পাকিস্তানে বঙ্গবন্ধুর কারাবাসের তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে: প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের কারাগারে আটক থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওই সময়কার দিনলিপির তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 July 2020, 10:15 AM
Updated : 8 July 2020, 10:18 AM

বুধবার সংসদে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নুর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “‘কারাগারের রোজনামচা’ মূলত ১৯৬৬ সাল থেকে ৬৮ সাল পর্যন্ত। একাত্তর সাল থেকে আমরা উনার কোনো লেখা পাইনি। কারণ একাত্তর সালে উনি কারাগারে (পাকিস্তানে) কিভাবে ছিলেন, কী অবস্থায় ছিলেন, আসলে তার কিছু আমরা জানিনা।”

“সামান্য একটা লাইন পাওয়া গেছে, আইয়ুব খানের ডায়েরি, অক্সফোর্ড থেকে প্রকাশিত। সেখানে উনার সম্পর্কে কিছু কমেন্ট করা আছে। বঙ্গবন্ধুকে যখন কোর্টে নিয়ে আসা হত, উনি আসতেন, দাঁড়াতেন, বসতে বললে বসতেন। উনি এসে দাঁড়িয়েই নাকি জয় বাংলাদেশ বলতেন। বলতেন, আমাকে যা খুশি তাই করো, আমার যেটা করার আমি তা করে ফেলেছি। অর্থাৎ আমার বাংলাদেশ তো স্বাধীন হবেই। এর বাইরে একাত্তরের কিছু আমি পাইনি।”

শেখ হাসিনা বলেন, “তবে চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখনও আমার চেষ্টা আছে ওখান (পাকিস্তান) থেকে কোনো কিছু উদ্ধার করা যায় কী না?”

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুকে তার ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাড়ি থেকে পাকিস্তানি সেনারা আটক করে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায়। ওই রাতেই বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষের উপর শুরু হয় বর্বর হামলা।

পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান বঙ্গবন্ধু। তার ডাকে বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তি সংগ্রামে।

নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।

মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর বিশ্ব জনমতের চাপে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান সরকার। মুক্তির পর তিনি লন্ডন যান। সেখান থেকে ১০ জানুয়ারি দিল্লি হয়ে পৌঁছান ঢাকায়।   

দেশের জেলখানার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আর আমি জেলখানায় ছবি আনতে গিয়েছিলাম। জেলখানা ভেঙ্গে নতুনভাবে করা হয়েছে। ছোট্ট একখানা দেয়ালের ছবি পেয়েছি, আর কিছু পাইনি। তবে আমার চেষ্টা আমি করে যাচ্ছি।

“আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি, ১৯৬৫ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে ক্লাসিফাইড রেকর্ড সংগ্রহ করেছি, যেখানে বাংলাদেশের বিষয়টি রয়েছে। সাউথ এশিয়ার কিছু বিষয় আছে। অনেকগুলো কাগজ, বিশাল। এগুলো আমার অফিসে ছিল। করোনাভাইরাসের কারণে একটা সুবিধা হয়েছে। ঘরে থাকার কারণে সেগুলো সব ধীরে ধীরে দেখছি। সেখানে ওই সময়কার কিছু পাওয়া যায় কী না সেই চেষ্টা করছি, যদি কিছু সংগ্রহ করা যায়।”

আসছে বঙ্গবন্ধুর আরেকটি বই

অসমাপ্ত আত্মজীবনীর মত ‘বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকথা’ নামে আরেকটি বই প্রকাশ করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

চুন্নুর প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’, ‘আমার দেখা নয়া চীন’সহ বঙ্গবন্ধুর লেখা নিয়ে প্রকাশিত বইগুলোর তথ্য তুলে ধরেন। এসব বইয়ের তথ্যগুলো কীভাবে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করেছিলেন তাও উল্লেখ।

বঙ্গবন্ধুর লেখা বা তার বিষয়ে দেশ-বিদেশের নথিপত্র সংগ্রহ করে সেসব প্রকাশের পরিকল্পনার কথাও জানান শেখ হাসিনা।

এ প্রসঙ্গে তিনি স্মৃতিকথা নিয়ে নতুন বই প্রকাশের প্রসঙ্গও টানেন।

“বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকথা একটা লেখা আছে। অসমাপ্ত আত্মজীবনীর মতই ওনার জীবনবৃত্তান্ত নিয়ে কিছু লেখা। সেই লেখাগুলো আমি প্রস্তুত করছি। তা প্রায় তৈরি হয়ে আছে। ওটা আমরা ছাপতে দেব। আমার ধারণা, এটা ছিল একটি রাফ কাজ। প্রথমে তিনি ওটা করেন। তারপর অসমাপ্ত আত্মজীবনী প্রস্তুত করেন ছাপানোর জন্য। ওটার বিষয়ে আরও কিছু বিষয় আছে।”

জেলজীবনের কথা বলতেন না বঙ্গবন্ধু

জাতির পিতা তার জীবদ্দশায় পরিবারের সদস্যদের কাছে কখনও জেলজীবনের দুঃখকষ্টের কথা বলতেন না বলে শেখ হাসিনা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “তিনি কিন্তু কখনও তার কারাজীবনের কোনো কষ্ট, দুঃখ-যন্ত্রণা কিচ্ছুই বলেননি। যেটুকু আমরা জানি এই বই পড়ে। তার লেখা পড়ে আমরা এটা জেনেছি। এর বাইরে আমরা কিছু জানতে পারিনি। কোনোদিন তিনি মুখ ফুটে বলতেন না- যে উনার কষ্ট ছিল, কক্ষনও বলেননি। আমি রেহানাকে জিজ্ঞাসা করেছি। ও ছোট ছিল, ও মাঝে মধ্যে আব্বাকে এ সমস্ত জিজ্ঞাসা করত। যা আমরা সাহস পেতাম না।”

 “আমি কয়েকদিন আগেও জিজ্ঞাসা করছি ‘তুই কী কিছুই শুনিস নাই? জবাবে বলল, ‘আব্বাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, বলেছিল তোর শোনা লাগবে না। শুনলে সহ্য করতে পারবি না।’ উনার কথা ছিল শোনার দরকার নেই, আমি বলব না, তোরা সহ্য করতে পারবি না।”

বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “এত কষ্ট একজন মানুষ একটা দেশের জন্য, জাতির জন্য করতে পারেন তা ধারণার বাইরে। তিনি মন্ত্রীত্ব ছেড়েছেন সংগঠন করার জন্য। আওয়ামী লীগ করার জন্য। দেশের মানুষের জন্য তিনি সব কিছুই ছেড়েছেন। তিনি ইচ্ছা করলেই প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন, ক্ষমতায় যেতে পারতেন। কিন্তু উনার লক্ষ্য ছিল দেশকে স্বাধীন করা।”