প্রত্যাশিত গড় আয়ু বেড়ে ৭২.৬ বছর

বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু আরও কিছুটা বেড়ে ৭২ দশমিক ৬ বছর হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএস।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 June 2020, 07:51 AM
Updated : 30 June 2020, 11:18 AM

পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিচালিত ‘মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস অব বাংলাদেশ (এমএসভিএসবি) তৃতীয় পর্যায়’ প্রকল্পের মাধ্যমে পরিচালিত এক জরিপের ফলাফলে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রকল্প পরিচালক একেএম আশরাফুল হক মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস এর সম্মেলন কক্ষে ২০১৯ সালের এই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেন।

এর আগে ২০১৮ সালের জরিপে বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু পাওয়া গিয়েছিল ৭২ দশমিক ০৫ বছর।

আশরাফুল হক বলেন, এবারের জরিপে পুরুষের ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত গড় আয়ু বেড়ে ৭১ দশমিক ১ বছর এবং নারীদের ৭৪ দশমিক ২ বছর হয়েছে।

আগের জরিপে পুরুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ছিল ৭০ দশমিক ৬ বছর; আর নারীদের ৭৩ দশমিক ৫ বছর।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ধারাবাহিকভাবেই বাড়ছে। শিশুমৃত্যুর হার কমে আসায় এবং দেশে জটিল রোগের চিকিৎসার সুযোগ বৃদ্ধি পাওয়াকে এর অন্যতম কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

আশরাফুল হক জানান, ১৯৮০ সালে শুরু হওয়া এই জরিপ তারা প্রতিবছর পরিচালনা করেন। শুরুতে মাত্র ১০৩টি নমুনা এলাকা নিয়ে এ জরিপ চালানো হলেও এখন নমুনা এলাকার সংখ্যা বেড়ে ২০১২টি হয়েছে। চন্দ্রশেখর ও ডেমিং এর দ্বৈত পদ্ধতি অনুসরণ করে নমুন এলাকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

২০১৯ সালের এই প্রতিবেদন তৈরিতে ২০১২টি নমুনা এলাকার ২ লাখ ৯৮ হাজার ৮১০টি খানা থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন বিবিএস কর্মীরা।

সেই তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনে ২০১৯ সালে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা (আনুমানিক) ধরা হয়েছে ১৬ কোটি ৬৫ লাখ। এর মধ্যে পুরুষ ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৩০ হাজার; আর ৮ কোটি ৩১ লাখ ৭০ হাজার জন নারী।

২০১৮ সালের প্রতিবেদন তৈরির সময় দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৪৬ লাখ ধরা হয়েছিল। সেই হিসাবে জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধির হার দাঁড়াচ্ছে ১ দশমিক ৩২ শতাংশ।

এবারের জরিপ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতি হাজারে স্থুল জন্মহার ১৮ দশমিক ১; আর স্থুল মৃত্যু হার প্রতি হাজারে ৪ দশমিক ৯। ২০১৮ সালে স্থুল মৃত্যু হার ছিল ৫, তার আগের বছর ছিল ৫ দশমিক ১।

বিবিএস বলছে, বর্তমানে দেশে প্রতি হাজারে ২১টি শিশু এক বছর বয়স হওয়ার আগেই মারা যায়। ২০১৮ সালে ছিল এই সংখ্যা ছিল ২২টি।

সাত বছরের বেশি বয়সী জনসংখ্যার মধ্যে সাক্ষরতার হার ৭৪ দশমিক ৪ শতাংশ, যা আগের বছর ৭২ দশমিক ৩ শতাংশ ছিল।

২০১৯ সালের জরিপে দেখা গেছে, পুরুষদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক ৫ শতাংশ, আর নারীদের ক্ষেত্রে ৭২ দশমিক ৩ শতাংশ।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশের পুরুষের ক্ষেত্রে প্রথম বিয়ের গড় বয়স কমে আসছে। ২০১৫ সালে যেখানে ২৫ দশমিক ৩ বছর ছিল, ২০১৯ সালে তা কমে ২৪ দশমিক ২ বছর হয়েছে।

নারীদের ক্ষেত্রে প্রথম বিয়ের গড় বয়স ২০১৩ সালে ছিল ১৮ দশমিক ৪ বছর, এখন তা ১৮ দশমিক ৫ বছর হয়েছে।

দশ বা তার কম বয়সীদের বাদ দিয়ে দেশের জনসংখ্যার ৩৮ দশমিক ৯ শতাংশ পুরুষ এবং ২৫ দশমিক ১ শতাংশ নারী অবিবাহিত। ৫৯ দশমিক ৩ শতাংশ পুরুষ ও ৬৩ দশমিক ৯ শতাংশ নারী বিবাহিত এবং ১ দশমিক ৮ শতাংশ পুরুষ ও ১১ শতাংশ নারী বিপত্নীক/বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত বা বিচ্ছিন্ন থাকছেন।

পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে শহরে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হার কমলেও গ্রামে বেড়েছে।

সর্বশেষ জরিপে শহর অঞ্চলের ৬৪ দশমিক ৪ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলের ৬২ দশমিক ৭ শতাংশ নারী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করার কথা বলেছেন। ২০১৭ সালে এই হার ছিল শহরে ৬৬ দশমিক ৩ শতাংশ, গ্রামে ৫৯ দশমিক ৪ শতাংশ।

প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, প্রতিটি খানার সদস্য সংখ্যা এখন গড়ে ৪ দশমিক ২ জন। এর মধ্যে ৮৫ দশমিক ৪ শতাংশ খানা পুরুষ প্রধান। ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ খানায় প্রধান হলেন নারী।

২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি হাজারে ৮ দশমিক ৪ জন মানুষ কোনো না কোনোভাবে প্রতিবন্ধী।

দেশের মোট জনসংখ্যার ৮৮ দশমিক ৪ শতাংশ মুসলমান এবং ১১ দশমিক ৬ শতাংশ অন্যান্য ধর্মের অনুসারী।

দেশের ৯৩ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ বিদ্যুতের আলো ব্যবহার করেন। সৌর বিদ্যুতের আলো ব্যবহার করেন ৩ দশমিক ৩ শতাংশ; আর ২ দশমিক ৯ শতাংশ বাতি জ্বালাতে এখনও করোসিনের ওপর নির্ভর করেন।

স্যানিটারি টয়লেট ব্যবহার করেন দেশের ৮১ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ। অন্যান্য ধরনের টয়লেট ব্যবহার করেন ১৭ শতাংশ। এখনও ১ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ উম্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ করার কথা বলেছেন জরিপে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী এই জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।