করোনাভাইরাস: ভুয়া পরীক্ষা সনদও ছড়াচ্ছে

আক্রান্ত হলে তো বটেই, এছাড়াও নানা কারণে অনেকের প্রয়োজন হচ্ছে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার; আর এ্ই সুযোগে প্রতারণার জাল বিছিয়ে বসেছে অসাধু চক্র।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 June 2020, 04:31 PM
Updated : 12 July 2020, 12:45 PM

ঢাকায় এমন একটি চক্রের সন্ধান পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।

মঙ্গলবার গুলশানের জেকেজি হেলথকেয়ার নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ বলেছে, করোনাভাইরাসের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা ছাড়াই সনদ দিয়ে আসছিল প্রতিষ্ঠানটি।

“ওই প্রতিষ্ঠানের ল্যাপটপে করোনাভাইরাস পরীক্ষার বিপুল পরিমাণ সার্টিফিকেটের কপি পাওয়া গেছে, যেগুলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং আইইডিসিআরের মতো প্রতিষ্ঠানের প্যাডে করা। এগুলো ভুয়া,” বলেছেন তেজগাঁও জোনের সহকারী কমিশনার মো. মাহমুদ খান।

তেজগাঁও থানা পুলিশের একটি দল সোমবার রাতে আশকোনা থেকে হুমায়ুন কবীর ও তানজিনা পাটোয়ারী নামের এক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করে।

পুলিশ কর্মকর্তা মাহমুদ বলেন, “গোপন সূত্রে খবর পেয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছে করোনাভাইরাসের বেশ কিছু ভুয়া সার্টিফিকেটও পাওয়া যায়।

“তারা নিজেরাই এসব সার্টিফিকেট তৈরি করেছিল। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, তারা জেকেজির স্বাস্থ্যকর্মী ছিল। সেখান থেকে ভুয়া সার্টিফিকেট বানানো শিখেছে।”

এরপর মঙ্গলবার বিকালে গুলশানে অভিযান চালিয়ে জেকেজির প্রধান নির্বাহী আরিফুল চৌধুরী এবং তার দুই কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা মাহমুদ খান।

ওই অফিস থেকে চারটি ল্যাপটপ, দুটি ডেক্সটপ, করেনাভাইরাস পরীক্ষার নমুনা নেওয়ার বিপুল সংখ্যক স্টিকও জব্দ করে পুলিশ।

জেকেজি হেলথকেয়ার করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ শুরুর পর মহাখালীর তিতুমীর কলেজে তাদের স্বাস্থ্যকর্মীদের রাখার সুযোগ পেয়েছিল।

সম্প্রতি ওই স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে তিতুমীরের কর্মচারীদের মারামারি বাঁধলে কলেজটির অধ্যক্ষ আশরাফ হোসেন বলেছিলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিঠি পেয়ে তারা কলেজের নির্মাণাধীন নতুন ভবন ছাড়াও অডিটোরিয়াম এবং আরেকটি ভবন জেকেজি হেলথকেয়ারের কর্মীদের থাকতে দিয়েছেন।

ফাইল ছবি

সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহমুদ বলেন, “তারা (জেকেজি) নামমাত্র নমুনা সংগ্রহ করে কোথাও কোনো টেস্ট না করিয়ে নিজেরাই নেগেটিভ-পজেটিভ প্রতিবেদন দিয়ে থাকে।

“এজন্য প্রবাসীদের জন্য ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা এবং অন্যদের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা করে নিয়ে থাকে।”

বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে এখন করোনাভাইরাস ‘নেগেটিভ’ সনদ থাকা অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে। এছাড়া অন্য রোগীদের ভর্তির ক্ষেত্রেও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে করোনাভাইরাস পরীক্ষার সনদ চাইছে।

এদিকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদের জেকেজির স্বাস্থ্যকর্মীরা সন্ধ্যায় তেজগাঁও থানার সামনে বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

সহকারী কমিশনার মাহমুদ বলেন, “আমরা তাদের সরিয়ে দিয়েছি। কোনো জমায়েত করতে দিইনি।”

জেকেজি হেলথ কেয়ারের অন্যতম কর্ণধার হিসেবে আরিফুল চৌধুরীর স্ত্রী ডা. সাবরীনা আরিফের নাম এলেও তিনি দাবি করছেন, এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গত দুই মাস ধরে তার কোনো সম্পর্ক নেই।

কেন নেই- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি যেভাবে চাচ্ছিলাম, সেভাবে হচ্ছিল না। আমার মতের সাথে মিল খাচ্ছিল না। এজন্য আমি চলে এসেছি। আমি এখন আমার বাবার বাসায় আছি।”

তবে এ মাসের শুরুতে তিতুমীর কলেজের কর্মচারীদের সঙ্গে স্বাস্থ্যকর্মীদের মারামারির সময় সাবরিনা জেকেজির হয়ে কথা বলেছিলেন এবং ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেনও।