রোগী ফেরানোর অভিযোগ: তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেছে হাই কোর্ট

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ‘চিকিৎসা না দিয়ে রোগী ফিরিয়ে দেওয়ার’ অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 July 2020, 04:16 PM
Updated : 6 July 2020, 04:16 PM

স্বাস্থ্য সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে আগামী ২১ জুলাইয়ের মধ্যে এ প্রতিবেদন দিতে হবে।

করোনাভাইরাস সঙ্কটে সরকারি, বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসায় অবহেলা, রোগীর কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়, আইসিইউ বণ্টন, বেসরকারি হাসপাতাল অধিগ্রহণ, অক্সিজেন সরবরাহ সংক্রান্ত কয়েকটি রিট মামলায় একসঙ্গে এ আদেশ হয়েছে।

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেয়।

আদালতে রিট আবেদনকারী পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অনিক আর হক, এহসানুর রহমান, ইয়াদিয়া জামান, জামিউল হক ফয়সাল, মাহফুজুর রহমান মিলন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

পরে আইনজীবী এহসানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে ছয়টি রিট আবেদনে আদালত পাঁচটি নির্দেশনা দিয়েছে।

১. চিকিৎসা না দিয়ে রোগী ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগে যে ক’টি রিট আবেদন করা হয়েছে, সেসব অভিযোগ তদন্ত করে আগামী ২১ জুলাইয়ে মধ্য স্বাস্থ্য সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

২. ক্যান্সার, কিডনি সমস্যার মত জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের ৩৬ বা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করে চিকিৎসা দিতে বলা হয়েছে।

৩. সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে অক্সিজেন সিলিন্ডারের মূল্য নির্ধারণ করে দিতে বলেছে আদালত।

৪. আইসিইউ বা অস্বাভাবিক চিকিৎসা ব্যায় নিয়ে কারো অভিযোগ থাকলে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ করতে বলা হয়েছে।

৫. স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে অনলাইনে চিকিৎসা সংক্রান্ত অভিযোগ নেওয়ার ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

এর আগে এ সংক্রান্ত পাঁচটি রিট আবেদনে গত ১৫ জুন ১১ দফা নির্দেশনা ও অভিমত দিয়ে আদেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট।

পরদিন রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত তিনটি নির্দেশনা বহাল রেখে বাকি নির্দেশনা ও অভিমত স্থগিত করে দেয়।

যে তিনটি নির্দেশনা বহাল থাকে, তার মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জারি করা নির্দেশনা (সরকারি/বেসরকারি হাসপাতালে রোগীদের ফিরিয়ে না দেওয়া সংক্রান্ত) যথাযথভাবে পালন করা হচ্ছে কিনা, এ বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে ৩০ জুনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ ছিল।

এছাড়া আইসিইউতে কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে যেন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক ‘মাত্রাতিরিক্ত বা অযৌক্তিক ফি’ আদায় করতে না পারে, সে বিষয়ে মনিটরিং এবং অক্সিজেন সিলিন্ডারের খুচরা মূল্য এবং রিফিলিংয়ের মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার নির্দেশনা ছিল।

সে অনুযায়ী হাই কোর্টে একটি প্রতিবেদন দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, “চিকিৎসা না দিয়ে সাধারণ রোগীদের ফেরত পাঠানোর কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এছাড়া বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন কোভিড-১৯ রোগীর কাছ থেকে মাত্রাতিরিক্ত বা অযৌক্তিক ফি আদায় বন্ধে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয় প্রতিবেদনে।

অক্সিজেন সিলিন্ডারের খুচরা মূল্য এবং রি-ফিলিংয়ের মূল্য নির্ধারণ করার ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালককে (ভাণ্ডার ও সরবরাহ) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে ও প্রতিবেদনে জানানো হয়।

এর মধ্যে গত ২৯ জুন চিকিৎসা না দিয়ে রোগী ফিরিয়ে দেওয়া ও চিকিৎসার পর অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগে ঢাকা ও চট্টগামের তিনটি বেসরকারি হাসপাতালের পরিচালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়। রোববার সে আবেদনটির ওপরও শুনানি হয়।