ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সহজলভ্য করতে শর্ত আসছে

দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছে দিতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতাদের ওপর শর্ত আরোপ করতে যাচ্ছে সরকার।

শামীম আহমেদ জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 July 2020, 02:09 PM
Updated : 5 July 2020, 02:09 PM

উপজেলা পর্যায়ে যারা ব্রডব্যান্ড সেবা দিচ্ছে, তাদেরকে ইউনিয়ন পর্যায়ে সেবা বিস্ততৃ করার শর্ত আসছে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ইউনিয়নে ব্রডব্যান্ড সংযোগ বাধ্যতামূলক করতে এ শর্ত আরোপ করা হবে। খুব শিগগিরই আইএসপিদের জন্য এ শর্ত আরোপ করা হবে।

“ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন পর্যন্ত শহর ও নগর কেন্দ্রীক রয়ে গেছে। মহামারীকালে ভার্চুয়াল যোগাযোগের জন্য ইন্টারনেটে মানুষের নির্ভরতা অনেক বেড়েছে। বর্তমানে গ্রামগুলোতেও ইন্টারনেট চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে উচ্চগতির এ সংযোগ নিশ্চিত করা হলে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের ক্ষমতায়ন সহজ হবে।”

মোস্তাফা জব্বার জানিয়েছেন, শর্ত থাকবে উপজেলার সেবাদাতারা যেন কমপক্ষে একটি বা দুটি ইউনিয়নে সেবা নিয়ে যায়।

উপজেলা পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড সেবাদাতাদের উপর শর্ত দেয়া হলে তাদের কোনো সুবিধা দেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “তাদের লাইসেন্স ফি বা অন্য কোনো সুবিধা দেয়া যায় কিনা সে ব্যপারে উদ্যোগ নেব। তারা যেন সহজেই ইউনিয়ন পর্যায়ে যেতে পারে সেজন্য সহযোগিতা করা হবে।”

ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সঙ্গে আলোচনা করে শিগগিরই শর্ত চূড়ান্ত করা হবে বলে জানান টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী।

মোস্তাফা জব্বার বলেন, ইনফো-সরকার তৃতীয় পর্যায় প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের প্রান্তিক গ্রামীণ জনপদে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা সরবরাহে দুই হাজার ৬০০ ইউনিয়নকে নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হচ্ছে।

এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিযোগাযোগ কোম্পানি বিটিসিএল আরো এক হাজার ২০০ ইউনিয়নকে নেটওয়ার্কের আওতায় আনছে।

“অপর একটি প্রকল্পে দেশের হাওর, বিল, প্রত্যন্ত এলাকা ও দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের প্রায় ৭৭২টি ইউনিয়ন দ্রুতগতির ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসার কাজ চলছে।”

এছাড়া দেশের ৫৮৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ প্রকল্পে ৪৪০টি প্রতিষ্ঠান ফ্রি ওয়াইফাইয়ের আওতায় এসেছে বলে জানান তিনি।

শর্ত দেয়ার বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন আইএসপিএবির সভাপতি আমিনুল হাকিম। এর সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে আইএসপি লাইন্সেধারীদের কিছু সুবিধা দেয়ারও সুপারিশ করেছেন তিনি।

টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী দেশে উপজেলা (ক্যাটাগরি সি) পর্যায়ে ৫৮৯টি আইএসপি লাইসেন্স রয়েছে। এছাড়া দেশব্যাপী, মহানগরী, মেট্রোপলিটন এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরি মিলিয়ে মোট এক হাজার ৭৮৫টি আইএসপি লাইসেন্স রয়েছে।

আমিনুল হাকিম বলেন, “শর্ত দিলে গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেট পৌঁছে যাবে খুব সহজেই। এর ফলে ই-কমার্স থেকে শুরু করে ওইসব এলাকায় শিক্ষার প্রসার হবে এবং কর্মসংস্থান বাড়বে।”

উপজেলা পর্যায়ের এসব আইএসপি সেবাদাতাদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কিছু সুবিধা দেয়ার সুপারিশ করে আমিনুল হাকিম বলেন, “উপজেলা থেকে ইউনিয়ন বা গ্রামে ইন্টারনেট ব্রডব্যান্ড পৌঁছাতে বিনিয়োগ করতে হবে, এ খাতে সরকার সহজ শর্তে ঋণ দিতে পারে।

“এছাড়া ইউনিয়ন পর্যন্ত ইন্টারনেট পৌঁছে দিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও বিটিসিএলের যে প্রকল্পগুলো রয়েছে তার সাথে এসব আইএসপিগুলোকে সংযুক্ত করা যেতে পারে। এর ফলে খুব সহজেই এসব কাজ করা যাবে।”

ব্রডব্যান্ড সংযোগ প্রসারে ও সহজলভ্য করতে শুধু উপজেলা নয় অন্যান্য ক্যাটগরির লাইসেন্সধারীদেরও শর্ত দেয়া উচিত বলে মনে করেন আমিনুল হাকিম।

“শুধু ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় যারা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ দিচ্ছে তারা খুব কম এলাকা কাভার করছে। লাইসেন্স প্রাপ্তদের শর্ত দেওয়া উচিত কয়েকটি এলাকা যেন তারা কাভার করে। এর সাথে সাথে তাদের রোলআউট প্ল্যান করে তার বাধ্যবাধকতাও থাকা উচিত।”

আইএসপিএবির হিসাবে, বর্তমানে সারা দেশে ৮০ লাখের বেশি বাসাবাড়িতে তারের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করেছন প্রায় সাড়ে তিন কোটি গ্রাহক।