‘রেড জোনে’ সেনা টহল থাকছে: আইএসপিআর

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির বিবেচনায় ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করে দেশের যেসব অঞ্চলে জনসাধারণের চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে, সেসব এলাকায় টহলে থাকছে সেনাবাহিনী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 June 2020, 04:35 AM
Updated : 16 June 2020, 09:43 AM

রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়া রেড জোনেও সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে।

সরকার রাজধানীর ৪৫ এলাকাকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। যদিও সব প্রস্তুতি সেরে সেসব এলাকা অবরুদ্ধ করতে আরও সময় লাগবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) মঙ্গলবার এক বর্তায় বলেছে, “রেড জোনসমূহে সরকারি নির্দেশনাবলী যথাযথ পালনের উদ্দেশ্যে সেনা টহল জোরদার করা হচ্ছে।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইএসপিআরের পরিচালক আব্দুল্লাহ ইবনে জায়েদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নির্দেশনা পেয়েছি। সেসব স্থানে রেড জোন হবে, সেসব স্থানে সরকারের অন্যান্য প্রশাসনের সঙ্গে সমম্বয় করে এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করবে সেনাবাহিনী।

তিনি বলেন, ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত প্রতিটি এলাকায় স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সেনাবাহিনী কাজ করবে।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে ২৪ মার্চ থেকে সশস্ত্র বাহিনী মাঠে রয়েছে।

করোনাভাইরাসের বিস্তার দুই মাসের বেশি সময় সারাদেশে লকডাউন জারি রাখার পর ৩১ মে থেকে বেশিরভাগ বিধিনিষেধ তুলে নেয় সরকার।

তবে এরপর প্রতিদিন সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে এলাকা ধরে ধরে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার অনুযায়ী লাল, সবুজ ও হলুদ জোনে ভাগ করে প্রয়োজন অনুযায়ী বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত হয়।

সে অনুযায়ী গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ এবং নরসিংদী জেলার কিছু এলাকা এবং ঢাকার পূর্ব রাজাবাজারে ‘পরীক্ষামূলক জোনিং সিস্টেম’ চালু করা হয়েছে। ঢাকার ওয়ারীতেও একই ধরনের ব্যবস্থা নিতে এলাকা চিহ্নিত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গঠিত কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল কমিটির শনিবারের সভায় দেশের ‘রেড জোন’গুলো চিহ্নিত করে। তাতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৪৫টি এলাকা সর্বোচ্চ ঝুঁকির ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত হয়।

লাল, হলুদ, সবুজ- এই তিন ধরনের এলাকায় কীভাবে কাজ চলবে, তা নিয়ে সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ নির্দেশনা দিয়েছে। রেড জোনে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সব অফিস-কারখানা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

লাল অঞ্চলে কী কী বন্ধ থাকবে, কী কী খোলা থাকবে, আরেক নির্দেশনায় তা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

ঢাকার রেড জোন

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৮টি এবং উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৭টি এলাকাকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অর্থাৎ এসব এলাকায় প্রতি এক লাখ জনসংখ্যার মধ্যে গত ১৪ দিনে ৬০ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ: যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, মুগদা, গেন্ডারিয়া, ধানমন্ডি, জিগাতলা, লালবাগ, আজিমপুর, বাসাবো, শান্তিনগর, পল্টন, কলাবাগান, রমনা, সূত্রাপুর, মালিবাগ, কোতোয়ালি, টিকাটুলি, মিটফোর্ড, শাহজাহানপুর, মতিঝিল, ওয়ারী, খিলগাঁও, পরীবাগ, কদমতলী, সিদ্ধেশ্বরী, লক্ষ্মীবাজার, এলিফ্যান্ট রোড, সেগুনবাগিচা।

ঢাকা উত্তর: বসুন্ধরা, গুলশান, বাড্ডা, ঢাকা সেনানিবাস, মহাখালী, তেজগাঁও, রামপুরা, আফতাবনগর, মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, মগবাজার, এয়ারপোর্ট, বনশ্রী, রায়েরবাজার, রাজাবাজার, উত্তরা, মিরপুর।

 

পুলিশের প্রস্তুতি কতটা?

রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত এলাকাগুলোতে বিধিনিষেধ কার্যকর এবং তিন সপ্তাহ ধরে চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশেরও বড় ভূমিকা থাকবে। তবে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা বা স্পষ্ট পরিকল্পনা না পাওয়ায় রেড জোনের বাস্তবায়ন নিয়ে তেমন কোনো প্রস্তুতি নেই ঢাকা মহানগর পুলিশের।

মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “লকডাউন করতে প্রচুর পুলিশ লাগবে। আমরা প্রতিটি এলাকার নিদিষ্ট কিছু অংশ সমন্বয় করে লকডাউন করব। তবে এখনো কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি। নির্দেশনা পেলে স্বাস্থ্য বিভাগ আর সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সবার সাথে সমন্বয় করে কাজ করব।”

পরীক্ষামূলকভাবে পূর্ব রাজাবাজার এলাকাকে ‘রেড জোন’ ঘোষণা করে লকডাউন শুরু হয়েছে গত ৯ জুন থেকে।

শেরেবাংলা নগর থানার ওসি জানে আলম মুন্সি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, পূর্ব রাজাবাজার অবরুদ্ধ করার আগে বিভিন্ন পর্যায়ে ৮ থেকে ১০টি সমন্বয় সভা হয়েছে।

“কোন কোন রাস্তা-গলি বন্ধ করা উচিত, কোনটা খোলা রাখা উচিত, কারা যাতায়াতের সুযোগ পাবেন, বাসিন্দারা খাদ্য সামগ্রী কীভাবে পাবেন, অন্যান্য সুবিধা অসুবিধা নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ, সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে সভা হওয়ার পর তা কার্যকর শুরু হয়েছে।”

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নতুন করে যে ৪৫টি এলাকা ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেখানে কতটুকু এলাকা অবরুদ্ধ হবে, কোন কোন রাস্তা বন্ধ হবে, কীভাবে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা ঠিক রেখে ‘লকডাউন’ কার্যকর করা যাবে- সেসব বিষয়ে আলাদা আলাদা পরিকল্পনা প্রয়োজন হবে। 

“সেই কৌশল আর নির্দেশনা পেলে বাস্তবায়নের সব ধরনের ব্যবস্থা আমাদের তরফ থেকে নেওয়া হবে।”

ঢাকায় ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত এলাকার একটি হচ্ছে মিরপুর।

মহানগর পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ কমিশেনার মোস্তাক আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মিরপুর বিশাল এলাকা। কোন কোন রাস্তা বা গলি বন্ধ করতে হবে সে ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত এখনও আমরা জানি না।”

তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার হারুন উর রশিদ, বাড্ডা থানার ওসি পারভেজ ইসলাম, রমনা বিভাগের উপ কমিশনার মো. সাজ্জাদুর রহমান, ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার ইফতেখারুল আলমের সঙ্গে কথা বলেও একই ধরনের উত্তর পাওয়া গেছে। 

তারা জানিয়েছেন, তাদের এলাকায় রেড জোন কার্যকর করার বিষয়ে কোনো সমন্বয় সভা এখনও হয়নি। সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনাও তারা পাননি। 

রেড জোনে লকডাউন কবে শুরু হবে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মোমিনুর রহমান মামুন রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, তালিকাভুক্ত এলাকাগুলোকে আরও সুনির্দিষ্ট করতে তারা ‘স্টাডি’ করছেন।

এদিকে সংবাদমাধ্যমে আসা রেড জোনের তালিকায় নিজের এলাকার নাম দেখে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে অনেকের মধ্যে। সবাই জানতে চাইছেন, কখন থেকে তা কার্যকর হবে।

মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা কোরবান আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তালিকায় দেখলাম মোহাম্মদপুরও আছে। এখন আমার গলিও পড়বে কি না বুঝতে পারছি না। তেমন হলে আগে থেকে তো বাজার করে রাখতে হবে।”

একই এলাকার ব্যবসায়ী তবারক হোসেন জানান, তার বাসা আর অফিস কাছাকাছি। এখন অফিস বন্ধ রাখতে হবে কি না, বাসা লকডাউনের মধ্যে পড়বে কি না- তা তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না।

“রোড ম্যাপ না পাওয়ায় একটু টেনশনে আছি। গলি রাস্তার তালিকা দ্রুত প্রকাশ করা হলে প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পাওয়া যেত।”

রাজধানীর ডেমরা এলাকার নামও আছে রেড জোনের তালিকায়। এই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, অনেকেই ফোন করে তার বাসায় আসা যাওয়ার রাস্তা বা গলি লকডাউনে পড়বে কি না জানতে চাইছেন।

“আমরা তালিকা বা কোনো ধরণের প্রজ্ঞাপন পাইনি। তাই সবাইকে বলছি, লকডাউনের মত পরিস্থিতি যদি হয়, সেজন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে।”

কোতোয়ালি থানার ওসি মিজানুর রহমান এবং চকবাজার থানার ওসি মওদুত হাওলাদারও বলেছেন, লকডাউন করার জন্য সরকারিভাবে নির্দেশনা পেলে সেভাবে তারা ব্যবস্থা নেবেন।

[প্রতিবেদনটি তৈরি করতে তথ্য সংগ্রহ করেছেন লিটন হায়দার ও কামাল তালুকদার।]