বৈশ্বিক সঙ্কটে নারীদের সুরক্ষার আহ্বান সায়মা হোসেনের

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে নারীদের সুরক্ষার জন্য সহজ পদ্ধতিতে না গিয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণের সংকল্প করতে হবে বলে মনে করেন অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ হোসেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 July 2020, 04:07 PM
Updated : 9 July 2020, 04:28 PM

বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা ’ইন্টার প্রেস সার্ভিসে’ লেখা এক মন্তব্য কলামে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এই বিশেষজ্ঞ লিখেছেন, “কোভিড-১৯ মহামারী আমাদের সেই শিক্ষাই দেয়, কোনো সমস্যার সমাধান যতটা সহজ বলে ভাবা হয়, আসলে ততটা সহজ নয়।”

একই সমাধান দিয়ে সারা পৃথিবীর নারীদের বৈষম্য দূর করার আশা না দেখার পরামর্শ দিয়ে তিনি লিখেছেন, “বৈশ্বিক সঙ্কটের মধ্যে নারীদের সুরক্ষার জন্য এমন সমাধান দরকার, যা তৈরি হবে তারা যে সংস্কৃতিকে ধারণ করে সেটার ভিত্তিতে। এক্ষেত্রে যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোতে তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেটাকেও গুরুত্ব দিতে হবে।

”এ বিষয়কে কার্যকরভাবে তুলে ধরার জন্য আমাদেরকে কেবল সহজ প্রক্রিয়ার দিকে না গিয়ে সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণের সংকল্প নিতে হবে। নারীসহ সমাজের সব ক্ষতিগ্রস্ত অংশ এবং আমাদের বহুমুখী সমাজ ব্যবস্থার নিরিখে হবে সেই সমাধান।”

এটা ‘গাছের পাকা ফলটি পেড়ে নেওয়ার’ মতো সহজ বিষয় নয়, বরং ‘বুনো ষাঁড়ের শিংয়ে লাগাম পরানোর’ মতো, বলছেন সায়মা।

দ্য কোয়াইট সার্ভাইভার্স অফ এ গ্লোবাল প্যানডেমিক’ শিরোনামের ওই কলামে নারীদের দুর্দশার নানাচিত্র তুলে ধরেন অটিজম বিষয়ক বাংলাদেশের জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি সায়মা।

করোনাভাইরাসের এই সময়ে নারীদের প্রতি বৈষম্যের চিত্র প্রকটভাবে ধরা দিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রীকন্যা।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে বিশ্বব্যাপী নারীদের পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি লেখেন, “বৈশ্বিক মহামারীর এই সময়ে নারী-পুরুষের বৈষম্যের প্রকটতা যখন তীব্রভাবে দৃশ্যমান হয়েছে, তখন এসব বিষয়ের আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ।

”গত কয়েক মাসে বিশ্বব্যাপী নারী নির্যাতনের পরিমাণ ব্যাপকমাত্রায় বেড়েছে। অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করা নারীরা ব্যাপক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন। বিশেষ করে হিসাব কিংবা সহযোগিতার বাইরে থাকায় অর্থনৈতিক ও মানসিকভাবে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তারা।”

সায়মা হোসেন লিখেছেন, “নারী, পুরুষ আর তৃতীয় লিঙ্গের মধ্যে ভারসামহীনতা প্রত্যেক দেশে থাকলেও তার প্রকাশ ভিন্ন হয়ে থাকে। এর কারণে সবখানে এক সমাধান কার্যকর হবে না।”

অনেক নারী নেতা থাকার পরে নারীরা নীরবে এখনো বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে মত দিয়েছেন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন।

“আইনি, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুরক্ষার দিকগুলো আমরা কার্যকরভাবে খতিয়ে দেখিনি— যা এখন আমাদের স্বীকার করা প্রয়োজন।

”অনেক নারী রাজনৈতিক নেতা থাকলেও আমাদের সাধারণ নারীরা এখনো নীরবে কষ্টে ভুগছেন। কারণ নিজেদের মনের কথা তুলে ধরার সুযোগ কিংবা স্বাধীনভাবে নিজের স্বপ্ন ছোঁয়ার উপায় তাদের নেই।”

সায়মা হোসেন তার লেখায় বাংলাদেশের নারীদের প্রসঙ্গও তুলে ধরেছেন।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান-অধিকারের যে বিধান দিয়েছেন, সেটির ফলাফল তুলে ধরতে ১৫ বছর আগে নিজের মাস্টার্সের থিসিসের প্রসঙ্গে টানেন বঙ্গবন্ধুর নাতনি সায়মা হোসেন।

তিনি লেখেন, নারীর মানসিকতা নিয়ে করা অপ্রকাশিত ওই থিসিসে উঠে আসে, নারীরা জানিয়েছেন তারা চাকরির চেয়ে শিক্ষাকে গুরুত্ব দেন এবং আয়ের উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ নেই বলে জানিয়েছেন কর্মজীবী নারীরা।

অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে গিয়ে পরিবার ও সমাজের সঙ্গে একজন নারীকে বড় রকমের লড়াই করতে হয় বলে লেখায় উল্লেখ করেন বেসরকারি সংস্থা সূচনা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন সায়মা।

তৈরি পোশাক খাতের মাধ্যমে নারীদের এগিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি লেখেন, “উল্লেখযোগ্য ও প্রভাবশালী এই পরিবর্তন দেখলে বোঝা যায়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির পেছনের কারিগর নারীরা। সেটি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে হোক কিংবা দৈনিক উপার্জনকারী হিসাবে।

”তবুও প্রশ্ন থেকে যায়, এমন অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ, শিক্ষার সুযোগ এবং কর্মসংস্থান নারীদের প্রতি সামাজিক মনোভাবে পরিবর্তন আনতে পেরেছে কি-না?”

বাংলাদেশে সরকার প্রধান, সংসদের স্পিকার, মন্ত্রিপরিষদে এবং বিচারবিভাগসহ অন্যান্যখাতে নারীদের অংশগ্রহণের কথাও তুলে ধরেন তিনি। এছাড়া নারী নির্যাতন, বাল্য বিয়ে রোধসহ বিভিন্ন নারীর সুরক্ষায় বিভিন্ন আইন করার কথাও তুলে ধরেন তিনি।