জোন ভাগ করে ‘লকডাউনে’ আরও সমন্বয় চান স্থানীয় সরকারমন্ত্রী

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সারা দেশকে রেড, ইয়োলো ও গ্রিন জোনে ভাগ করে বিধি-নিষেধ আরোপের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেখানে আরও সমন্বয় প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 June 2020, 08:38 PM
Updated : 27 June 2020, 09:09 PM

শনিবার আওয়ামী লীগের আয়োজনে মহামারী ও পরবর্তী বাংলাদেশ নিয়ে ওয়েবনিয়ার ‘বিয়ন্ড দ্য প্যানডেমিক’-এর সপ্তম পর্ব ‘জনস্বাস্থ্য ও স্থানীয় সরকার’ শিরোনামের আলোচনায় যোগ দিয়ে তিনি একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদের সঞ্চালনায় এই ভার্চুয়াল আলোচনায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান (লিটন), নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটুও ছিলেন।

জোনিং নিয়ে আরও ‘বিস্তৃত পরিসরে’ এগোনোর পরামর্শ দিয়ে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, “এখানে কথাটা যদি ওনারা আমাকে বলতে না পারে, আমি যদি ওনার কথা না জানি তাহলে হবে কি ওনারা আমাদের ইনপুট দিতে পারবে না, আমিও ওনাদের ইনপুট দিতে পারব না। এটার জন্য আমাদের একটি সমন্বিত প্যাকেজ নিয়ে আগানো দরকার।”

ঢাকায় ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত এলাকাগুলোতে ‘লকডাউন’ বাস্তবায়নে বিলম্ব নিয়ে মেয়রদের ভূমিকা সম্পর্কে নানা মহলে যে আলোচনা চলছে, সে বিষয়েও কথা বলেছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী।

তিনি বলেন, “এখানে আমি কী করব, আমি কে? লোকাল গভর্নমেন্ট মিনিস্ট্রি মেয়রদের একটা হাইপোথেটিকাল দায়িত্ব দিল, এখানে রেড জোন করেন, এখানে ইয়োলো জোন করেন কিন্তু কী প্রিপারেশন তার আছে?”

এই প্রক্রিয়ায় দ্বিমত রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “ধরেন একটি বাড়িতে একজন সংক্রমিত রোগী আছেন, আরেকটি বাড়িতে ৬০ জন রোগী আছে। ৬০ জনকে আপনি লকড-ডাউন করলেন, আরেকজন আপনি ইগনোর করলেন। কিন্তু একজন তো আগামী দিনে ১০০ জন করবে। তাহলে আগামীতে ১০০ জনের ভাগ্য হবে কী? তো সেখানে অ্যাকশনটা কী হবে?”

লকডাউন বাস্তবায়ন করতে গেলে অর্থনীতির সঙ্গে কৃষি, গণপরিবহনসহ জনগুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোকে বিবেচনায় এনে গোটা প্রক্রিয়া সমন্বয় করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তাজুল ইসলাম।

লকডাউন বাস্তবায়নে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন তিনি।

মন্ত্রী বলেন, “প্রথম থেকে আমি যখন মিটিংয়ে যুক্ত হলাম তখন আমি বললাম, একটা সাব জোন করেন। এনজিওদের সহযোগিতায় প্রতিটা ওয়ার্ডকে ১০টা সাব জোনে ভাগ করার জন্য বললাম। সাব জোনে ভাগ করার জন্য নির্দেশনা দিলাম।

“তার সুবিধা হবে কি সেখানে সীমিত সংখ্যক লোককে একটা কমিটি রিপ্রেজেন্ট করবে। এ কমিটি ইনটেনসিভলি তাদের সেবা দিতে পারবে, তাদের যে সমস্যা তাৎক্ষণিকভাবে বলতে পারবে, শুনতে পারবে, সমাধান করতে পারবে।”

গত ২৬ মার্চ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত সারা দেশে লকডাউনে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় শনাক্ত রোগী ও মৃত্যুর হার বিবেচনায় নিয়ে সার দেশকে লাল, হলুদ ও সুবজ জোনে ভাগ করে এলাকাভিত্তিক বিধিনিষেধ আরোপের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

এর অংশ হিসেবে গত ৯ জুন মধ্যরাত থেকে ঢাকার প্রথম এলাকা হিসেবে পূর্ব রাজাবাজারে পরীক্ষামূলক লকডাউনের কার্যক্রম শুরু হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তিন দফায় মোট ১৯ জেলার ৪৫টি এলাকাকে ‘রেড জোন’ ঘোষণা করে সেখানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে।

