বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস নিতে ‘ভার্চুয়াল ক্লাস’ প্ল্যাটফর্মের যাত্রা শুরু

করোনাভাইরাস মহামারীকালে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নিয়মিত শ্রেণি কার্যক্রম ডিজিটাল মাধ্যমে কার্যকর ও সহজ উপায়ে চলমান রাখতে ‘ভার্চুয়াল ক্লাস’ প্ল্যাটফর্ম সহায়তা নিয়ে এলো সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 June 2020, 06:44 PM
Updated : 2 Sept 2020, 12:54 PM

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ডিজিটাল মাধ্যমে চলমান রাখতেও এই ‘ভার্চুয়াল ক্লাস’ কাজ করবে।  

মঙ্গলবার অনলাইনে এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত হয়ে এ প্ল্যাটফর্মের উদ্বোধন করেন।

এটুআই-এর পলিসি স্পেশালিস্ট মো. আফজাল হোসেন সারওয়ার ‘ভার্চুয়াল ক্লাস’র ধারণা দিয়ে জানান, অনলাইনে সব একাডেমিক শ্রেণি কার্যক্রম এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সহজে এবং কার্যকরী উপায়ে চালানোর লক্ষ্যে এই ভার্চুয়াল ক্লাস প্ল্যাটফর্মটি তৈরি করা হয়েছে।

এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে লাইভ ক্লাস বা ট্রেনিং পরিচালনা, এডুকেশনাল কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট, মূল্যায়ন বা অ্যাসেসমেন্ট টুলস, মনিটরিং এবং সমন্বয় করার প্রযুক্তি যুক্ত থাকবে।

ভার্চুয়াল ক্লাস ব্যবহার করে যে কোনো ধরনের লাইভ ক্লাস এবং লাইভ ট্রেনিং সেশন পরিচালনা করা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের জন্য নিজস্ব মুক্তক্লাস কনফারেন্সিং সফটওয়্যারের পাশাপাশি জুম, গুগোল মিট, মাইক্রোসফট টিমস, ওয়েবেক্স ও অন্যান্য যে কোনো ভিডিও কনফারেন্সিং সফটওয়্যার ব্যবহার করা যাবে।

পাশাপাশি শিক্ষা উপকরণ হিসেবে বিভিন্ন ধরনের মাল্টিমিডিয়া এবং অডিও-ভিজুয়্যাল কনটেন্ট, বিভিন্ন ধরনের ডকুমেন্ট (যেমন-পিডিএফ, পাওয়ারপয়েন্ট, ছবি/ডায়াগ্রাম ইত্যাদি) এবং বিভিন্ন ধরনের লিঙ্ক সংযুক্তি আকারে দেওয়া যাবে।

এছাড়াও ক্লাস বা ট্রেনিং সেশনে অংশগ্রহণকারীদের দৈনিক হাজিরা, কুইজ, অ্যাসাইনমেন্ট, পরীক্ষা ইত্যাদি নির্ভরযোগ্য মাধ্যমে সুরক্ষিতভাবে এবং সহজে গ্রহণ করা যাবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থী-শিক্ষকের মধ্যে আলোচনা এবং প্রশ্নোত্তরের সুযোগ থাকবে। সর্বোপরি ক্লাসের হাজিরা এবং কুইজ/পরীক্ষার ফলাফল রিপোর্ট আকারে ডাউনলোড করা এবং সংরক্ষণ করা যাবে।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, “ক্লাসরুমের পরিবেশ ভার্চুয়াল ক্লাসে আনা সম্ভব হবে কি না তা বড় প্রশ্ন। এ ক্লাস করতে শতকরা যে ১০ ভাগ শিক্ষার্থী স্মার্টফোন, ল্যাপটপ বা ইন্টারনেট সুবিধা পাবে না তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। লোনের মাধ্যমে ডিভাইস দেওয়া যায় কি না বা ইন্টারনেট খরচ কমিয়ে দেওয়া যায় কি না তার উপায় বের করতে হবে।”

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সম্পূর্ণ অনলাইন ক্লাস শুরু না করার পেছনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থাকে বড় বাধা মন্তব্য করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমাদের মানসিকতায় পরিবর্তন করতে পারলে খুব সহজেই এই প্ল্যাটফর্ম উপযোগী হয়ে উঠবে।”  

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, “গত তিন মাসে আমাদের যে পরিবর্তন হয়েছে আগামী তিন বছরে তা সম্ভব হত না। ভবিষ্যতের জন্য আইসিটিকে কীভাবে শিক্ষায় ব্যবহার করা যায় তা দ্রুততার সাথে করা হচ্ছে। ২৯টি মন্ত্রণালয় শিক্ষা পরিবারের সাথে যুক্ত, এ প্ল্যাটফর্ম একটি প্রাথমিক উদ্যোগ। আমাদের আরও দূর এগিয়ে যেতে হবে। যাদের ইন্টারনেট বা স্মার্টফোন নেই তাদের জন্য দেশীয় কোনো কোম্পানির কাছ থেকে দীর্ঘমেয়াদি সুদে ব্যবস্থা করা যেতে পারে।”

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, “কোভিড-১৯ এ সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে সুবিধা আছে তার সঠিক ব্যবহারের প্রস্তুতি নিতে হবে। এই প্ল্যাটফর্মের পাশাপাশি ইনোভেশন বন্ধ রাখা যাবে না, আরও নতুন নতুন পদ্ধতি নিয়ে আসতে হবে।” 

এটুআই পলিসি অ্যাডভাইজার আনীর চৌধুরী বলেন, “শতবর্ষী কয়েকটি সরকারি কলেজ থেকে এ ‘ভার্চুয়াল ক্লাস’ প্ল্যাটফর্মে কাজ শুরু হবে। যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এ প্ল্যাটফর্ম উন্মুক্ত।”

এটুআই-এর মো. আফজাল হোসেন জানান, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় আগামী শনিবার থেকে এ প্ল্যাটফর্মে ক্লাস শুরু করবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট এটি ব্যবহার শুরু করেছে। এছাড়া এটুআইয়ের সাথে যোগাযোগ করে যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এতে সংযুক্ত হতে পারবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বাস্তবায়নাধীন এবং ইউএনডিপির সহায়তায় পরিচালিত এটুআইয়ের কারিগরি সহযোগিতায় এ ভার্চুয়াল ক্লাস প্ল্যাটফর্মটি শুরু হয়েছে।

আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এ মান্নান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আবদুস সোবহান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন আহমেদ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার অনলাইনে যুক্ত ছিলেন।