সোমবার র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত ঢাকার উত্তরার এই হাসপাতালটিতে অভিযান চালায়।
র্যাবের নির্বাহী হাকিম সারোয়ার আলম বলেছেন, রিজেন্ট হাসপাতাল যে পরিমাণ পরীক্ষা করিয়েছে, তার প্রায় ৩ গুণ বেশি নমুনা সংগ্রহ করলেও পরীক্ষা না করেই ইচ্ছামতো প্রতিবেদন দিয়েছে।
তবে রিজেন্ট হাসপাতালের অন্যতম কর্ণধার মো. সাহেদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
চার মাস আগে বাংলাদেশে নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পরপরই রিজেন্ট হাসপাতালকে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট করে সরকার।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে নমুনা সংগ্রহে নামা জেকেজি হেলথ কেয়ার নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ভুয়া কোভিড-১৯ সনদ দেওয়ার ঘটনা সম্প্রতি পুলিশ ফাঁস করার পর রিজেন্টে অভিযানে গেল র্যাব।
র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচারক এএসপি সুজয় সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হাসপাতালটির বিরুদ্ধে করোনাভাইরাস পরীক্ষা না করেই প্রতিবেদন দেওয়া, অব্যবস্থাপনা, আবাসিক এলাকায় হাসপাতাল গড়ে তোলা, অনুমোদনের মেয়াদ দীর্ঘদিন আগে শেষ হয়ে যওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতেই তারা অভিযান চালান।
র্যাবের নির্বাহী হাকিম সারোয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, অভিযানের আগে তার কাছে ১৪টি করোনাভাইরাস পরীক্ষার প্রতিবেদন আসে, যেগুলো ‘ভুয়া’ বলে নিশ্চিত হয়েছেন তারা।
“এসব প্রতিবেদনে যে সিরিয়াল নাম্বার আছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে এগুলো ভুয়া।”
অভিযানকলে এমন আরও ২৮টি প্রতিবেদন পাওয়া যায় জানিয়ে তিনি বলেন, “এগুলোও ভুয়া প্রতিবেদন। এরা ইচ্ছামতো নিজেরাই তৈরি করেছে।”
সরকারি নিয়ম অনুসরণ না করে রিজেন্ট ৪ হাজার ২০০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে র্যাবের অভিযোগ।
সারোয়ার বলেন, “এসব মিলিয়ে এবং বাকি স্যাম্পল কালেকশন করে পরীক্ষা না করে মোট প্রায় ৩ কোটি টাকা আয় করেছে তারা।
“অবস্থাদৃষেট চার থেকে পাঁচ হাজার মানুষকে তারা ভুয়া প্রতিবেদন দিয়েছে, যা বড় ধরনের অপরাধ, ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।”
বেশ কিছু দিন ধরে র্যাব বিষয়টি নজরে রাখছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “তা বুঝতে পেরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের বেশ কিছু স্টাফদের কাছ থেকে দুই মাস আগের পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে রাখে। আত্মরক্ষার জন্য এই কৌশল নেয় তারা। স্টাফদের অনেকেই এই অভিযোগ করেছেন।”
এ বিষয়ে জানতে সোমবার রাতে যোগাযোগ করা হলে রিজেন্টের অন্যতম কর্ণধার সাহেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটাই প্রথম ডেডিকেটেড কোভিড- ১৯ হাসপাতাল। তারা (র্যাব) যেসব অভিযোগ নিয়ে এসেছে, কোনো কিছু এখানে পায়নি। রাত পৌনে ১০টা পর্যন্ত অভিযান চলছিল।”
মধ্যরাতে অভিযান শেষে র্যাব-১ এর কর্মকর্তা এএসপি মোর্শেদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালতে কোনো শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না, তারা মামলা করবেন।
“প্রতারণার মাধ্যমে তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা অবৈধ আয় করার অভিযোগে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা হবে।”
রিজেন্ট থেকে আটজন কর্মচারীকে আটক করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “এরা মালিকের নির্দেশে ভূয়া প্রতিবেদন তৈরি করত। অভিযান শুরুর পর থেকে মালিকপক্ষের লোকজন পালিয়ে গেছে। যাদের আটক করা হয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাচ্ছি। মামলা এবং তাদের গ্রেপ্তারের বিষয় কাল সিদ্ধান্ত হবে।”