এসব এলাকায় ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণের জন্য স্থানীয় প্রশাসন লাল অঞ্চলে জীবনযাত্রা ‘কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ’ করতে পারবে। অফিস-কারখানা বন্ধ থাকবে, যানবাহন ও সাধারণের চলাচলে থাকবে কড়াকড়ি।

ঢাকায় রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত এলাকাগুলোতে লকডাউন বাস্তবায়ন বেশ কিছু দিন ধরে আলোচনা চললেও তা না হওয়ায় এ নিয়ে অনেকের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে।

করোনাভাইরাস সংকটের মধ্যে দুর্গতদের সহায়তায় সরকারের দেওয়া ত্রাণ আত্মসাতের ঘটনায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের গ্রেপ্তার-বহিষ্কার নিয়েও কথা বলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী।

তার মতে, ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ সদস্য বা মেম্বারদের অনিয়ম, কারচুপির অপবাদ থেকে বের করে আনতে তাদের ‘আরও সম্মানিত’ করা উচিৎ।

তাজুল ইসলাম বলেন, “এ সমাজে যে অবক্ষয় অবস্থার মধ্যে দিয়ে তাদের উত্থান হয়েছে, সে কারণে সবাই কমবেশি কলুষিত। এ থেকে বের হয়ে আসতে গেলে তাদের সম্মান দিতে হবে। তাদের সম্মানিত স্থানে আসীন করতে হবে।

“মেম্বার পদটাকে যদি আমরা একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করি, ৬২ হাজার জনপ্রতিনিধির মধ্যে নন সিগনিফিকেন্ট পারসনের জন্য আমি গোটা প্রতিষ্ঠানকে কলুষিত করতে পারি না।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বারদেরও ‘সবচেয়ে সক্ষম প্রতিষ্ঠান’ বলেও দাবি করেন তাজুল ইসলাম।

‘উন্মুক্ত স্থানে বর্জ্য ফেলা বন্ধ হবে’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস আগামী এক বছরের মধ্যে তার সিটির ৭৫টি ওয়ার্ডের সব জায়গায় উন্মুক্ত স্থানে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন।

প্রাথমিকভাবে আগামী ৮ জুলাই থেকে নতুন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানান তিনি।

ফজলে নূর তাপস বলেন, “রাস্তা, নর্দমা ও রাস্তার পাশে কনটেইনার উপচে উন্মুক্ত স্থানে সারা দিন ধরে যে বর্জ্য পড়ে থাকে, তা আগামী ৮ জুলাই থেকে আর থাকবে না। আমরা আর উন্মুক্ত স্থানে কোনো বর্জ্য রাখব না। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরদিন ভোর ৬টা পর্যন্ত বর্জ্য অপসারণের কাজ চলবে। এরপর রাস্তাঘাট ঝাঁট দেওয়া হবে।

“দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে এখন ২৪টিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ঘর রয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যে সবগুলো ওয়ার্ডে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ঘর করা হবে। আগামী বছরের মধ্যে ঢাকা শহরকে পুরোপুরি উন্মুক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থেকে মুক্ত করতে চাই।”

করোনাভাইরাস মহামারীর এ সময়ে নগরীর মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে ‘বড় প্রতিকূলতা’ হিসেবে দেখছেন তাপস।

তিনি বলেন, যেসব স্থানে উন্মুক্ত কনটেইনার থাকবে, সেখানে ব্যবহৃত মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভসসহ মেডিকেল বর্জ্য আলাদা করে রাখা হবে।

নতুন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম নিয়ে ফজলে নূর তাপস জানান, আবর্জনা পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ, পুড়িয়ে ফেলে তাপ উৎপাদন ও বাকি আবর্জনা ভাগাড়ে ফেলে দেওয়া- এই তিন ধাপে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

মন্ত্রী তাজুল ইসলামও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের কথায় সায় দেন।

তার পরিকল্পনা অনুযায়ী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েরও কাজ করতে হবে বলে মন্তব্য করেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম।

করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যেও ডেঙ্গু মোকাবেলায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কাজ করছে বলে জানান মেয়র তাপস।

তিনি বলেন, “যে সকল বাড়িতে ডেঙ্গুর লার্ভা সৃষ্টি হতে পারে তাদের কাছ থেকে আমরা আবেদন নেব। সামান্য সার্ভিস চার্জের মাধ্যমে আমাদের কর্মী বাহিনী গিয়ে লার্ভা ও মশকের উৎপত্তি স্থল ধ্বংস করে দিয়ে আসবে। এর বাইরে কেউ কোনো উদ্যোগ না নিলে ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে জরিমানা করব।”

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামও ডেঙ্গু মোকাবেলায় নিজেদের উদ্যোগের কথা জানান।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান (লিটন), নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু করোনাভাইরাস মোকাবেলায় নিজেদের উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন।