাতির পাশে থাকতে চেষ্টা করেছি, যার অংশ হিসেবে এই উদ্ভাবন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সব সময় জাতির সংকটে এভাবে পাশে থাকবে।”
সংশ্লিষ্টরা জানান, এই গবেষণায় সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্স প্রোগ্রাম থেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ওষুধ কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মা এ প্রকল্পে কিছু অর্থ সহায়তা দিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল ফিজিক্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগ ও বিএসএমএমইউর গবেষকরা ছাড়াও এ প্রকল্পে সম্পৃক্ত ছিলেন এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিপল-ই বিভাগের শিক্ষক প্রকৌশলী রাকিব সাখাওয়াত হোসেন এবং অংশীদারবিহীন সামাজিক প্রতিষ্ঠান ‘বাইবিট লিমিটেড’র গবেষক প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান।