সংসদে তোপের মুখে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, অপসারণ দাবি

করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় ‘অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম-দুর্নীতি ও সমন্বয়হীনতার’ অভিযোগ তুলে সংসদে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের অপসারণ দাবি করেছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 June 2020, 12:09 PM
Updated : 30 June 2020, 01:10 PM

জাহিদ মালেককে এই মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী করার দাবিও উঠেছে।

তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে বিগত তিন মাসে মহামারী মোকাবেলায় সক্ষমতা বৃদ্ধির দিকগুলো তুলে ধরেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সবাই মিলে কাজ করেছে বলেই ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের চেয়ে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যু হার কম বলেও দাবি করেছেন তিনি।

মঙ্গলবার নতুন অর্থবছরের বাজেটের মঞ্জুরি দাবি ও ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করেন কয়েকজন সংসদ সদস্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ সময় সংসদে উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীও।

মঞ্জুরি দাবির ওপর ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, “আমাদের সবই করতে হয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে। প্রধানমন্ত্রীকে যদি সব করতে হয় তাহলে মন্ত্রণালয়-অধিদপ্তর এত রাখার দরকার নেই। রোজার মাসে দেখেছি চার ঘণ্টা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশাসকদের সাথে কথা বলেছে। কীভাবে হাঁচি দিতে হবে তাও শিখাইতেছেন। দূরত্ব রেখে কীভাবে থাকতে হবে, কী খেতে হবে তাও শিখাচ্ছেন।

“অথচ আমাদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যদি হেলিকপটার দিয়ে লিফলেট গ্রামেগঞ্জে ছিটিয়ে দিত তাতেও কিন্তু সচেতন হত। আমাদের অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। সমন্বয়হীনতার জন্য দেখেছি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন, তিনি জানেন না কোথায় কী হচ্ছে। এই সমন্বয়হীনতার জন্য প্যাঁচ খেয়ে গেছে।”

বর্তমান সংকট মোকাবেলায় দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলো অধিগ্রহণ করার প্রস্তাব দেন ফিরোজ রশীদ।

সংসদে স্বাস্থ্যমন্ত্রী

তিনি বলেন, “প্রাইভেট হাসপাতাল আমরা অধিগ্রহণ করতে পারতাম। আগে থেকে যদি জানতে পারতাম বেড কত, আইসিইউ কয়টা, ভেন্টিলেশন কয়টা- সমস্ত ডেটা যদি থাকত। সরকারি হাসপাতালের হয়ত আছে, কিন্তু  প্রাইভেট হাসপাতালেরটা নেই। এগুলো যদি পূর্বেই রেখে দিতেন তাহলে এ অবস্থা হত না। আমরা চেয়েছিলাম হাসপাতালগুলো অধিগ্রহণ করুক। করে কোভিড, নন-কোভিড আলাদা করে দিক। সিএমএইচ থেকে একজনকে দায়িত্ব দিক।”

বেসরকারি হাসপাতালে করোনাভাইরাস চিকিৎসায় খরচের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “প্রাইভেট হাসপাতালগুলো সোনার হরিণ। কাউকেই ভর্তি করে না। কেউ কেউ ভর্তি হলে যদি বেঁচে থাকেন তবে ৩-৪-৫-৭ লাখ টাকা দিতে হয়। ঘুম থেকে জাগলে সকাল, না জাগলে পরকাল। কোনো সমন্বয় নেই। এত মন্ত্রণালয় অধিদপ্তর রেখে লাভ কী? খামোখা পয়সা খরচ করছি।”

জাতীয় পার্টির আরেক সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সময়মতো ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ তুলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমালোচনা করেন।

তিনি বলেন, “ফেব্রুয়ারি মাসের ২২ তারিখে পয়েন্ট অব অর্ডারে বলেছিলাম করোনার বিষয়ে।  বলেছিলাম, এটা কী জিনিস? খায় না কি পরতে হয়? স্বাস্থ্যমন্ত্রী যেন প্রেস কনফারেন্স বা অন্যভাবে জানায়, কী পদক্ষেপ নিতে হবে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা তখন নেওয়া হয়নি। নেওয়া হলে এত গুরুতর অবস্থা হত না। মার্চের ৩ তারিখে স্বাস্থ্যের মহাপরিচালক বললেন, বাংলাদেশের গরমে করোনা আসতে আসতে মরে যাবে। সমস্যা হবে না। ২৫ জুন সেই ব্যক্তি বললেন, ২-৩ বছরের আগে যাবে না। আমি জানি না, এই সমস্ত সরকারি অফিসার কী লেখাপড়া করে, কীভাবে কথা বলে?”

পিপিই কেনায় ‘দুর্নীতির’ কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, “করোনা শুরু হলে পিপিই দেওয়া হল, একদম নিম্নমানের। আমার করিমগঞ্জ উপজেলায় এক সপ্তাহের মধ্যে ডাক্তার নার্স সব আক্রান্ত হলেন। যিনি দিলেন সেই জেএমআই দুঃখ প্রকাশ করলেন। ইতোমধ্যে ডাক্তার যে আক্রান্ত হল, মারা গেল কে জবাব দেবে? কিছু দিন আগে এক পরিচালক বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রকল্প থেকে পিপিই কিনলেন। সেটা প্রথম ধাপের। ডাক্তার নার্সদের চতুর্থ ধাপের ব্যবহার করতে হয়। উনি দিলেন প্রথম ধাপের। সারা দেশে দিলেন। সিভিল সার্জনরা গ্রহণ করেন নাই। প্রশ্ন করলে বললেন, ভুল হয়ে গেছে। এই ভুলের ক্ষমা নেই। ভুলের জন্য অনেক আক্রান্ত হচ্ছে।

“প্রধানমন্ত্রী এত খবর রাখছেন। আপনার স্বাস্থ্যমন্ত্রীতো একবার ঢাকা মেডিকেলে, একবার সোহরাওয়ার্দী, হৃদরোগ হাসপাতাল, পিজিতে ভিজিট করা উচিত ছিল। আমাকে ডাক্তাররা বলেছেন, মন্ত্রী যদি যেত তারা অনুপ্রাণিত হত। শুধুমাত্র ইক্যুইপেন্ট কিনে হয় না।”

মন্ত্রী-এমপি-সরকারি কর্মচারী সবাইকে বাধ্যতামূলক সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার দাবি জানিয়ে চুন্নু বলেন, “যেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী হোক সাবেক বা বর্তমান, যারই যখন অসুখ করে সে যায় সিএমএইচে। সরকারি হাসপাতালে যায় না। আমার মনে হয়, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দেন এমপি, মন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বিদেশে যাবে না।”

বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমান সময়ে রোগী ভর্তি করছে না অভিযোগ করে সেগুলোকে জবাবদিহির মধ্যে আনার দাবি জানান মুজিবুল হক চুন্নু।

জাতায় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বলেন, “আগে থেকেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিয়ে কথা বলছিলাম। ৩৭ লাখ টাকার পর্দা। আগে থেকেই বলছিলাম। সর্বশেষ গতকাল প্রধানমন্ত্রী সংসদে বক্তব্য রেখেছেন। ডাক্তারদের ২০ কোটি টাকা থাকা-খাওয়ার বিল। সেখানে একটা কলার দাম দুই হাজার টাকা। একটা ডিমের দাম ১ হাজার টাকা এবং এক স্লাইস পাউরুটির দাম তিন হাজার টাকা। করোনাকালেও এই অবস্থা!

“কদিন আগে দেখেছি, জিম্বাবুয়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে পিপিই ও কিট কেনায় দুর্নীতির দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের এই রুগ্ন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুরাবস্থা করনোকালে এসে… মানুষ বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মীনা কার্টুনের টিয়া পাখি মিঠুর মতো। মিঠু ঘুরে ঘুরে বেড়ায় আর মীনা চলতে থাকে। টিয়া পাখি দ্বারা চলছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আমি মফস্বলের মানুষ। মন্ত্রীর সাথে বিরোধ নেই। বাজারে বাজারে ঘুরি। আমাকে মানুষ বলেছে, জেলা সদরে আইসিইউ নেই, অক্সিজেন নেই, আপনারা সংসদে বলেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যে অবস্থা যদি সুযোগ থাকে… গ্রামের লোক বলে প্রধানমন্ত্রীকে বলতে, স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অন্য কোনো দায়িত্ব দিয়ে সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীকে দেওয়ার জন্য লোকে বলে। মানুষের কথাটা নিবেদন করলাম।”

জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, “স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য খারাপ, এতে কোনো সন্দেহ নেই। স্বাস্থ্যমন্ত্রীরও চিকিৎসা প্রয়োজন। একটা ডিজরাপটিভ ইন্টারভেনশন দরকার। ট্রাডিশনাল যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এটা দিয়ে ১৮ কোটি লোকের স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া অসম্ভব। এখন সময় এসেছে, মেডিকেল সার্ভিসের ‘টপ টু টো’ মেডিকেল এক্সপার্টদের হাতে রাখা প্রয়োজন। আমাদের কোনো স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ নিয়োগ দেওয়া হয় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সাবেজক্ট আছে, হেলথ ইকোনমিকস, চমৎকার সাবজেক্ট। সেখান থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আদৌ নিয়োগ দেওয়া হয় কি না আমরা জানি না।

“ডাক্তার নিয়োগের ক্ষেত্রে আন্তঃমন্ত্রণালয় বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী যদি চানও একখনই ডাক্তার নিয়োগ দেবেন, সেটা কেবিনেট, জনপ্রশাসন হয়ে আসতে হয়। এই স্বাধীনতা না থাকেল একটা মন্ত্রণালয় চাইলেও ভালো কাজ করতে পারবে না। চাইবে কি না সেটা পরের কথা।”

বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য। সুচিকিৎসার পূর্বশর্ত সঠিক রোগ নির্ণয়। টেকনোলজিস্টদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এরা সঠিক রোগ নির্ণয় করে ডাক্তারের কাছে রোগী পাঠায়। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে অবকাঠামো আছে। কিন্তু টেকনোলজিস্টদের সংখ্যা এত সীমিত! ১২টার পর পরীক্ষার সুযোগ থাকে না। এটা ভাবতে হবে। ২৪ ঘণ্টা পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে গরিব-সাধারণ মানুষ সেবা পাবে। মন্ত্রণালয়েরও আয় বাড়বে।”

তিনি অভিযোগ করে বলেন, “আমাদের সম্পূর্ণ চিকিৎসা ব্যবস্থা ভারতনির্ভর হয়ে গেছে। চিকিৎসা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। সঙ্কটগুলো ঠিক করতে হবে। করোনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। কিন্তু আক্রান্ত মানুষদের জন্য কতটুকু ব্যবস্থা করতে পারছি সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। আজকে এত সমালোচনা সেজন্যই। ৬ মাস হয়ে গেল বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি। ২৩% পজিটিভ আসছে। ফলাফল আসছে ৫-৭ দিন পর। প্রতিদিন সকালে দুঃসংবাদ শুনি। যথাসময়ে ফলাফল পেলে আক্রান্ত কম হত। মন্ত্রণালয় এবং অধিপ্তরের সমন্বয়হীনতা দ্রুত সংস্কার করেন।”

জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি, করোনাভাইরাস মহামারী নিয়ে মন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর জবাব

বিরোধী সংসদ সদস্যদের সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে ভেন্টিলেশনে যাওয়া রোগীদের ‘প্রায় সবাই মারা গেছেন’ বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর সঙ্কট নিয়ে অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “আইসিইউ নিয়ে অনেক কথা হল। ভেন্টিলেটর নিয়ে বিরাট হৈ চৈ। কিন্তু দেখা গেছে ভেন্টিলেটরের কোনো প্রয়োজনই নেই। ভেন্টিলেটরে যারা গেছেন তাদের প্রায় সকলেই মৃত্যুবরণ করেছেন। আমাদের ৪০০ ভেন্টিলেটর আছে। এর মধ্যে ৫০টিও ব্যবহার হয়নি। সাড়ে তিনশ ভেন্টিলেটর খালি পড়ে আছে। কারণ তখন মানুষ এটা জানত না।”

কোভিড-১৯ এর চিকিৎসার ওষুধ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বার বার তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে বলেও উল্লেখ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “করোনার কী চিকিৎসা লাগবে ডব্লিউএইচও তা বারে বারে চেঞ্জ করেছে। আমরাও সাথে সাথে পরিবর্তন করেছি। কেউ কিন্তু আগে বলেনি পিপিই লাগবে। যখন বলা হল তখন সারা বিশ্ব লকড-ডাউন। এই লকডাউনের কারণে আমরা পিপিই পাচ্ছিলাম না। যন্ত্রপাতি পাচ্ছিলাম না। পরে আস্তে আস্তে ব্যবস্থা করছি। এখন আর সেই অভিযোগ নেই। ইতোমধ্যে প্রায় ৩০ লাখ পিপিই সরবরাহ করা হয়েছে। এখন হাই ফ্লো অক্সিজেনের প্রয়োজনের কথা বলা হচ্ছে। আমরা এক হাজার অক্সিজেনের অর্ডার দিয়েছি। প্রায় ১০ হাজার নতুন সিলিন্ডার বানানো হয়েছে।”

‘সরকার কাজ করেছে বলেই মৃত্যুর হার কম’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, “সংসদ সদস্যরা সংসদে আমাদের কেবল দোষারোপ করে গেছেন। আমরা কী কাজ করেছি তা আসেনি তাদের বক্তব্যে। কোভিড আসার শুরু থেকেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। চীনে কোভিড দেখা দেওয়ার পরপরই আমরা পোর্টগুলোতে স্ক্রিনিংসহ সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। প্রত্যেক জেলা-উপজেলার হাসপাতালে কোভিডের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করেছি। আমরা জাতীয় পর্যায়ে কমিটি তৈরি করেছি। ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে আমাদের দেশে করোনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৬ শতাংশ। এই হার ভারতে ৬ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ১৫ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ১৪ শতাংশ। এটা এমনিতেই হয়নি। সকলে কাজ করেছে বলেই এটা হয়েছে।”

চিকিৎসক আক্রান্ত হওয়ার কারণ সম্পর্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “পিপিই কীভাবে পরতে হবে এবং খুলতে হবে এই বিষয়টি জানা না থাকার কারণেই তারা আক্রান্ত হয়েছে। এজন্য আমরা তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। ফলে আক্রান্তের হার কমে গেছে।”

তিনি আরও বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে আমরা ইতোমধ্যে কোভিডের জন্যই শুধু দুই হাজার নতুন ডাক্তার নিয়োগ দিয়েছি। ছয় হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আরও দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছেন। হটলাইনে এক থেকে দুই লাখ মানুষ ফোন করে স্বাস্থ্য পরামর্শ নিচ্ছেন।”

‘৮০ শতাংশ’ রোগীর লক্ষণ নেই

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “৮০ শতাংশ করোনাভাইরাস রোগীর কোনো লক্ষণ দেখা দেয় না। ১৫ শতাংশের মাইল্ড লক্ষণ দেখা দেয়। আর ৫ শতাংশের জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে। আমরা ৮০ শতাংশ রোগীকে বাসায় রেখে টেলিমেডিসিন সেবার মাধ্যমে চিকিৎসার ব্যবস্থা করছি।টেলিমেডিসিন চালু করেছি।”

‘কোটি কোটি লোককে টেস্ট সম্ভব নয়’

দেশে ‘টেস্টিং ক্যাপাসিটি’ বাড়ছে উল্লেখ করে জাহিদ মালিক বলেন, “আমাদের মাত্র একটি টেস্টিং ল্যাব ছিল। দেড় মাসে আমরা এখন ৬৮টি ল্যাব করেছি। দিনে মাত্র দেড়শটা টেস্টের ব্যবস্থা ছিল। সেটা এখন ১৮ হাজারে উন্নীত হয়েছে। এটা এমনিতেই হয়নি। আমরা জানি আমাদের আরও টেস্ট দরকার। আরও করলে ভালো হয়। কিন্তু কোটি কোটি লোককে টেস্ট করতে পারবেন না। এটা আমাদের মানতে হবে।”

বেসরকারি হাসপাতাল ‘বিলটা একটু বেশি করছে’

সরকারের উদ্যোগের ফলে বেসরকারি হাসপাতালগুলো করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় নিয়োজিত হয়েছে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, “বেসরকারি হাসপাতালগুলো প্রথমে করোনা চিকিৎসার উদ্যোগ নেইনি। আমরা তাদের নিয়ে এসেছি। এখন তারা কোভিড চিকিৎসা দিচ্ছে। তবে এটা ঠিক, তারা বিলটা একটু বেশি করছে। কোভিড চিকিৎসায় ব্যয় একটু বেশি। আমরা বলেছি, আমরা চার্জ ঠিক করে দেব। এই সময়ে আপনারা লাভের চিন্তা করবেন না। মানুষকে সেবা দিন।”

‘৪০% বেড খালি পড়ে আছে’

করোনাভাইরাস আক্রান্তরা চিকিৎসা পাচ্ছে না এই অভিযোগ আর ‘কোথাও নেই’ বলে দাবি করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আমাদের মোট বেডের ৬০ শতাংশে এখন রোগী আছে। ৪০ শতাংশ বেড এখনও খালি পড়ে রয়েছে। প্রায় ১৪ হাজার বেড করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত আছে। সেখানে রোগী আছে চার হাজার।”

স্বাস্থ্য বিধি মানলে সংক্রমণ করবে

জাহিদ মালেক বলেন, “বিশ্বের কোথাও করোনার চিকিৎসা ঠিক মতো নেই। টিকাও আবিষ্কার হয়নি। বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় আমাদের মৃত্যুর হার কম। তবে জীবন-জীবিকার বিষয় আছে। দোকান খুলেছে, ঈদে আমরা বাড়ি যাই। সেই কারণে আমাদের সংক্রমণের হার কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু মৃত্যুর হার তুলনামুলকভাবে কম। মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখলে এই সংক্রমণের হারও কমবে বলে আশা করি।”

‘সমন্বয়হীনতা নেই’

সংসদ সদস্যদের সমন্বয়হীনতার অভিযোগ অস্বীকার করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাদের মধ্যে কোনো সমন্বয়হীনতা নেই। পাঁচ মাস কিন্তু আমরাই মাঠে আছি। ২৫ দিনে বসুন্ধরায় দুই হাজার বেডের হাসপাতাল বানিয়েছি। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। সকলের সহযোগিতা পেলে কোভিড চলে যাবে। স্বাভাবিকভাবে অর্থনীতি এগিয়ে যাবে।”

সংবাদ মাধ্যমের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “প্রেস মিডিয়া অনেক কিছু বলে। প্রেস মিডিয়া যদি সব সময় মৃত্যুর খবর, দুঃসংবাদ দিতে থাক, আমরা মনে করি তরুণ প্রজন্ম মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে, বয়স্করাও অসুস্থ হয়ে যাবে। আমরা যারা আছি অসুস্থ হয়ে যাব। পজিটিভলি কথা বলতে হবে। ডাক্তার-নার্স যারা কাজ করে তাদের অনুপ্রাণিত করলে আরও ভালো কাজ করবে। সব সময় সমালোচনা করলে সঠিক হবে না। সকলের সহযোগিতা পোলে কোভিড থেকে ছুটি পাব।”

ঢাকা মেডিকেলের দুর্নীতির অভিযোগ ‘টোটালি রং’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকা-খাওয়ার বিল নিয়ে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তা সঠিক নয় বলে দাবি করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “ঢাকা মেডিকেল কলেজের থাকা-খাওয়ার বিষয় নিয়ে যে কথা হয়েছে আমি খোঁজ নিয়েছি। কাল রাতে আমি এটা দেখেছি। ৫০টি হোটেল ভাড়া হয়েছে। সেখানে তিন হাজার ৭০০ মানুষ এক মাস থেকেছে। প্রত্যেকটি রুমের ভাড়া ১১০০ টাকা। খাওয়ার খরচ যেটা বলা হয়েছে তা টোটালি রং। সেখানে দিনের তিনটি মিলের জন্য খরচ ৫০০ টাকা হয়েছে। দুর্নীতি করার সুযোগ নেই।”