রিজেন্ট কেলেঙ্কারি: সাহেদের ভায়রাকে জিজ্ঞাসাবাদ

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে চিকিৎসার নামে প্রতারণার ঘটনায় ঢাকার রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মোহাম্মদ সাহেদের ভায়রা মোহাম্মদ আলী বশিরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র‌্যাব।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 July 2020, 10:11 AM
Updated : 9 July 2020, 10:11 AM

র‌্যাব সদরদপ্তরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক আশিক বিল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বুধবার রাতে বানানী থেকে নাটক প্রযোজনার প্রতিষ্ঠান ‘টেলিহোমের’ মালিক মোহাম্মদ আলী বশিরকে র‌্যাব সদরদপ্তরের নেওয়া হয়।

“জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”

বৃহস্পতিবার সকালে রিজেন্ট হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম ওরফে তারেক শিবলীকে (৩৩) রাজধানীর নাখালপাড়া থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

আশিক বিল্লাহ তখন বলেছিলেন, “তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এ ঘটনার মূল আসামি রিজেন্টের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদকে ধরতে বিভিন্নস্থানে অভিযান চলছে।”

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পরপরই গত মার্চে রিজেন্ট হাসপাতালকে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট করেছিল সরকার। যদিও তাদের হাসপাতাল চালানোর অনুমতির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল আগেই।

সেখানে নমুনা পরীক্ষা না করে করোনাভাইরাসের ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার বেশ কিছু অভিযোগ পাওয়ার পর র‌্যাব খোঁজ নিয়ে জানতে পারে সরকারি প্রতিষ্ঠানের সিল ও প্যাড নকল করে সেসব রিপোর্ট তৈরি করা হলেও সেসব স্বাস্থ্যকেন্দ্র এসব নমুনা পরীক্ষা করেনি, রিপোর্টও দেয়নি।

ওই অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার, মঙ্গল ও বুধবার রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখা এবং রিজেন্ট গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালায় র‌্যাব। অভিযানে বেশ কিছু অনুমোদনহীন টেস্ট কিট এবং করোনাভাইরাসের ভুয়া রিপোর্ট পাওয়ার কথা জানানো হয় র‌্যাবের পক্ষ থেকে।

অভিযানের প্রথম দুই দিনে উত্তরা থেকে মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে মঙ্গলবার রাতে রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে অনিয়মের ও প্রতারণার অভিযোগ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয় রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায়।

ওই মামলায় বলা হয়, প্রায় ছয় হাজার ব্যক্তির কোভিড-১৯ পরীক্ষার নামে দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আয় করলেও বিনামূল্যে চিকিৎসার কথা বলে এক কোটি ৯৬ লাখ টাকার একটি বিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জমা দিয়েছে রিজেন্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

“এই হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ নিজেকে ক্লিন ইমেজের ব্যক্তি বলে দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে সে একজন ধুরন্ধর, অর্থলিপ্সু ও পাষণ্ড।”

দণ্ডবিধির ৪০৬/ ৪১৭/৪৬৫/৪৬৮/৪৭১ ও ২৬৯ ধারা উল্লেখ করে মামলার এজাহারে বলা হয়, কোভিড-১৯ রোগীদের টেস্ট রিপোর্ট নিয়ে প্রতারণা, বিশ্বাস ভঙ্গ জাল-জালিয়াতি, ভুয়া রিপোর্ট তৈরি, ভূয়া রিপোর্টকে খাঁটি বলে চালিয়ে দেওয়া এবং কোভিড-১৯ রোগ সংক্রমণের বিস্তারে ভূমিকা রাখার অপরাধ করেছে আসামিরা।

এ মামলায় যে সব ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তার সর্বোচ্চ শাস্তির ধারা হচ্ছে দণ্ডবিধির ৪৬৮। প্রতারণা করার উদ্দেশে জালিয়াতির এ ধারায় সর্বোচ্চ সাত বছর সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং সেই সঙ্গে জরিমানাও হতে পারে। এ ধারায় শুধু অর্থদণ্ডের কথা উল্লেখ নেই। অভিযোগ প্রমাণিত হলে শারীরিক সাজা খাটতেই হবে।

সাহেদের পাশাপাশি পালিয়ে থাকা তার এপিএস পলাশ (২৮), মাসুদ পারভেজ (৪০), জনসংযোগ কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম শিবলী (৩৩), আব্দুর রশিদ খান জুয়েল (২৯), শিমুল পারভেজ (২৫), দীপায়ন বসু (৩২), মাহবুব (৩৩) ও সৈকতকে (৩৯) মামলায় আসামি করা হয়েছে।

র‌্যাবের অভিযানে আটক আহসান হাবীব (৪৫), আহসান হাবীব হাসান (৩৯), হাদিম আলী (২৫), কামরুল ইসলাম (১৭), রাকিবুল ইসলাম সুমন (৩৯), অমিত বনিক (৩৩), আব্দুস সালাম (২৫) ও আব্দুর রদি খান জুয়েলকেও (২৮) আসামি দেখানো হয়েছে।

সাহেদের বিরুদ্ধে আগের আর কী কী অভিযোগ আছে সে বিষয়ে অনুসন্ধান শুরুর পাশাপাশি তিনি যেন দেশের বাইরে যেতে না পারেন সে বিষয়েও নজর রাখা হচ্ছে বলে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান সারোয়ার বিন কাশেম জানিয়েছেন।

রিজেন্ট হাসপাতালের জালিয়াতি আর প্রতারণার তথ্য উদঘাটিত হওয়ার পর এই গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাবও তলব করা হয়েছে।

পুরনো খবর