দেশের মধ্যাঞ্চলে বন্যার বিস্তার

উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলেও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে বন্যা বিস্তৃতি পেয়েছে দেশের মধ্যাঞ্চলে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 July 2020, 04:39 PM
Updated : 3 July 2020, 04:39 PM

আগামী এক দিনে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমের ছয় জেলায় বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেও মধ্যাঞ্চলের ছয় জেলায় পরিস্থিতির অবনতির আভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

দেশের নদ-নদীগুলোতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১০১টি পর্যবেক্ষণ পয়েন্টের মধ্যে শুক্রবার ৬৬টি পয়েন্টেই পানি বেড়েছে। এর মধ্যে ১৬টি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপরে বয়ে যাচ্ছে নদী।

কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া জানান, বহ্মপুত্র-যমুনার পানি কমতে শুরু করেছে। আগামী তিনদিন তা অব্যাহত থাকবে। মেঘনা অববাহিকার নদ-নদীতেও পানি কমছে।

তাতে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে।

তবে গঙ্গা-পদ্মায় পানি বাড়তে থাকায় শনিবার মাওয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা পেরিয়ে যেতে পারে। রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, ফরিদপুর, মুন্সিগঞ্জ ও শরীয়তপুরের নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে আগামী ২৪ ঘণ্টায়।

শুক্রবার সকাল ৯টায় ধরলা নদী কুড়িগ্রামে বিপৎসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার, ঘাগট নদী গাইবান্ধায় বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছিল।

কুড়িগ্রামের নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার, চিলমারি পয়েন্টে ৪৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছিল ব্রহ্মপুত্র নদ।

যমুনা গাইবান্ধায় ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার, জামালপুরের বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার, বগুড়ার সারিয়াকান্দি পয়েন্টে ৬০ সেন্টিমিটার, সিরাজগঞ্জের কাজীপুর পয়েন্টে ৬৪ সেন্টিমিটার, সিরাজগঞ্জে ৪৬ সেন্টিমিটার এবং মানিকগঞ্জের আরিচায় বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

এছাড়া আত্রাই সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার, ধলেশ্বরী টাঙ্গাইলের এলাসিন ঘাটে ৪৪ সেন্টিমিটার, পদ্মা রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ৪৪ এবং মুন্সীগঞ্জের ভাগ্যকূল পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল।

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের গাবুরজান গ্রামের বাড়িঘর তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে, বানভাসী মানুষ আশ্রয় নিয়েছে ঘরের চালে।

অন্যদিকে সিলেট অঞ্চলে সুরমা নদী কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার এবং পুরাতন সুরমা দিরাইয়ে ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছিল।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ৭ জুলাই থেকে বহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি ফের বাড়তে শুরু করতে পারে।

এই সময়ে ঢাকার চার পাশের নদ-নদীর পানিও সামান্য বাড়তে পারে। তবে বিপদসীমা অতিক্রমের আশঙ্কা দেখছেন না নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া।

এদিকে দেশের ১০ জেলার বন্যা পরিস্থিতি তদারকি ও জরুরি মানবিক সহায়তা কার্যক্রম দেখভাল করতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ১০ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছে সরকার।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান জানিয়েছেন, বন্যাদুর্গত জেলাগুলোতে ১০০ মেট্রিক টন করে চাল এবং ‘এ’ ক্যাটাগরির জেলায় ১০ লাখ এবং ‘বি’ ক্যাটাগরির জেলায় পাঁচ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়েছে।

কুড়িগ্রাম পৌরসভার ভেলাকোপা এলাকার অধিকাংশ বাড়িঘর বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন উঁচু স্থানে।

জুলাইয়ের শেষ থেকে অগাস্টের দ্বিতীয়-তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত বন্যার পূর্বাভাস রয়েছে জানিয়ে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, বন্যার সময় যদি ত্রাণ বিতরণ করতে হয় সেই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার, শিশু খাদ্য, নগদ টাকা মজুদ রাখা হচ্ছে।

গেল বছর জুলাইয়ে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ২৮ জেলায় ৩০ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর ২০১৭ সালে জুলাই-অগাস্টে দুই দফা বন্যা হয়। অগাস্টের বন্যায় দেশের ৩০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়।