সেই আইএস টুপি রহস্যই থেকে গেল

কিছু সময়ের জন্য দেখা গিয়েছিল গুলশান হামলার মামলায় দণ্ডিত দুই জঙ্গির মাথায়, কিন্তু কোথা থেকে সেটা এল, আবার কোথায় চলে গেল, তার কিছুই জানা গেল না।

লিটন হায়দার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2020, 01:01 PM
Updated : 1 July 2020, 01:01 PM

ঘটনার প্রায় সাত মাস পর গুলশান হামলার বার্ষিকীতে এই বিষয়ে জানতে চাইলে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, কিছুই জানা যায়নি, সেটা রহস্য হয়েই রয়েছে।

গত বছরের ২৭ নভেম্বর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার মামলার রায় হয়েছিল।

আদালত রায় দেওয়ার পর দুই জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান ও জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধীর মাথাতে আইএসের চিহ্ন সম্বলিত কালো টুপি দেখা গিয়েছিল, মুখে ছিল আস্ফালন।

তারা দুজনসহ অন্য আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে আনার সময় মাথায় টুপি দেখা যায়নি। রায়ের পর প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় রিগানের মাথায় টুপিটি দেখা গিয়েছিল, পরে প্রিজন ভ্যানে জাহাঙ্গীরকেও সেই টুপি পরে থাকতে দেখা যায়।

ফাঁসির রায়ের পর আদালত প্রাঙ্গণে জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যানের মাথায় ছিল কালো টুপি, যাতে ছিল আইএসের পতাকার চিহ্ন। মধ্যপ্রাচ্যের এই জঙ্গিগোষ্ঠীর ভাবাদর্শে পরিচালিত হয়ে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালিয়েছিল নব্য জেএমবির সদস্যরা।

টুপিটি নিয়ে ব্যাপক আলোচন উঠলে কারাগারে ফেরার পর তাদের তল্লাশি করে কোনো টুপি না পাওয়ার কথা জানায় কারা কর্তৃপক্ষ।

টুপির উৎস খুঁজতে কারা কর্তৃপক্ষ ও গোয়েন্দা পুলিশ আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করে। তবে কোনো কমিটিই কিছু বের করতে পারেনি।

কারা কমিটির প্রধান ছিলেন অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মো. আবরার হোসেন।

তিনি বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা তদন্ত করে দেখেছি, কারাগার থেকে কোনো আসামি এ ধরনের কোনো টুপি পরে আদালতে যায়নি। রায়ের পরও কোনো আসামি এ ধরনের টুপি পরে কারাগারে ঢোকেনি।

“তাছাড়া কারাগারে এ ধরনের কোনো টুপি জঙ্গিদের সরবরাহ করা হয়েছে, এমন কোনো তথ্য প্রমাণ মেলেনি। এসব বিষয় নিশ্চিত হয়েই প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।”

অন্যদিকে গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (গোয়েন্দা) মাহবুব আলম।

তিনি বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “টুপিটি রায়ের দিনই আদালত পাড়ায় জঙ্গিদের কাছে দেওয়া হয়েছে। তবে কে দিয়েছে, কখন দিয়েছে এ ধরনের ‘পিন পয়েন্ট’ আমরা পাইনি।”

মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত জঙ্গি জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধীকে আদালত থেকে কারাগারে নেওয়ার পথে প্রিজন ভ্যানে তার মাথায় দেখা যায় আইএসের পতাকার চিহ্ন সম্বলিত টুপি। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

বাংলাদেশের ইতিহাসে সাড়াজাগানো গুটিকয়েক মামলার একটি গুলশান হামলার এই মামলা ঘিরে সেদিন আদালত প্রাঙ্গণে ছিল ব্যাপক নিরাপত্তা, আসামিদের কড়া পাহারার মধ্যেই আদালতে নেওয়া হয়েছিল।

এর মধ্যে কীভাবে আসামিরা টুপিটি পেল- জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা মাহবুব বলেন, “হৈ চৈয়ের মধ্যে কোনো এক সময় কেউ দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।”

গোয়েন্দা পুলিশ এবং কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেদিন একটি টুপিই ছিল। এজলাস থেকে বের হওয়ার সময় রিগ্যানের মাথায় যেটি ছিল, সেটিই প্রিজন ভ্যানে ওঠার পর জাহাঙ্গীর পরেছিলেন। প্রিজনভ্যানে কারাগারে যাওয়ার সময় কোথাও ফেলে দিয়েছিলেন।

সেসময় আসামিদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থানা পুলিশ সদস্যরা বলেছিলেন, তারা ওই টুপি সাধারণ টুপির মতোই মনে করেছিলেন। সংবাদ মাধ্যমে আসার পর বিষয়টি বুঝতে পারেন।

তখন কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলামও বলেছিলেন, এটা আইএসের টুপি নয়। তারা এ ধরনের টুপি ব্যবহার করে না।

ঘটনার কয়েকদিন পরে ৩ ডিসেম্বর আরেকটি মামলার শুনানিতে এসে রিগ্যান বিচারকের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, আদালত পাড়ায় ‘অচেনা’ এক ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি টুপিটি পেয়েছিলেন।

তাহলে জঙ্গিদের প্রতি সহমর্মী সেই ‘অচেনা ব্যক্তি’টি কে, টুপির রহস্য ভেদ না হওয়ায় তার খোঁজও বের করতে পারেনি পুলিশ।