পাপুলকাণ্ডে রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে অভিযোগ যাচাই হবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

মানবপাচারের অভিযোগে কুয়েতে গ্রেপ্তার সাংসদ শহিদ ইসলাম পাপুলের মদদদাতা হিসাবে ব্যবসায়ী থেকে কূটনীতিক বনে যাওয়া রাষ্ট্রদূত এসএম আবুল কালামের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 July 2020, 08:29 AM
Updated : 7 July 2020, 10:21 AM

মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আগে অভিযোগগুলো দেখা যাক, অভিযোগগুলো দেখলে পরে কিছুটা যদি বুঝা যায়, কিছুটা সত্যতা আছে, তাহলে নিশ্চয়ই তদন্ত হবে।”

লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য পাপুলকে ৬ জুন রাতে কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির অন্যতম মালিক পাপুলের সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি রয়েছে।

পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ এনেছে কুয়েতি প্রসিকিউশন। ১৭ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর এখন তাকে রাখা হয়েছে কুয়েতের কেন্দ্রীয় কারাগারে।

এর আগে ফেব্রুয়ারি মাসে পাপুলের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত শুরু হলেও সে সময় দূতাবাস থেকে ঢাকায় চিঠি পাঠিয়ে ওই বিষয়ে সঠিক তথ্য দেওয়া হয়নি বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে।

পাপুলের সঙ্গে কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কালামের সংশ্লিষ্টতার খবর প্রকাশ করতে গিয়ে কয়েকজন সাংবাদিককে বিপদের মুখে পড়তে হয় বলেও গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “তবে পেপারে আমরা দেখছি। পেপারে অভিযোগও আসতেছে।”

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া কালামের মেয়াদ চলতি মাসে শেষ হয়ে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এ মাসেই উনি চলে আসবেন। আমরা নতুন রাষ্ট্রদূত কে হবেন, সেটাও নির্ধারণ করেছি। যে কোনো দিন উনি যাবেন।“

২০১৬ সালের ব্যবসায়ী ও চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালামকে চুক্তিতে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দিয়েছিল সরকার। চট্টগ্রাম দক্ষিণ আওয়ামী লীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি কালাম চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতিও ছিলেন।

পাপুলের বিষয়ে ’জানায়নি’ কুয়েত

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন জানান, পাপুলকে গ্রেপ্তারে একমাস পার হলেও এখনও কুয়েত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে কিছু জানায়নি।

তিনি বলেন, “আমরা শোনার পরপরই আমাদের রাষ্ট্রদূতকে বলেছি, আপনি এ ব্যাপারে সঠিক তথ্য নিয়ে আসেন। সরকারের ভার্সনটা নিয়ে আসেন। কী কারণে উনাকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা কোনো চার্জও করে নাই। সে সরকার আমাদের কিছু জানায়নি।

”না জানানোর ফলে আমরা ঢাকায় কুয়েতি অ্যাম্বাসেডরকে অ্যাপ্রোচ করলাম যে, আপনি তথ্যগুলো দেন। আজকে সপ্তাহখানেক হয়ে গেল উনিও কোনো তথ্য নিয়ে আসেন নাই।”

কুয়েত সরকারের কাছ থেকে তথ্য না আসার জন্য করোনাভাইরাসের ফলে লকডাউনকে কারণ হিসাবে দেখিয়ে মন্ত্রী বলেন, “আমাদের রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, ওখানে লকডাউন এবং অফিস-আদালত মোটামুটি বন্ধ। অফিসে লোক পাওয়া যায় না পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।“

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “বাংলাদেশের সব নাগরিককে আমরা সমান হিসাবে দেখি। আমরা এক্ষেত্রে একটা নির্দেশনা দিয়েছি, উনি বা উনার দলবল যদি আমাদের কনস্যুলার সার্ভিস চায়, তাহলে আমরা অবশ্যই দিব। এটা স্ট্যান্ডিং অর্ডার, সবার ক্ষেত্রে একই নিয়ম প্রযোজ্য।”

অর্থ ও মানবপাচারের বিষয়ে শেখ হাসিনা সরকারের কঠোর অবস্থান রয়েছে মন্তব্য করে মোমেন বলেন, “এটা খুব দুঃখজনক। এটা আরও দুঃখজনক এই জন্য যে, আমরা ট্র্যাফিকিং বন্ধ করার জন্য কত চেষ্টা চালাচ্ছি, এর মধ্যে একজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে বিদেশে অভিযোগটা এসেছে, কুয়েতে।

”উনি নাকি ট্র্যাফিকিং ও মানি লন্ডারিং করেছেন, এই দু’টো অপকর্মের অভিযোগ এসেছে। এটা কুয়েতের পত্র-পত্রিকায় দেখা যাচ্ছে। কুয়েত সরকার এ বিষয়ে আমাদের অফিসিয়ালি কিছু জানায় নাই।“

এক প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “তিনি কোনো সরকারি পাসপোর্ট নিয়ে যান নাই। উনি ওখানে ৩০ বছর ধরে ব্যবসা করেন। ওখানে উনি কোম্পানির সিইও ও এমডি। তিনি বোধহয় ওখানকার লোকার রেসিডেন্ট।

”সে হিসাবে ওখানে গিয়েছেন। বাংলাদেশের এমপি হিসাবে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি, করেছে ব্যবসায়ী হিসাবে।”