শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে ইন্টারনেট চান শিক্ষামন্ত্রী

মহামারীর মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনলাইন ক্লাসের সুবিধায় শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে ইন্টারনেট প্যাকেজ বরাদ্দ দিতে মোবাইল ফোন অপারেটরদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 July 2020, 01:23 PM
Updated : 6 July 2020, 01:23 PM

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার শিক্ষার্থী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য ইন্টারনেট সুবিধা সহজলভ্য করতে সম্ভাব্য সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

সোমবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক উপ-কমিটি আয়োজিত ‘বর্তমান বৈশ্বিক সঙ্কটকালে শিক্ষা বিষয়ে আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সভায় তারা এসব কথা বলেন।

দীপু মনি বলেন, “বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন যাবত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। শিক্ষা কার্যক্রমকে চালিয়ে নিতে আমরা অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের ওপর গুরুত্বারোপ করছি।

“ইতোমধ্যে অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তবে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে অনেক শিক্ষার্থীর পক্ষেই ইন্টারনেটের ব্যয় বহন করা সম্ভব হচ্ছে না।

“তাই শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে ইন্টারনেট প্রদান অথবা স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট প্যাকেজ দেওয়া যায় কি না, সে বিষয়ে মোবাইল কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে।”

মোবাইল অপারেটরগুলো বিষয়টি ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখবে বলেই আশা করছেন শিক্ষামন্ত্রী।

দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পর গত ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশের সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। আগামী ৬ অগাস্ট পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা আছে।

স্কুল-কলেজ বন্ধের সময় প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণির ক্লাস সংসদ টিভিতে দেখিয়ে বাড়ির কাজ দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর শিক্ষার্থীরা এসব বাড়ির কাজ জমা দেওয়ার পর শিক্ষকরা তা মূল্যায়ন করবেন। সংসদ টিভির পাশাপাশি ইউটিউব ও ফেইসবুকের বিভিন্ন পেইজে এসব ক্লাস আপলোড করা হচ্ছে। বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান নিজেদের মতো করে ভার্চুয়াল ক্লাস নিচ্ছে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “প্রতিটি সঙ্কটই আমাদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে দেয়। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চাহিদা অনুযায়ী আমাদের জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর করতে হলে তথ্য ও প্রযুক্তিতে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।

“তাই আমাদের হয়ত কিছুদিনের মধ্যে ডিজিটাল শিক্ষা কার্যক্রমে যেতে হত, করোনা আমাদেরকে এক্ষেত্রে এগিয়ে দিয়েছে। আমরা এখন অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমসহ অফিস-আদালতে বিভিন্ন মিটিং এবং দৈনন্দিন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।”

নতুন এই প্ল্যাটফর্মে এখনও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে জানিয়ে দীপু মনি বলেন, “অল্প সময়ের মধ্যে আমরা সেই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠে নতুন এই বাস্তবতার সাথে অভ্যস্ত হয়ে উঠব। করোনা পরবর্তী সময়েও স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকবে।”

মোস্তাফা জব্বার বলেন, শিক্ষার বিস্তার এবং মেধাবী জাতি তৈরিতে ইন্টারনেটকে ব্যয় নয়, এটিকে রাষ্ট্রের বড় বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে হবে।

“ভবিষ্যৎ শিক্ষার ক্ষেত্র কেবলমাত্র ক্লাসরুমকেন্দ্রিক হবে না। প্রচলিত চক-ডাস্টার পদ্ধতির সাথে ক্লাসরুম ব্যবস্থা ডিজিটাল করতে হবে। অন্যথায় চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য মানব সম্পদ তৈরি করতে পারব না।”

টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জানান, তিন হাজার ৮০০ ইউনিয়নে উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়া হয়েছে, ৭৭৭টি ইউনিয়নে ব্রডব্যান্ড সংযোগ পৌঁছানোর কাজ শুরু হয়েছে। দেশের হাওর, দুর্গম দ্বীপ ও চরাঞ্চলে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে উচ্চগতির ইন্টারনেট পৌঁছানোর কাজ শুরু হয়েছে।

শিক্ষা পাঠ্যক্রমে ডিজিটাল শিক্ষা পদ্ধতি প্রবর্তন এবং পেশাদারদের মাধ্যমে তৈরি মানসম্মত ডিজিটাল কনটেন্টের মাধ্যমে পাঠদান সময়ের চাহিদা বলেও মত দেন জব্বার।

তিনি বলেন, প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত ডিজিটাল শিক্ষা কনটেন্ট তৈরি এবং কনটেন্টের মাধ্যমে পাঠদান অপরিহার্য।

শিক্ষা বিস্তারের স্বার্থে শিক্ষার্থী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য ইন্টারনেট সুবিধা সহজলভ্য করতে সম্ভাব্য সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন মোস্তাফা জব্বার।

আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল খালেকের সভাপতিত্বে সেমিনারে বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ডা. কামরুল হাসান খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মাকসুদ কামাল, দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাপা বক্তব্য দেন।