রোহিঙ্গা শিবিরে মহামারী নিয়ন্ত্রণের গল্প বিশ্বের জানা উচিত: পররাষ্ট্র সচিব

জনবহুল রোহিঙ্গা শিবিরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ’নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারাকে’ আন্তর্জাতিক শরিকদের সঙ্গে মিলে সরকারের ’দ্রুত পরিকল্পনা এবং যৌথ প্রয়াসের’ ফল হিসাবে বর্ণনা করেছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 July 2020, 03:24 PM
Updated : 8 July 2020, 02:47 PM

রোববার আওয়ামী লীগের গবেষণা উইং সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) আয়োজিত 'লেটস টক' অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও আমরা কক্সবাজারে ভালো পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে পেরেছি। এটি এক সফলতার গল্প, যা বিশ্বের জানা উচিত।”

‘লেটস টক: রোহিঙ্গা রেসপন্স অ্যান্ড কোভিড১৯' শীর্ষক এই ভার্চুয়াল আলোচনায় অংশ নেন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) বাংলাদেশ প্রতিনিধি স্টিভেন করলিস।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে প্রবেশ ও বের হওয়ার বিষয়টি সীমাবদ্ধ রাখার মাধ্যমে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ও সহযোগীদের ভূমিকার প্রশংসা করেন তিনি।

রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন অভিযানের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট থেকে ঘর-বাড়ি ছেড়ে বাংলাদেশে আসতে থাকে রোহিঙ্গারা; এই সংখ্যা কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখ ছাড়ায়। আগে থেকে বাংলাদেশে অবস্থান করছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।

ইউএনএইচসিআরের উখিয়া আইসোলেশন সেন্টার। ছবি: আবদুর রহমান

তাদের কক্সবাজারের কয়েকটি আশ্রয় কেন্দ্রে রেখে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় জরুরি মানবিক সহায়তা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ সরকার।

সেখানে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকানো না গেলে পরিস্থিতি যে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেবে, সে বিষয়ে শুরু থেকেই উদ্বেগ রয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে।

সরকারি হিসাবে, রোববার পর্যন্ত ৫২ জন রোহিঙ্গা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন ৫ জন।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, জাতিসংঘের সংস্থাগুলো এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই রোহিঙ্গা শিবিরের কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

”আগের তুলনায় রোহিঙ্গা শিবির এলাকায় কর্মকর্তা ও কর্মীদের প্রবেশ ও বের হওয়ার হার ২০ শতাংশে কমিয়ে আনা হয়েছে। অন্যদিকে ক্যাম্প থেকে বাইরে যাওয়ার হার ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি আমরা।”

এক মিলিয়নের বেশি রোহিঙ্গার মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে পাঁচজনের মৃত্যুর প্রসঙ্গ টেনে মাহবুব তালুকদার বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক পর্যায়ে নেই। আমরাও আতঙ্কিত নই। বেশ ভালো প্রস্তুতি রয়েছে আমাদের। আমরা সবার সহযোগিতায় কোভিড-১৯ ভালভাবেই মোকাবিলা করতে পারব।”

রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার ও সহযোগীদের ভূমিকার প্রশংসা করতে গিয়ে স্টিভেন করলিস বলেন, “এই অবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকলে চলবে না। ধীরে ধীরে কক্সবাজারের স্থানীয় মানুষদের জন্যও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।”

সৌভিক দাস তমালের সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক ডা. সুমাইয়া তাসনিম এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রিলিফ ইন্টারন্যাশনালের স্বেচ্ছাসেবক জানি আলম উপস্থিত ছিলেন।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রসঙ্গ

আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি।

করোনাভাইরাসের কারণে বাধাগ্রস্ত হলেও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরানোর আলোচনা যেন আড়ালে পড়ে না যায়, সেজন্য সবাইকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান অনুষ্ঠানে জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ।

তিনি বলেন,”করোনাভাইরাসের কারণে প্রত্যাবাসনে নেওয়া উদ্যোগগুলোর গতি কিছুটা কমেছে। কিন্তু আমরা তা দ্রুত করার চেষ্টা করছি।”

রাখাইন রাজ্যে এ সময়ে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে চলমান নির্মূল কার্যক্রম ও সহিংসতা রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনাস্থা সৃষ্টি করেছে মন্তব্য করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, তাদের প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে বর্তমান পরিস্থিতি সহায়ক নয়।

এ সময় লাইভে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সরকারের মূল লক্ষ্য রোহিঙ্গাদের রাখাইনে নিজ জন্মস্থান নিরাপদে প্রত্যাবাসন করা।

ভূমিধস, পাচার ও উগ্রবাদের ঝুঁকি কমাতে সরকার ভাসান চরে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমি ভাসান চর পরিদর্শন করেছি। সেখানে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় আম্পান ভাসান চরে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি।”

সাগরপথে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমাতে গিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর উদ্ধার নারী ও শিশুসহ ৩০৬ জন রোহিঙ্গাকে ভাসান চরে রাখার কথাও এ সময় বলেন পররাষ্ট্র সচিব।

বাংলাদেশের মানবিক কার্যক্রম নিয়ে যেন কোনো ‘ভুল ব্যাখ্যা’ তৈরি না হয়, সে বিষয় সতর্ক করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “তাই বলে এটা মনে করার সুযোগ নেই যে, রোহিঙ্গারা অনির্দিষ্টকালের জন্য বাংলাদেশে বসবাস করবে। আমাদের মূল লক্ষ্য রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করা।”