স্ত্রী-শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে ‘শিক্ষা দিতে’ নিজের সন্তানকে হত্যা!

বিদেশ যেতে চার লাখ টাকা যৌতুক চেয়ে না পেয়ে স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে ‘উচিত শিক্ষা দিতে’ ঢাকার যাত্রাবাড়ীর এক ব্যক্তি নিজের শিশু সন্তানকে হত্যা করেছেন বলে র‌্যাব জানিয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2020, 06:15 PM
Updated : 1 July 2020, 06:15 PM

সন্তান হত্যায় গ্রেপ্তার জুলহাস (৩১) যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি ভাঙ্গারির দোকানে কাজ করেন। মাতুয়াইল এলাকার কোনাপাড়া বস্তিতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকতেন তিনি।

এই হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতার অভিযোগে তার প্রতিবেশী মো. জুয়েল ব্যাপারী (২০) নামের এক টেম্পুর হেলপারকেও গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।              

এই দুজনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মাতুয়াইল মধুবাড়ী ময়লা ডিপোর কাছের গ্রীন মডেল টাউন এলাকার কাঁশবন থেকে তিন বছরের শিশু মাহিমের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. কাইয়ুমুজ্জামান খান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, গত ২৭ জুন দুপুরে এই হত্যাকাণ্ডের পর তার ছেলেকে অপহরণ করে মুক্তিপণ চাওয়া হচ্ছে বলে গল্প ফাঁদেন জুলহাস। এ বিষয়ে ২৯ জুন যাত্রাবাড়ী থানায় একটি জিডিও করেন তিনি। পরে র‌্যাব-১০ এর অফিসে গিয়ে তার ছেলেকে খুঁজে বের করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন জুলহাস।

র‌্যাব কর্মকর্তা কাইয়ুমুজ্জামান বলেন, ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করার একদিন পর মঙ্গলবার জুয়েলকে মাতুয়াইল মৃধাবাড়ি রাজমহল হোটেলের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

“জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে ফুসলিয়ে মাহিমকে তুলে আনা থেকে শুরু করে হত্যা করে মাটিচাপা দেওয়া পর্যন্ত সব কথা খুলে বলে জুয়েল। এর সবই শিশুটির বাবা জুলহাসের পরিকল্পনা মতো হয়েছে বলে জানায় সে। এরপরেই র‌্যাবের একটি দল জুলহাসকে গ্রেপ্তার করে।

“জুলহাস পরে র‌্যাবকে বলেছে, বিদেশে চাকরি করার তার খুব ইচ্ছা। এজন্য সে চার লাখ টাকা যৌতুক হিসেবে স্ত্রীর মাধ্যমে শ্বশুরের কাছে দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছিল। টাকা না দেওয়ায় স্ত্রীকে সে প্রায়ই নির্যাতন করত। অবশেষে স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে ‘উচিত শিক্ষা’ দিতে নিজের ছেলেকে হত্যার পরিকল্পনা করে।”

র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, প্রথমে এই পরিকল্পনার কথা জুলহাস পাশের বাসার জুয়েলকে বলেন। এরপরেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ‍জুয়েল ফুসলিয়ে বাসার সামনে থেকে মাহিমকে মাতুয়াইল বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে যান। সেখানে আগে থেকেই জুলহাস অপেক্ষায় ছিলেন।

পরে ছেলে মাহিমকে সাথে নিয়ে ডেমরার দেইল্লা নামক নির্জন স্থানে নিয়ে যান জুলহাস ও জুয়েল। সাথে করে নিয়ে যাওয়া জুসের মধ্যে ৮টি ঘুমের বড়ি মিশিয়ে দেন তারা। পরে সেই জুস পান করতে দেওয়া হয় মাহিমকে।

“জুস পান করার কিছুক্ষণ পরেই মাহিম নিস্তেজ হয়ে গেলে সন্ধ্যায় তাকে নিয়ে মাতুয়াইল মধুবাড়ী ময়লা ডিপোর কাছে গ্রীন মডেল টাউন এলাকার কাঁশবনে নিয়ে বালুচাপা দিয়ে তারা চলে আসে।”

জুলহাস এই হত্যাকাণ্ডের দুই দিন পর ২৯ জুন জুয়েলের মোবাইল থেকে মুক্তিপণের টাকা চেয়ে নিজের মোবাইলে একটি মেসেজ পাঠান বলে জানান র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক।