পাপুলকাণ্ডে কুয়েতে জনশক্তি রপ্তানিতে প্রভাব পড়বে না: তথ্যমন্ত্রী

সংসদ সদস্য শহিদ ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে ওঠা অর্থপাচার ও মানবপাচারের অভিযোগ তদন্ত নিয়ে কুয়েত সরকার কঠোর অবস্থান নিলেও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলছেন, এ ঘটনা উপসাগরীয় দেশটিতে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানিতে ‘কোনো প্রভাব ফেলবে না’।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 July 2020, 03:05 PM
Updated : 2 July 2020, 03:05 PM

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “কুয়েতের তদন্তে সেখানকার সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদদের সম্পৃক্ততা বেরিয়ে এসেছে। তাদের সম্পৃক্ততা, সহযোগিতা ছাড়া এই কাজগুলো হত না, সুতরাং তারাও সমভাবে দায়ী।

“সুতরাং এ ঘটনায় আমাদের শ্রমবাজারে অর্থাৎ কুয়েতে কর্মী রপ্তানির ক্ষেত্রে আমাদের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে বলে আমি মনে করি না।”

লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য পাপুলকে গত ৬ জুন রাতে কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির অন্যতম মালিক পাপুলের সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি রয়েছে।

পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ এনেছে কুয়েতি প্রসিকিউশন। ১৭ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর এখন তাকে রাখা হয়েছে কুয়েতের কেন্দ্রীয় কারাগারে।

বাংলাদেশের এই এমপি কুয়েতি কর্মকর্তাদের কীভাবে কত টাকা ঘুষ দিয়েছেন, সে বিষয়ে রিমান্ডে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন তিনি, যা প্রসিকিউটরদের বরাতে প্রকাশ করছে স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।

আরব টাইমস জানিয়েছে, নাগরিকত্ব, পাসপোর্ট ও বসবাসের অনুমতি বিষয়ক দপ্তরের অ্যাসিসট্যান্ট আন্ডার সেক্রেটারি থাকা অবস্থায় মেজর জেনারেল মাজেন আল-জারাহ ঘুষের বিনিময়ে পাপুলের বেশ কিছু কাজে সায় দেন।

পাপুল ২৩ হাজারের বেশি কর্মীর এন্ট্রি ভিসার অনুমোদনের জন্য যাদের ঘুষ দেওয়ার কথা রিমান্ডে বলেছিলেন, তাদের মধ্যে মাজেন আল-জারাহ একজন। 

এদিকে পাপুলকে সুবিধা দিতে গিয়ে কুয়েত প্রশাসনের ভেতরে আরও কিছু কেলেঙ্কারির খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে আসতে শুরু করেছে।

আরবি পত্রিকা আল কাবাসের বরাতে গাল্ফ নিউজ লিখেছে, দেশটির বিভিন্ন সরকারি দপ্তর সাম্প্রতিক সময়ে পাপুলের কোম্পানির সঙ্গে অন্তত চারটি চুক্তি নবায়ন করেছে, যেগুলোর মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল।

এর মধ্যে দুটি চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় গত দুই মাসের মধ্যে। এরপর করোনাভাইরাস মহামারীর যুক্তি দিয়ে সেগুলো নবায়ন করা হয়।

এক মিলিয়ন কুয়েতি দিনার বা ৩.২৫ মিলিয়ন ডলারের ওই চার চুক্তির বেশিরভাগই করা হয়েছে পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগের বিষয়ে।

এর আগে কুয়েতের দুই আইনপ্রণেতার বিরুদ্ধে পাপুলকে সহযোগিতা এবং অর্থপাচারে জড়িত থাকার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয় গত ২৭ জুন।

এছাড়া প্রসিকিউশনের আবেদনে কুয়েতের জনশক্তি কর্তৃপক্ষের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং দেশটির শীর্ষস্থানীয় এক হোম ডেকর কোম্পানির মালিক এক নারী ব্যবসায়ীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।

পাপুলের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণকারী হিসাবে চিহ্নিত কুয়েতি কর্মকর্তাদের একজন ওই নারী ব্যবসায়ীর ভাই। ওই কর্মকর্তাসহ তিনজনকে এর আগে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন দেশটির সরকারি কৌঁসুলিরা।

সাধারণ শ্রমিক হিসাবে কুয়েত গিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়া পাপুল ২০১৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। শুধু তাই নয়, নিজের স্ত্রী সেলিনা ইসলামকেও সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য করে আনেন তিনি।

প্রবাসী উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠিত এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান পাপুল, যেখানে তার বড় অঙ্কের শেয়ার রয়েছে।

পাপুল ও তার কোম্পানির ব্যাংক হিসাব ইতোমধ্যে জব্দ করেছে কুয়েত কর্তৃপক্ষ। কোম্পানির ওই হিসাবে প্রায় ১৩৮ কোটি টাকা রয়েছে বলে এর আগে পাবলিক প্রসিকিউশনের বরাতে জানিয়েছিল কুয়েতি গণমাধ্যম।

আগামী ৬ জুলাই এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে কুয়েতে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠনের কথা রয়েছে। এর আগ পর্যন্ত পাপুলকে কারাগারেই থাকতে হবে।

আরও পড়ুন