কথা সাহিত্যিক মকবুলা মনজুর আর নেই

পুরুষপ্রধান সমাজের পটভূমিতে দাঁড়িয়ে নারীর দেখা বিশ্বকে লেখায় তুলে আনা কথা সাহিত্যিক মকবুলা মনজুর চিরবিদায় নিলেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 July 2020, 07:42 PM
Updated : 3 July 2020, 07:42 PM

শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে উত্তরায় নিজের বাসায় তার মৃত্যু হয় বলে লেখিকা সংঘের সভানেত্রী দিলারা মেজবাহ জানিয়েছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “অনেকদিন ধরে আপা বার্ধক্যের নানা রোগে অসুস্থ ছিলেন। সন্ধ্যায় নিজের বাসায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।”

বাংলাদেশ লেখিকা সংঘের উপদেষ্টা মকবুলা মনজুরের বয়স হয়েছিলো ৮১ বছর। দুই ছেলে, দুই মেয়ে এবং দেড় ডজনের বেশি উপন্যাস তিনি রেখে গেছেন।

দিলারা মেজবাহ বলেন, “আপা বাংলাদেশের একজন অগ্রগণ্য সাহিত্যিক ছিলেন। তিনি তার কাজ দিয়ে মানুষের মাঝে বেঁচে থাকবেন।”

১৯৩৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলায় মকবুলা মনজুরের জন্ম। ১৯৫২ সালে টাঙ্গাইলের বিন্দুবাসিনী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৫৪ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট শেষ করেন তিনি।

ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করেন।

পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম কর্মাশিয়াল ব্যাংকে (বর্তমানে পূবালী ব্যাংক) কর্মজীবন শুরু করা মকবুলা মনজুর পরে হলিক্রস উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। 

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় স্কুলের মাঠে পতাকা ওড়াতে চাইলে একজন শিক্ষক তাতে বাঁধা দেন। তখন সেখানে পতাকা দণ্ড পুতেই তিনি বিদ্যালয় ছেড়ে চলে আসেন।

ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, নারীর সঙ্কট আর নারীর প্রতিবাদের কথা বার বার এসেছে মকবুলা মনজুরের লেখায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় নারীর ওপর বর্বরতার চিত্র তিনি তুলে ধরেছেন কালের মন্দিরা উপন্যাসে।

তার লেখা গ্রন্থের মধ্যে আরও আছে আর এক জীবন, জল রং ছবি, আত্মজা ও আমরা, কনে দেখা আলো, অবসন্ন গান, প্রেম এক সোনালী নদী, বাউল বাতাস, ছায়াপথে দেখা, সায়াহ্ন যূথিকা, নক্ষত্রের তলে।

সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০০৫ সালে মকবুল মনজুর বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। এছাড়া অনন্যা সাহিত্য পুরুস্কার, লেখিকা সংঘ পুরস্কারসহ বিভিন্ন সম্মাননায় তিনি ভূষিত হয়েছেন।

ইউনিভার্সিটি উইমেন্স ফেডারেশন কলেজ ও সাউথ ইস্ট ইউনির্ভাসিটিতে শিক্ষকতা করা মকবুলা মনজুর সাপ্তাহিক বেগমে ফিচার এডিটরের দায়িত্বে পালন করেছেন টানা ২৫ বছর। দৈনিক আজাদ পত্রিকাতেও তিনি একই দায়িত্বে পালন করেছেন এক সময়।

মকবুলা মনজুরের সাত ভাইবোনের মধ্যে প্রাবন্ধিক ড. মোখলেসুর রহমান, চলচ্চিত্র পরিচালক ইবনে মিজান এবং লেখক-প্রকাশক আজিজ মেহের তিন ভাই। আর তিন বোন জোবেদা খাতুন, অধ্যাপিকা মোসলেমা খাতুন, মুশফিকা আহমেদ।