বিসিএসে কোটা যুগের অবসান

প্রথম শ্রেণির গেজেটেড সরকারি কর্মকর্তা নিয়োগে আর কোনো বিসিএসের ফল প্রকাশে কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে না। সবশেষ ৩৮তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল এই পদ্ধতি অনুসরণে দেওয়া হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2020, 10:07 AM
Updated : 1 July 2020, 10:09 AM

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।

এর পরদিন নবম গ্রেড (আগের প্রথম শ্রেণি) এবং দশম থেকে ১৩তম গ্রেডের (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

আগের কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করে মঙ্গলবার ৩৮তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। ২০১৭ সালের ২০ জুন এই বিসিএসের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল।

৩৮তম বিসিএস থেকেই বিসিএসে কোটা পদ্ধতি শেষ হল কি- এমন জিজ্ঞাসায় পিএসসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক বলেন, “হ্যাঁ, তাই।”

বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “৪০তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল, ফলাফল দেওয়ার সময় সরকারের সর্বশেষ কোটা নীতি ব্যবহার করা হবে। তার মানে সর্বশেষ কোটা নীতিতে যা আছে আমরা তা অনুসরণ করব।”

সব ধরনের কোটা বাতিল করা হলেও প্রতিবন্ধী কোটা বহাল থাকবে বলে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত জানানোর সময় ওই সময়কার মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে পিএসসির চেয়ারম্যান বলেন, “এর উত্তর আমি দিতে পারব না। সরকার যে কোটা নীতি করেছে সেটা অনুসরণ করব।

“৪০তম বিসিএসে সরকারের সর্বশেষ কোটা নীতি অনুসরণ করা হবে। কোটা নিয়ে সরকার যেভাবে সিদ্ধান্ত দেবে আমরা সেটা অনুসরণ করব।”

কমিশনের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ৩৮তম বিসিএসের ফল কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করে দেওয়া হয়েছে। এরপর আর কোনো বিসিএসে কোটা থাকবে না। কারণ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে সরকার সব ধরনের কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করেছে।

“কোটা নিয়ে সরকার যদি নতুন করে কোনো সিদ্ধান্ত না দেয় তবে বিসিএস পরীক্ষায় কোটা ‍যুগের অবসান হল। এখন মেধাবী শিক্ষার্থীদের চাকরি পাওয়ার পথ আগের থেকে সহজ হবে।”

বিসিএসে কতজন মেধায় আর কতজনকে কোটায় নিয়োগ করা হয়, এক সময় তা ফলাফলের সঙ্গে প্রকাশ করা হলেও ৩৪তম বিসিএস থেকে তা আর প্রকাশ করা হচ্ছে না।

সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত ছিল। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পাঁচ শতাংশ, প্রতিবন্ধী এক শতাংশ।

তবে কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া যাওয়ায় ২৮ থেকে ৩৮তম বিসিএসের বিভিন্ন ক্যাডারে ছয় হাজারের মত পদ খালি ছিল।

শুধু কোটার প্রার্থীদের নিয়োগের জন্য ৩২তম বিশেষ বিসিএস নেওয়া হলেও মুক্তিযোদ্ধা কোটার ৮১৭টি, নারী ১০টি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ২৯৮টিসহ এক হাজার ১২৫টি পদ শূন্য রাখতে হয়।

কোটার পরিমাণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবিতে ২০১৮ সালের ‍শুরুর দিকে জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’।

আন্দোলনের এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল সংসদে বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতিই আর রাখা হবে না। তবে পরে সংসদে তিনি বলেন, কোটা পদ্ধতি থাকবে। মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ রাখতে হাই কোর্টের রায় আছে।

নতুন করে আন্দোলন দানা বাঁধার প্রেক্ষাপটে সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনা করতে ওই সময়কার মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের নেতৃত্বে ২০১৮ সালের ২ জুন একটি কমিটি করে সরকার।

ওই বছরের ১৩ অগাস্ট শফিউল সাংবাদিকদের বলেন, তারা সরকারি চাকরির কোটা ‘যতটা সম্ভব’ তুলে দিয়ে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের সুপারিশ করবেন।

এরপর সরকারি চাকরির নবম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেড পর্যন্ত, অর্থাৎ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে কোনো কোটা না রেখে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের নিয়ম চালু করতে ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ জমা দেয় সচিব কমিটি। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়ার পর তা মন্ত্রিসভা বৈঠকে তোলা হলে তাতে সায় মেলে।

সরকারি চাকরিতে অষ্টম থেকে তার উপরে অর্থাৎ প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো কোটা থাকবে না বলে গত ২০ জানুয়ারি সিদ্ধান্ত দিয়েছে মন্ত্রিসভা।