ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের মৃত্যু

দেশের অন্যতম বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান মারা গেছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2020, 08:51 AM
Updated : 1 July 2020, 07:00 PM

বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের চিওড়ায় নিজের বাংলো বাড়িতে তার মৃত্যু হয় বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন ট্রান্সকম গ্রুপের পরিচালক মো. ফখরুজ্জামান।

৭৫ বছর বয়সী লতিফুর রহমান করোনাভাইরাস মহামারী শুরুর পর থেকেই গ্রামের বাড়িতে ছিলেন জানিয়ে ফখরুজ্জামান বলেন, “তবে তিনি কোভিড আক্রান্ত ছিলেন না।”

দীর্ঘদিন ধরেই ফুসফুসের সমস্যা ছিল লতিফুর রহমানের। বার্ধক্যজনিত আরও কিছু জটিলতায় তিনি ভুগছিলেন।

বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে গুলশানের আজাদ মসজিদে জানাজা পর লতিফুর রহমানকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়।

৭৫ বছর বয়সী লতিফুর রহমানের জন্ম ১৯৪৫ সালের ২৮ অগাস্ট ভারতের জলপাইগুড়িতে। ঢাকায় থাকতেন গেণ্ডারিয়ায়।

বাবার পাটকলে কর্মজীবন শুরু করে পরে তিনি বিভিন্ন ব্যবসায় জড়িত হন। বর্তমানে ট্রান্সকম গ্রুপের ব্যবসা ছড়িয়ে আছে ইলেকট্রনিক্স, খাদ্যপণ্য, ওষুধ, চা, বেভারেজ, মিডিয়া, বীমাসহ নয়টি খাতে।

২০১২ সালের এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এ গ্রুপের ১৬টি কোম্পানির বার্ষিক টার্নওভার ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকার মত। সাড়ে ১৩ হাজারের বেশি মানুষ কাজ করছে এসব কোম্পানিতে।

দৈনিক প্রথম আলোর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান মিডিয়াস্টার লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন লতিফুর রহমান। ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান মিডিয়াওয়ার্ল্ডের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন তিনি।

মিডিয়াস্টার এবিসি রেডিও এবং মিডিয়াওয়ার্ল্ড সাপ্তাহিক ২০০০ এরও মূল মালিক প্রতিষ্ঠান।

লতিফুর রহমানের দাদা খান বাহাদুর ওয়ালিউর রহমান ছোট বেলায় চৌদ্দগ্রাম থেকে চলে গিয়েছিলেন আসামের জলপাইগুড়িতে। ১৮৮৫ সালে সেখানে জমি কিনে তিনি চা-বাগান শুরু করেন। লতিফুরের বাবা মুজিবুর রহমান পরে আসামের তেজপুরেও চা-বাগান করেন।

দেশভাগের পর ওই পরিবার ঢাকায় চলে আসে এবং পঞ্চাশের দশকের শুরুতে সিলেটে নতুন করে চা-বাগান করে। পাশাপাশি ভৈরব-আশুগঞ্জে পাটের ব্যবসাও ছিল মুজিবুর রহমানের।

কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে লেখাপড়া করা লতিফুর রহমান দেশে ফিরে পারিবারিক প্রতিষ্ঠান ডব্লিউ রহমান জুট মিলে কাজ শুরু করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার ওপর ওই পাটকল জাতীয়করণ হলে ১৯৭৩ সালে তিনি শুরু করেন ট্রান্সকম গ্রুপ গড়ে তোলার কাজ।

চা রপ্তানি দিয়ে শুরু করে ধীরে ধীরে বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য আমদানি ও বিপণনে এ গ্রুপের ব্যবসা কেন্দ্রীভূত হয়।

আশির দশকে ট্রান্সকম ছিল বাংলাদেশে নেসলের একমাত্র আমদানিকারক ও পরিবেশক। নব্বইয়ের দশকে লতিফুর মার্কিন ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানি স্মিথ, ক্লাইন অ্যান্ড ফ্রেঞ্চের বাংলাদেশ ইউনিটের ব্যবসা কিনে নেন, যা এখন এসকেএফ নামে পরিচিত।

১৯৯৩ সালে বাংলাদেশে ফিলিপস ইলেকট্রনিক্স ও বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবসা কিনে নিয়ে ট্রান্সকম ইলেকট্রনিক্স ও বাংলাদেশ ল্যাম্পসের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে পিৎজা হাট, কেএফসি, পেপসিকোর স্থানীয় পার্টনার ট্রান্সকম।

কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনে নেতৃত্ব দেয়া লতিফুর রহমান মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের (এমসিসিআই) সাত বারের এবং বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন দুইবার।

ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের সহ-সভাপতি ছাড়াও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ চা অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটিতে ছিলেন তিনি। 

নেসলে বাংলাদেশ, হোলসিম বাংলাদেশ এবং ন্যাশনাল হাউজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যানের দ্বায়িত্ব পালন করা লতিফুর রহমান লিনডে বাংলাদেশের (সাবেক ব্রিটিশ অক্সিজেন কোম্পানি) পরিচালক এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় এনজিও ব্র্যাকের গভর্নিং বোর্ডেরও সদস্য ছিলেন তিনি।

ব্যবসায় সামাজিক দায়বদ্ধতা ও নৈতিক মান রক্ষার জন্য ২০১২ সালে অসলো বিজনেস ফর পিস অ্যাওয়ার্ড পান লতিফুর রহমান।

স্ত্রী শাহনাজ রহমান, দুই মেয়ে সিমিন হোসেন ও শাজরেহ হক এবং ছেলে আরশাদ ওয়ালিউর রহমানকে রেখে গেছেন লতিফুর রহমান। তাদের আরেক মেয়ে শাজনীন রহমান ১৯৯৮ সালে বাড়ির এক পরিচারকের হাতে খুন হন।

চার বছর আগে এই দিনে গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনায় লতিফুর রহমানের নাতি ফারাজ আইয়াজ হোসেনের মৃত্যু হয়।