সংক্ষিপ্ততম বাজেট অধিবেশন শেষ হল

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রে ইতিহাসে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত বাজেট অধিবেশন শেষ হল বৃহস্পতিবার।

সাজিদুল হকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 July 2020, 09:39 AM
Updated : 9 July 2020, 09:39 AM

নয় কার্যদিবসের এই অধিবেশনে চলতি অর্ছ বছরের বাজেটের ওপর আলোচনা হয়েছে মাত্র দুই দিন। এছাড়া সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনা হয়েছে একদিন।

অধিবেশনের দুটি কার্যদিবস চলেছে শোকপ্রস্তবের ওপর আলোচনা করে। বাজেটের ওপর আলোচনার দিন ও ঘণ্টার হিসেবে এবারের বাজেট অধিবেশন ছিল স্বাধীন বাংলাদেশে ইতিহাসে সব থেকে ছোট।

তবে গত ১৮ এপ্রিল বসা দেড় ঘণ্টার অধিবেশন ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের সংক্ষিপ্ততম অধিবেশন।

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে এবারের বাজেট অধিবেশন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা নিয়ে নানা শঙ্কা ও উৎকণ্ঠা ছিল।

সরকারের মন্ত্রিসভার একজন সদস্যসহ সংসদ অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন এমন দুইজন সংসদ সদসস্যের করোনাভাইরাস আক্রান্তের খবর পাওয়া যায় অধিবেশনের মাঝপথে।

এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হলেও অন্য আর কারও সেভাবে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

দুই সদস্যের সংক্রমণের খবরে অধিবেশনের শেষ দিকে তালিকাভুক্ত সকল সংসদ সদস্যদের করোনাভাইরাস পরীক্ষা করিয়ে বৈঠকে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়।

তার আগে অধিবেশন সংশ্লিষ্ট সংসদ সচিবালয়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীরও কোভিড-১৯ পরীক্ষা করানো হয়। তাতে ৯৪ জনের করোনাভাইরাস পজিটিভ আসে।

স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রতিদিন সকালে অধিবেশন শুরু করে একবেলাতেই বৈঠক শেষ করা হয়।

মহামারীকালে এ বছর বাজেট উপস্থাপনেও ছিল ভিন্নধর্মী আয়োজন। প্রতিবছর অর্থমন্ত্রীকে তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা ধরে সংসদে বক্তব্য দিয়ে বাজেট উপস্থাপন করতে দেখা গেলেও এবার মাত্র ৫৭ মিনিটে বাজেট উপস্থাপন শেষ হয়।

এর মধ্যে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য ছিলো মাত্র ৬-৭ মিনিট। বাকি ৫০ মিনিট ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাজেটের বিস্তারিত বিষয় তুলে ধরা হয়। বাজেট ডকুমেন্ট বিতরণেও এবারের আয়োজন ছিল সাদামাটা।

প্রতি বছর পাটের ব্যাগে বেশ কয়েকটি পুস্তক সরবরাহ করা হলেও এবার কাগজের খামে দুই/তিনটি বই সরবরাহ করা হয়। অর্থমন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে সেগুলো পিডিএফ আকারেও দেওয়া হয়।

অধিবেশনের সমাপনী দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আদেশ পড়ে শোনানোর মধ্যে দিয়ে অধিবেশনের সমাপ্তি টানেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

তিনি বলেন, “করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিশেষ পরিস্থিতিতে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে এ অধিবেশন পরিচালনা করা হয়েছে। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে সতর্কতার সাথে অধিবেশন চালানো হয়েছে। কার্যপ্রণালি বিধি অনুসরণ করে অধিবেশন পরিচালনা করা হয়েছে।“

স্পিকার তার সমাপনী বক্তব্যে দেশের কোভিড-১৯ পরিস্থিতির পাশাপাশি মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।

মহামারীর মধ্যে গত ১০ জুন এবারের বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। শুরুর দিন ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লার মৃত্যুতে আনা শোকপ্রস্তাব গ্রহণের মধ্য দিয়ে বৈঠক মুলতবি করা হয়।

পরদিন ১১ জুন সংসদে ২০২০-২১ অর্থ বছরের বাজেট পেশ হয়। দুই দিন বিরতি দিয়ে ১৪ জুন পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি করা হয়।

এরই মাঝে সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নাসিম ও ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ মুহম্মদ আবদুল্লাহ মারা যান। ফলে ১৪ জুনের বৈঠকও শোকপ্রস্তাব গ্রহণের মধ্যে শেষ হয়।

যদিও রিকল্পনা অনুযায়ী ১৪ জুন বৈঠকে সম্পূরকে বাজেটের ওপর আলোচনার কথা ছিল। পরদিন ১৫ জুন মাত্র এক ঘণ্টা আলোচনার পর সম্পূরক বাজেট পাস হয়। এরপর ২৩ জুন পর্যন্ত বৈঠক মুলতবি করা হয়।

২৩ জুন বেলা ১১টায় বৈঠক বসার পর কয়েকটি বিল উপস্থাপন শেষে ২০২০-২১ অর্থ বছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হয়।

অবশ্য এর আগে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দল আওয়ামী লীগের ৭১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে সংসদে বক্তব্য দেন। ওই দিন ১১ জন সংসদ সদস্য বাজেটের ওপর আড়াই ঘণ্টা আলোচনা করেন।

এরপর আরও ৬ দিন বিরতি দিয়ে ২৯ জুন সংসদের বৈঠক বসে। সেদিন বাজেটের ওপর প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনাসহ চারজন এক ঘণ্টা ৫০ মিনিট আলোচনা করেন। এরপর পাস হয় অর্থবিল। পরদিন ৩০ জুন ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট পাস হয় সংসদে।

সব মিলিয়ে এবার মোট ১৮ জন সংসদ সদস্য পাঁচ ঘণ্টা ১৮ মিনিট বাজেটের ওপর আলোচনা করেন। বিল পাস হয় পাঁচটি।

প্রতি বছর বাজেট পাসের সময় অন্তত আধা ডজন দাবির ছাঁটাই প্রস্তবের ওপর আলোচনা হলেও এবার মাত্র দুটি মন্ত্রণালয়ের ওপর আলোচনা হয়। মন্ত্রণালয় দুটি হল স্বাস্থ্য ও আইন।

এবার বাজেটে ৫৯টি দাবির বিপরীতে ৪২১টি ছাটাই প্রস্তাব এসেছিল। জাতীয় পার্টি ও বিএনপির ৯ জন সদস্য এসব ছাঁটাই প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

বাজেট অধিবেশনে সম্পূরক বাজেটের ওপর দুদিন এবং সাধারণ বাজেটের ওপর ছয়দিন আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়েছিল এবার। সব মিলিয়ে ২০/২০ ঘণ্টার মত আলোচনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু মাঝপথে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ওই পরিককল্পনায় কাটছাঁট করা হয়। তাতে সম্পূরক ও সাধারণ বাজেট মিলিয়ে তিন দিন সাড়ে ৫ ঘণ্টার কম সময় আলোচনা হয়।

এবার অধিবেশনে সামাজিক দূরত্ব মেনে বসানো হয় সংসদ সদস্যদের। সেজন্য অধিবেশনে আইপ্রণেতাদের উপস্থিতি ৮০-৯০ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়। সংসদে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ ছিল বন্ধ।