আত্মসমর্পণ-জামিন: ‘অপেক্ষায়’ থাকতে হচ্ছে দুদকের মামলার আসামিদের

মহামারীর মধ্যে ফৌজদারি মামলার আসামিদের হাকিম আদালতে আত্মসমর্পণের সুযোগ তৈরি হলেও দুদক আইনের সর্বশেষ সংশোধনের কারণে নতুন দায়ের হওয়া দুর্নীতি মামলার আসামিরা সে সুযোগ পাচ্ছেন না।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 July 2020, 05:45 AM
Updated : 6 July 2020, 05:45 AM

গত বছর দুদক আইন সংশোধনের পর এ আইনের মামলায় আত্মসমর্পণের আবেদন শোনার এখতিয়ার আর হাকিম আদালতের হাতে নেই। আবার জজ আদালতের সেই এখতিয়ার থাকলেও সেখানে আত্মসমর্পণের আবেদন শোনার অনুমতি এখনও সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন দেয়নি।

ফলে ২০১৯ সালের সংশোধিত আইনে দুদক কার্যালয়ে দায়ের হওয়া মামলার আসামিদের সে সুযোগ পাওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে।

তবে গত বছরের আগে থানায় দায়ের হওয়া দুর্নীতি মামলার আসামিরা এখনও হাকিম আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে পারবেন।

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে মার্চের শেষ দিকে সরকারের সাধারণ ছুটি ঘোষণায় আদালতের নিয়মিত কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ১১ মার্চ ভার্চুয়াল আদালত চালু হলেও শুধু নতুন গ্রেপ্তার ও আগে থেকে বন্দিদের জামিন শুনানি হয়।

কিন্তু গ্রেপ্তার হননি এমন আসামিদের অধস্তন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাওয়ার সুযোগ তখনও ছিল না।

প্রধান বিচারপতি গত ৪ জুলাই সিদ্ধান্ত দেন, এ ধরনের আসামিরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (মুখ্য বিচারক হাকিম), চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (মুখ্য মহানগর হাকিম) আদালতে আত্মসমর্পণ করতে পারবেন।

এর ফলে দণ্ডবিধির আওতায় কিছু মামলা, মাদক, বিশেষ ক্ষমতা আইন, সন্ত্রাস দমন আইন, দ্রুত বিচার আইনসহ অন্যান্য আইনের অভিযোগের ক্ষেত্রে পলাতক ও পরোয়ানাভুক্তেআসামিদের ক্ষেত্রে অভিযোগপত্র জমা হওয়ার আগে হাকিম আদালতে আত্মসমর্পণের সুযোগ তৈরি হয়।

তবে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এখতিয়ারভুক্ত নতুন মামলার আসামিদের ক্ষেত্রে সে সুযোগ নেই, কারণ এ ধরনের মামলায় জামিন শুনানি নেওয়ার এখতিয়ার মহানগর এলাকায় জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ (মহানগর দায়রা জজ) এবং জেলার ক্ষেত্রে জেলা ও দায়রা জজের।

সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের সুযোগ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরদিন রোববার ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজের দায়িত্বপ্রাপ্ত মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের কাছে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে জামিন শুনানির জন্য কেউ আবেদন করতে পারেননি।

ওই আদালতে দায়িত্ব পালনকারী দুদকের পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম বলেন, “আত্মসমর্পণের মাধ্যমে জামিন শুনানি হবে কি না জানতে আদালতে গিয়েছিলাম। আদালত থেকে বলা হয়েছে অপেক্ষা করতে।

“কারণ, সিএমএম ও সিজেএম আদালতে আত্মসমর্পণের কথা বলা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আদেশে। কিন্তু মহানগর দায়রা জজ বা বিশেষ জজ আদালতের কথা উল্লেখ নেই। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের পরবর্তী সিদ্ধান্ত না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে।”

এছাড়া দায়রা আদালতের বিচারাধীন মামলায় আত্মসমর্পণের মাধ্যমে জামিন শুনানির বিষয়েও সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তিতে কিছু বলা হয়নি। ফলে সেসব মামলার পরোয়ানাভুক্ত আসামিদেরও আপাতত ঝুলে থাকতে হচ্ছে।

দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আগে দুদকের মামলায় আত্মসমর্পণের আবেদন হাকিম আদালত শুনত। কিন্তু ২০১৯ সালের সংশোধিত আইনে এখন থানার বদলে দুদক কার্যালয়ে মামলা দায়ের হয়। তখন আত্মসমর্পণের মাধ্যমে জামিন শুনানির এখতিয়ারেও পরিবতর্ন আসে।

সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তিতে যেহেতু সিএমএম ও সিজেএম আদালতের কথা উল্লেখ আছে, তাই থানায় বা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা হওয়ার পর পরোয়ানাবিহীন বা পরোয়ানাভুক্ত আসামিরাই কেবল আত্মসমর্পণ করতে পারবেন।

কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর দায়রা জজ আদালতে বদলি হয়ে আসা বিচারাধীন মামলার পরোয়ানাভুক্ত আসামিদের আত্মসমর্পণেরও সুযোগ থাকছে না।

এখন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন নতুন করে নির্দেশনা জারি না করলে আপাতত অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই বলে জানালেন কয়েকজন আইনজীবী।