অপরিকল্পিত পন্থায় অনলাইন ক্লাস হবে আত্মঘাতী: শিক্ষক নেটওয়ার্ক 

মহামারীরি কারণে বন্ধের সময় অনলাইনে ক্লাস শুরুর আগে সার্বিক প্রস্ততি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে 'বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক' বলেছে, অপ্রস্তুত অবস্থায় তা শুরু করাটা হবে ‘আত্মঘাতী’।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 July 2020, 01:37 PM
Updated : 2 July 2020, 01:37 PM

বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও অনলাইনে ক্লাস শুরুর উদ্যোগ নেওয়ার পর বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিক্রিয়া জানায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এই সংগঠন।

তারা অনলাইনে ক্লাস শুরুর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তুতি, সব শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত ও শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের বাস্তব অসুবিধার কথা বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা।

এই সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত ছিলেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক বখতিয়ার আহমেদসহ এই নেটওয়ার্কে যুক্ত বেশ কয়েকজন শিক্ষক।

সামিনা লুৎফা বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পাঠদান ও পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেশন জট এড়াতে আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসাবে বিশেষ অনলাইন শিক্ষা-কার্যক্রম চালু করা একটি সম্ভাব্য উপায় হতে পারে।

“তবে অভিজ্ঞতা বিবেচনায় আমরা মনে করি, যে কোনো অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের আগে নতুন প্রযুক্তির জ্ঞান-জাগতিক ও একাডেমিক ব্যবহার সম্পর্কে উপযুক্ত ধারণা অর্জন, বাংলাদেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর প্রতিবন্ধকতা ও পূর্বশর্তগুলো চিহ্নিত করা, এবং সে অনুযায়ী প্রতিকার ও পদক্ষেপ নেওয়ার পরই কেবল অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে যাওয়া যেতে পারে।”

সব শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা অনলাইন ক্লাসের একটি বড় বাধা উল্লেখ করে সামিনা লুৎফা বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত যে কোনো শিক্ষা-কার্যক্রমের একটি অলঙ্ঘনীয় ও মৌলিক পূর্বশর্ত হচ্ছে সেখানে সংশ্লিষ্ট সকল শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণের সমান সুযোগ থাকতে হবে।

“শিক্ষার্থীদের মধ্যে ন্যূনতম কোনো বৈষম্য তৈরি করে, এমন শিক্ষা-কার্যক্রম পরিচালনার নৈতিক অধিকার কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরই নেই। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অনলাইনে ক্লাস শুরু করলে বৈষম্য অবশ্যম্ভাবী আকারে দেখা দেবে।”

প্রত্যন্ত

যেসব শিক্ষার্থী প্রত্যন্ত অঞ্চলে রয়েছেন, তাদের বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের এ পরিস্থিতিতে অনলাইনে ক্লাস করা বিঘ্নিত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন সামিনা লুৎফা।

তিনি বলেন, এরপরও অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্তে তাড়াহুড়ো করে লোকদেখানোর জন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয়, অনেক বিভাগ এই পথে হাঁটবে, যা শিক্ষার্থীদের মহামারী বিপর্যস্ত জীবনে আরও মারাত্মক সমস্যা তৈরি করবে।

করোনাভাইরাস সঙ্কটকালে ২০২০ শিক্ষাবর্ষের পরিণতি এবং উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যৎ চিন্তা করে বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছে শিক্ষক নেটওয়ার্ক। 

>> দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকটে থাকা শিক্ষার্থীদের এক বছরের জন্য মাসিক ৩০০০ টাকার বৃত্তির ব্যবস্থা করা।

>> পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপক্ষে ৫০% শিক্ষার্থীকে তথ্য-প্রযুক্তি সক্ষমতা অর্জনের জন্য এক-কালীন ২০,০০০ টাকার বৃত্তির ব্যবস্থা করা। অর্থনৈতিক বিচারে দুঃসাধ্য হলে তা দীর্ঘ মেয়াদী সুদহীন ঋণ হিসেবে দিতে হবে। 

>> সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি কমপক্ষে ৫০% হ্রাস করা। পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকের চাকরি এবং পূর্ণ-বেতন নিশ্চিত করতে হবে। 

>> সব শিক্ষার্থীর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের জন্য বিনামূল্যে ইন্টারনেট নিশ্চিত করা।

>> শুরুতে শুধু স্নাতকোত্তর ক্লাসের শিক্ষার্থীদের নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে অনলাইন শিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে । প্রাযুক্তিক অবকাঠামো নির্মাণের আগে স্নাতক শ্রেণির ক্লাস শুরু করা অনুচিত হবে।

>> শিক্ষকদের সিনক্রোনাস ও অ্যাসিনক্রোনাস কন্টেন্ট নির্মাণে, সিলেবাস, কারিকুলাম পরিবর্তনে সময় এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে, তাদের নেটওয়ার্ক ও ডিভাইসের সহযোগিতা লাগলে তা দিতে হবে, তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং টিচিং ও রিসার্চ এসিস্টেন্টদের জন্য ফান্ড দিতে হবে। 

>> যেহেতু মহামারী দীর্ঘায়িত হতে যাচ্ছে, সব বিশ্ববিদ্যালয়েই আগামী তিন মাসের মধ্যে পরীক্ষা, উপযুক্ত আইসোলেশন সেন্টার এবং জীবন রক্ষাকারী জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি কমপক্ষে ২০২২ সাল পর্যন্ত শারীরিক দূরত্ব ও নিরাপত্তা বজায় রেখে ‘অন-ক্যাম্পাস’ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার ব্যবস্থা করতে হবে।