পাপুলকাণ্ডে কুয়েতি রাজনীতিক, সরকারি কর্মকর্তা গ্রেপ্তার

অর্থ ও মানবপাচারের অভিযোগে কুয়েতে গ্রেপ্তার এমপি শহিদ ইসলাম পাপুলের মদদদাতাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে কুয়েতের বিচার বিভাগ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 July 2020, 04:31 AM
Updated : 3 July 2020, 04:31 AM

এ ঘটনায় সর্বশেষ দুজনের গ্রেপ্তারের খবর দিয়েছে দেশটির গণমাধ্যম, যাদের একজন কুয়েতের শ্রম বিভাগের এক পরিচালক এবং অন্যজন একজন রাজনীতিবিদ, যিনি গত পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। 

পাবলিক প্রসিকিউটরদের বরাতে আরবি দৈনিক আল-রাই জানিয়েছে, ওই দুজনকে ২১ দিনের আটকাদেশ দিয়ে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে কুয়েতের যে দুই এমপির বিরুদ্ধে পাপুলকে বেআইনি কাজে সহযোগিতা এবং অর্থ পাচারে জড়িত থাকার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়েছে, তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে ’সংসদীয় ইমিউনিটি’ প্রত্যাহার করা হয়েছে।

সালাহ খুরশিদ ও সাদুন হাম্মাদ নামের ওই দুই এমপির বিরুদ্ধে গত ২৭ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ এনেছিল পাবলিক প্রসিকিউটরের অফিস। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি করতে পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে যে দায়মুক্তি তারা পান, তা প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছিল সে সময়।

আরবি পত্রিকা আল-কাবাস বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, ওই দুই এমপির ’সংসদীয় ইমিউনিটি’ প্রত্যাহার করার আবেদন অনুমোদন করেছে কুয়েতের সংসদীয় বিচার বিষয়ক কমিটি।

এ সিদ্ধান্তের ফলে কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশন এখন তাদের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করতে পারবে।

লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য পাপুলকে গত ৬ জুন রাতে কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির অন্যতম মালিক পাপুলের সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি রয়েছে।

পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ এনেছে কুয়েতি প্রসিকিউশন। ১৭ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর এখন তাকে রাখা হয়েছে কুয়েতের কেন্দ্রীয় কারাগারে।

বাংলাদেশের এই এমপি কুয়েতি কর্মকর্তাদের কীভাবে কত টাকা ঘুষ দিয়েছেন, সে বিষয়ে রিমান্ডে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন তিনি, যা প্রসিকিউটরদের বরাতে প্রকাশ করছে স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।

এর মধ্যে নাগরিকত্ব, পাসপোর্ট ও বসবাসের অনুমতি বিষয়ক দপ্তরের অ্যাসিসট্যান্ট আন্ডার সেক্রেটারি মেজর জেনারেল মাজেন আল-জারাহকে বরখাস্ত করেছে কুয়েত সরকার।

পাপুল ২৩ হাজারের বেশি কর্মীর এন্ট্রি ভিসার অনুমোদনের জন্য যাদের ঘুষ দেওয়ার কথা রিমান্ডে বলেছিলেন, তাদের মধ্যে মাজেন আল-জারাহ একজন।

এছাড়া প্রসিকিউশনের আবেদনে কুয়েতের জনশক্তি কর্তৃপক্ষের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং দেশটির শীর্ষস্থানীয় এক হোম ডেকর কোম্পানির মালিক এক নারী ব্যবসায়ীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।

পাপুলের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণকারী হিসাবে চিহ্নিত কুয়েতি কর্মকর্তাদের একজন ওই নারী ব্যবসায়ীর ভাই। ওই কর্মকর্তাসহ তিনজনকে এর আগে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন দেশটির সরকারি কৌঁসুলিরা।

আরবি পত্রিকা আল কাবাসের বরাতে গাল্ফ নিউজ গত সপ্তাহে জানায়, কুয়েতের বিভিন্ন সরকারি দপ্তর সাম্প্রতিক সময়ে পাপুলের কোম্পানির সঙ্গে অন্তত চারটি চুক্তি নবায়ন করেছে, যেগুলোর মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল।

এর মধ্যে দুটি চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় গত দুই মাসের মধ্যে। এরপর করোনাভাইরাস মহামারীর যুক্তি দিয়ে সেগুলো নবায়ন করা হয়।

এক মিলিয়ন কুয়েতি দিনার বা ৩.২৫ মিলিয়ন ডলারের ওই চার চুক্তির বেশিরভাগই করা হয়েছে পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগের বিষয়ে।

সাধারণ শ্রমিক হিসাবে কুয়েত গিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়া পাপুল ২০১৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। শুধু তাই নয়, নিজের স্ত্রী সেলিনা ইসলামকেও সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য করে আনেন তিনি।

প্রবাসী উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠিত এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান পাপুল, যেখানে তার বড় অঙ্কের শেয়ার রয়েছে। কুয়েতে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোর ঘটনার মধ্যে পাপুলকে ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে পরিচালনা পর্ষদ।

পাপুল ও তার কোম্পানির ব্যাংক হিসাব ইতোমধ্যে জব্দ করেছে কুয়েত কর্তৃপক্ষ। কোম্পানির ওই হিসাবে প্রায় ১৩৮ কোটি টাকা রয়েছে বলে এর আগে পাবলিক প্রসিকিউশনের বরাতে জানিয়েছিল কুয়েতি গণমাধ্যম।

আগামী ৬ জুলাই এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে কুয়েতে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠনের কথা রয়েছে। এর আগ পর্যন্ত পাপুলকে কারাগারেই থাকতে হবে।

আরও পড়ুন

পাপুলকাণ্ডে বরখাস্ত কুয়েতের সেনা কর্মকর্তা