ঢাকা সদরঘাটের কাছে চাঁদপুর থেকে আসা ‘ময়ূর-২’ এর ধাক্কায় মুন্সীগঞ্জ থেকে যাত্রী নিয়ে আসা ছোট লঞ্চ ‘এমএল মর্নিং বার্ড’ যেভাবে বুড়িগঙ্গায় ডুবে গেছে, তা ‘পরিকল্পিত এবং হত্যাকাণ্ড’ বলে মনে হয়েছে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর কাছে।
Published : 29 Jun 2020, 08:35 PM
মুন্সিগঞ্জের কাঠপট্টি থেকে অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে সোমবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে মর্নিং বার্ড। সকাল সোয়া ৯টার আগে আগে লঞ্চটি ঢাকার শ্যামবাজারের কাছাকাছি চলে আসে। সদরঘাট টার্মিনাল থেকে কয়েকশ গজ দূরে থাকতে ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় সেটি ডুবে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চাঁদপুর থেকে আসা ময়ূর-২ ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ঘাটে যাত্রী নামিয়ে অন্য ঘাটে গিয়ে বার্থিং করে। পরে আবার যাত্রী তোলার জন্য ব্যাক গিয়ারে চাঁদপুর ঘাটে আসছিল। তখনই মর্নিং বার্ডকে সেটি ধাক্কা দেয়।
ফায়ার সার্ভিস, নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড, নৌ পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএর কর্মীরা দুপুর পর্যন্ত নদী থেকে ৩২ জনের লাশ উদ্ধার করেছেন। আর কতজন নিখোঁজ আছেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
আকারে বহুগুণ বড় লঞ্চ ‘ময়ূর-২’ এর ধাক্কায় মুন্সীগঞ্জ থেকে যাত্রী নিয়ে আসা ছোট লঞ্চ ‘ মর্নিং বার্ড’ কেমন করে মুহূর্তের মধ্যে বুড়িগঙ্গায় ডুবে গিয়েছিল, সেই দৃশ্য ধরা পড়েছে ঢাকা সদরঘাটের একটি সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে।
ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “তদন্ত কমিটি গঠন করলেও, আমরা প্রাথমিকভাবে যতটুকু আঁচ করতে পেরেছি, যেটা আমি বললাম, যে এটা পরিকল্পিতভাবে মনে হয়েছে আপাতদৃষ্টিতে।
“আমরা সঠিক তদন্ত করে যারা এটার সঙ্গে দায়ী তাদের বিচার করব। যারা মালিক আছে, পরিচালনার ক্ষেত্রে তাদের ব্যর্থাতর কোনো ধরনের ক্লু যদি পাওয়া যায়, আমরা তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এই ব্যাপারে কোনোভোবে ছাড় দেওয়া যাবে না।”
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন) মো. রফিকুল ইসলাম খানকে আহ্বায়ক এবং বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (নৌ নিরাপত্তা) মো. রফিকুল ইসলামকে সদস্য সচিব করে গঠিত সাত সদস্যের ওই তদন্ত কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন জসিম উদ্দিন সরকার, বিআইডব্লিউটিসির প্রধান প্রকৌশলী, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পর্যায়ের একজন প্রতিনিধি, ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের একজন প্রতিনিধি এবং নৌ পুলিশের একজন প্রতিনিধি ।
এই কমিটি দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটন, দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তি-সংস্থাকে সনাক্তকরণ এবং দুর্ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় উল্লেখ করে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ দেবে।
ময়ূর-২ লঞ্চটি ঘটনার পরপরই জব্দ করা হয়েছে জানিয়ে নৌ পুলিশের প্রধান ডিআইজি আতিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “লঞ্চের মাস্টারসহ অন্যরা পালিয়ে গেছে। আমরা লঞ্চে থাকা দুইজন স্টাফকে গ্রেপ্তার করেছি। জব্দ করা লঞ্চটি এখন লালকুঠি ঘাটে আছে।
প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জানান, এ ঘটনায় নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেড়লাখ টাকা করে দেওয়া হবে। এছাড়া সৎকারের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে কল্যাণ তহবিল থেকে প্রত্যেক পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।